আব্দুল গাফ্ফার
শেরপুর বগুড়া প্রতিনিধি
বগুড়ার শেরপুরে শশুর বাড়িতে মারধরের পর বিষ খাইয়ে মোহাম্মদ আলী জনি (৩২) নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী, শশুর-শাশুড়ীসহ পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে সোমবার (০৭আগস্ট) বগুড়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দাায়ের করা হয়েছে। নিহত মোহাম্মদ আলী জনির মা রেহেনা বেগম বাদি হয়ে ওই মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন-উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়নের পারভবানীপুর গ্রামের সাহেব আলী মোল্লার ছেলে আশরাফ আলী মোল্লা, তার স্ত্রী খালেদা খাতুন, মেয়ে সুলতানা বেগম, একই গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে দুদু মিয়া ও স্ত্রী শাফী খাতুন। এরমধ্যে আশরাফ আলী নিহতের শশুর, খালেদা খাতুন শাশুড়ী ও সুলতানা বেগম স্ত্রী।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বিগত পাঁচ বছর আগে উপজেলার পারভবানীপুর গ্রামের জাবেদ আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলী জনির সঙ্গে একই গ্রামের আশরাফ আলী মোল্লার মেয়ে সুলতানার বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। বর্তমানে তার বয়স চার বছর। কিন্তু বেশকিছুদিন ধরেই তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনাত হচ্ছিল না। এমনকি স্ত্রী সুলতানার বেপরোয়া জীবন-যাপনে পারিবারিক কলহ-বিবাদ লেগেই থাকতো। একপর্যায়ে স্বামী-সন্তান রেখে বাবার বাড়িতে চলে যায় সুলতানা। পরবর্তীতে বিবাদ মিমাংসার কথা বলে শশুরবাড়িতে ডাকা হয় জনিকে। বিগত ২০জুলাই ছিল ওই বৈঠকের দিন। সেই অনুযায়ী ওইদিন বিকেলে শশুরবাড়িতে যান জনি। এরপর তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথমে তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। পরবর্তীতে বিষ খাওয়ানো হয় জনিকে। ঘটনার খবর পেয়েই জনির পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং তাকে উদ্ধার করে দ্রুত বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে দুইদিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ২২জুলাই রাতে মোহাম্মদ আলী জনি মারা যান বলে মামলার এজাহারে দাবি করা হয়েছে।
এদিকে মামলার অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারপূর্বক আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নিহতের পরিবার। সোমবার বিকেলে চারটায় শহরের স্থানীয় বাসস্ট্যান্ডস্থ শেরপুর প্রেসক্লাব কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জনির বাবা জাবেদ আলী। এসময় ইউপি সদস্য মাজেম আলী, নিহতের স্বজন রিপন মিয়া, শাকিল আহম্মেদ, রায়হান বাবু, রেহেনা বেগম, মোস্তাফিজার রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে মামলার উপরে উল্লেখিত অভিযোগ এনে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তাদের নিকট ন্যায় বিচার প্রার্থনা করেন তারা। ঘটনাটি সম্পর্কে বক্তব্য জানতে চাইলে শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবু কুমার সাহা সাংবাদিকদের বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় বগুড়া সদর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা নেওয়া হয়েছে। তবে ময়না তদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা ও বলা সম্ভব হবে। আর সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আদালতের মামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওসি বলেন, বিষয়টি জানা নেই। মামলার এজাহারটি থানায় এলে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে দাবি করেন তিনি। অপরদিকে মামলায় অভিযুক্তদের বক্তব্য জানতে একাধিকবার তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ঘটনার পর থেকেই পলাতক থাকায় তাদের কারো বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।