আব্দুল গাফ্ফার শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
বগুড়ার শেরপুরে কাবিল উদ্দিন নামে জামায়াতের এক কর্মীকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক স্বেচ্ছাসেবকদল নেতাকে আটকের পর গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় জনতা। মঙ্গলবার (০৮ এপ্রিল) রাতে উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের গোসাইবাড়ী বটতলা বাজার এলাকা থেকে আটক করা হয়। আটক ওই স্বেচ্ছাসেবকদল নেতার নাম মো. গোলাম আজম (২৮)। তিনি কুসুম্বী ইউনিয়নের গোসাইবাড়ী কলোনি গ্রামের সহিদুল ইসলাম প্রামাণিকের ছেলে। পাশাপাশি একই ইউনিয়ন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবকদলের যুগ্ম আহবায়ক। এরআগে নিহতের বাবা শাহজাহান আলী বাদি হয়ে ১৩জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাত আরো অনেককে আসামি করা হয়।
শেরপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রবিউল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, মঙ্গলবার রাতে কাবিল উদ্দিনকে (৩৯) মুঠোফোনে পাশ্ববর্তী গাড়ীদহ ইউনিয়নের হাটগাড়ি গ্রামস্থ একটি বাড়িতে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অভিযুক্তরা কাবিল উদ্দিনের হাত-পা বেঁধে ফেলেন। সেইসঙ্গে বাড়ির পাশের একটি মাঠে নিয়ে বেধড়ক পেটায়। এতে রক্তাক্ত জখম হন। একপর্যায়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরদিন রাতে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
এদিকে কাবিল উদ্দিন পেশায় একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। এভাবে তাঁকে খুন করা হবে যা কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয় গ্রামবাসী। তাঁদের দাবি, প্রতিবেশি সজিবের পরকীয়ার ঘটনা জেনে যাওয়া এবং বাধা দেওয়ার জের ধরেই কাবিল উদ্দিনকে খুন করা হয়। আফছার আলী, আব্দুল হাইসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, কাবিল উদ্দিন সাধারণ নিরীহ একজন মানুষ। তাঁর কোনো শক্র ছিল না। তিনি সব সময় মানুষকে ভালো কাজের জন্য আহবান জানাতেন। সেটিই তার কাল হলো। বেশকিছুদিন আগে তার প্রতিবেশি বেল্লাল হোসেন বিদেশে যান। আর এই সুযোগ নেন বেল্লালের ছোট ভাই সজিব। সে তার স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়। ঘটনাটি জানার পর তাদের দু’জনকেই ভালো হওয়ার উপদেশ দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন সজিব ও তার লোকজন। এমনকি পরিকল্পনা মাফিক মুঠোফোনে ডেকে নিয়ে তাঁকে হত্যা করা হলো বলে জানান তারা। নিহত কাবিল উদ্দিনের স্ত্রী শাপলা খাতুন বলেন, তার স্বামীর কোনো দোষ ছিল না। তাই যারাই তার স্বামীকে খুন করেছে, তাদের বিচার ও ফাঁসি দেওয়ার দাবি করেন তিনি।
উপজেলা জামায়াতের রাজনৈতিক সেক্রেটারি রেজাউল করিম বাবলু বলেন, নিহত কাবিল উদ্দিন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একজন কর্মী। এভাবে তাকে খুন করা হবে তা মেনে নিতে পারছি না। তিনি এই হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘটনায় জড়িতদের সব আসামিদের গ্রেপ্তারপূর্বক আইনের আওতায় আনার জন্য জোর দাবি জানান।
জানতে চাইলে শেরপুর থানার ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনায় মামলা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনায় জড়িত গোলাম আজম নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পাশাপাশি ঘটনা সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। এজন্য সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে বুধবারই দুপুরের পর বগুড়া আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।