স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া-
এবারের ঈদুল আযহার টানা ছুটিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বগুড়ার প্রসিদ্ধ দই ও মিষ্টি বিক্রি হয়েছে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার। দইয়ের দোকানগুলোতে প্রচুর ক্রেতাসমাগম।
অতিথি আপ্যায়ন কিংবা ভোজ উৎসব অথবা প্রিয়জনকে উপহার দিতে বগুড়ার দইয়ের বিকল্প নেই। কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানের তালিকায় বগুড়ার দই নেই-এমনটা ভাবা যায় না। বগুড়ার দই দিন দিন হয়ে উঠেছে আত্মীয়তার সেতুবন্ধন। শুধু দইকে কেন্দ্র করেই বগুড়া পেয়েছে নতুন পরিচিতি। যে কারণে কেউ কেউ বলেন ‘দইয়ের রাজধানী বগুড়া’।
স্বাদে-গুণে অতুলনীয় হওয়ায় বগুড়ার দই দেশ-বিদেশে এখন জনপ্রিয় মিষ্টান্ন খাবার। উত্তরাঞ্চলের বগুড়াকে এগিয়ে নিতে বগুড়ার দই জিআই পণ্যের তালিকায় নাম লিখিয়েছে, যার ফলে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে এ দই।
বগুড়ায় এশিয়া সুইটমিট, আকবরিয়া, দইঘর, চিনিপাতা দই, শেরপুর দই, শ্যামলী, মহরম দইঘর, আদি মহরম, রফাত দইঘর ছাড়া শহরের মোড়ে মোড়ে ঈদের দিন থেকে দই দোকান গুলো খোলা রয়েছে।
কয়েকটি দই এর দোকান ঘুরে জানা গেছে, এবার বগুড়ায় অর্ধশত কোটি টাকার দই বিক্রির টার্গেট ছিল। ঈদের আগে ও পরের তিন দিন সেই টার্গেট অতিক্রম করেছে। যারা ঈদ করতে বগুড়া এসেছেন তাদের একটা চাপ রয়েছে যে, বগুড়ার দই ঢাকাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে নিয়ে গিয়ে প্রিয়জনকে উপহার দেবেন।
বগুড়া এশিয়া সুইটসের স্পেশাল (৬৫০ গ্রাম) ওজনের দই বিক্রি করা হচ্ছে ৩০০ টাকায়, একই ওজনের শাহী দই ৩৫০ টাকা, সাদা দই (চিনিমুক্ত) ২৮০ টাকা, টকদই ২০০ টাকা, বড় ক্ষীরসা ৭০০ টাকা, ছোট ক্ষীরসা ৩৫০ টাকা। এসব দই মাটির তৈরি সরা ও হাঁড়িতে ভরে বাজারজাত করেন ব্যবসায়ীরা।
বহুকাল ধরে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে বগুড়ার সাদা দই। ঠাণ্ডাপানীয় খাবার হিসেবে সাদা দইয়ের তুলনা হয় না।
বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সামাজিক ভোজে দই পরিবেশন করা হয়ে থাকে। দই পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কমই আছেন। আবার বাংলাদেশে দইয়ের কথা উঠলে চলে আসে বগুড়ার নাম।
এদিকে, ভৌগোলিক নির্দেশক ( জিআই ) হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বগুড়ার দই। শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান প্যাটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তরের (ডিপিডিটি) ২০২৩ সালের ২৬ জুনের সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বগুড়ায় খাবার হিসেবে দইয়ের প্রচলন বেশি হওয়ায় জেলা শহরের আনাচে-কানাচে দইয়ের শোরুম গড়ে উঠেছে। হিসাব অনুযায়ী ১২ উপজেলায় দুই সহস্রাধিকের বেশি দইয়ের শোরুম রয়েছে। এসব শোরুম থেকে প্রতিদিনিই দই বিক্রি হচ্ছে।
তবে, বর্তমানে সুনাম ছড়িয়েছে বগুড়া শহরের কবি নজরুল ইসলাম সড়কের এশিয়া সুইটস, চিতিপাতা, শ্যামলী হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের দই, বাঘোপাড়ার রফাত দইঘর, মহরম আলী, শেরপুর দইঘর, সাউদিয়া, জলযোগ, শম্পা, বৈকালী ও শুভ দধি ভাণ্ডার, নবাববাড়ীর রুচিতা, দইবাজার, মিষ্টিমহল ও আকবরিয়ার দই।
এছাড়া ছোট ছোট নানা নামে গড়ে উঠেছে দইয়ের দোকান ও শোরুম। এসব শোরুম থেকে প্রতিদিন গড়ে দই বিক্রি হচ্ছে প্রায় কোটি টাকার। হরেক রকম নামে বিক্রি হচ্ছে বগুড়ার দই।