নাজমুল হাসান সবুজ বিশেষ প্রতিনিধি খুলনা
আজ রোববার বেলা পৌনে ১১টা। খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী পর্বের মাহেন্দ্রক্ষণে ঘটে এমনি আনন্দঘন মুহুর্ত। দুই পাশে জার্সি গায়ে উদ্বোধনী ম্যাচে অংশগ্রহণকারী খুলনা বিভাগের লাল ও সবুজ দলের খেলোয়াড়। মাঝে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, দেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান মেহরাব হোসেন অপি, জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সালমা খাতুন ও জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক সাফজয়ী ফুটবলার আমিনুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব রকিবুল ইসলাম বকুল। উদ্বোধনী মঞ্চ অলংকৃত করেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটির আহবায়ক রফিকুল ইসলাম বাবু ও সদস্য সচিব দেবব্রত পাল, খুলনা মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব মোঃ শফিকুল আলম তুহিনসহ নেতৃবৃন্দ। বেলুন, ফেস্টুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে টুর্নামেন্ট উদ্বোধন করেন অতিথিরা। এসময়ে অতিথির সাথে মঞ্চে ছিলেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ঢাকার আশুলিয়ায় গত ৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে শহীদ হামিদ শেখের পিতা তেরখাদার পানতিতা গ্রামের জাফর শেখ।
শুরুতেই জাসাস খুলনা মহানগর শাখার পরিবেশনায় জাতীয় সঙ্গীত এবং শহীদ জিয়ার উপরে প্রমাণ্য চিত্র প্রদর্শন করে। এসময়ে গ্যালারি থেকে শহীদ জিয়া সম্পর্কিত নানান স্লোগান ভেসে আসে হাজারো দর্শকের কণ্ঠধ্বনি হয় স্টেডিয়াম এলাকা। শুরুতেই টসে জিতে ব্যাট করতে নামেন খুলনা সবুজ দল। খুলনা লাল দলের মনোমুগ্ধকর বলিং আক্রমনের মুখেও নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৩৮ রানের টার্গেট ছুড়ে দেয় সবুজ দল। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দ্বিতীয়ার্ধের খেলা চলছিল।
অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু বলেন, ‘নাইস টু বি ব্যাক। অনেক অনেক দিন পর খুলনায় এসেছি। খুলনার অনেক ইতিহাস, অনেক স্মৃতি। খুলনাকে ক্রিকেটের আঁতুরঘর বললেও ভুল হবে না। খুলনা অনেক জাতীয় ক্রিকেটারের জন্ম দিয়েছে। আজকের এই টুর্নামেন্টের আয়োজনে আমি খুবই খুশি। এখানে স্পোর্টস প্রমোট করা হবে। আমরা যাঁরা খেলোয়াড়, আমরা সব সময় সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করবো কীভাবে স্পোর্টসকে সঠিকভাবে প্রমোট করা যায়।’
বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক সাফজয়ী ফুটবলার মোঃ আমিনুল হক বলেন, শহীদ জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনন্য একটি আয়োজন। যত বেশি টুর্নামেন্ট আয়োজন হবে, তত বেশি ভালো খেলোয়াড় বের হয়ে আসবে। প্রতিবছর এ টুর্নামেন্টের আয়োজন হবে; ভবিষ্যতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আমরা এ আয়োজনকে ছড়িয়ে দিতে পারবো বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটির আহবায়ক রফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, প্রতিটি সাংগঠনিক বিভাগেই লাল ও সবুজ নামে দু’টি করে দল নিজেদের মধ্যে একটি করে ম্যাচ খেলবে। ১০ ম্যাচের ১০ জয়ী দলের সঙ্গে মূল পর্বে যোগ হবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ দল। বিভাগীয় পর্যায়ের খেলাগুলো বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে হলেও ১৬ জানুয়ারি থেকে ঢাকায় মূল পর্ব শুরু হবে। ১৯ জানুয়ারি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মদিনে মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিসিবি’র সহযোগিতায় টুর্নামেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেন, বিগত সময়ে ক্ষমতাসীনরা ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়ন চায়নি। নিজেদের উন্নয়ন ও লুটপাটে ব্যস্ত ছিলেন। এক সময়ে খুলনা থেকে সর্বাধিক খেলোয়াররা অংশ নিলেও এখানে খেলোয়ারদের সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি। সর্বক্ষেত্রে রাজনীতিকরণ করায় ক্রীড়াঙ্গনকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। দেশ সংস্কারের পাশাপাশি জনগনকে সাথে নিয়ে বিএনপি ক্রীড়াঙ্গণ সংস্কারের কাজ করবে বলে প্রতিশ্র“তি ব্যক্ত করেছেন তিনি।
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, খুলনার ম্যাচটিকে কেন্দ্র করে খুলনা অঞ্চলের মানুষের মধ্যে স্বতস্ফূর্ত প্রাণচাঞ্চল্যের প্রকাশ পেয়েছে। দীর্ঘদিন পর এখানকার দর্শকরা জাতীয় দলের সাবেক ও দেশসেরা সব ক্রিকেটারদের সম্মিলন দেখতে পেয়ে খুলনাবাসী ধন্য। ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনা সরকার খুলনাসহ দেশের স্টেডিয়ামগুলোকে চরণভুমিতে পরিণত করেছে। সেগুলোকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তারা দেশের তরুণ সমাজের হাতে বল ও ব্যাট না দিয়ে তাদের হাতে মাদক তুলে দিয়েছেন। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও মাদকের অভায়ারণ্যে পরিণত করেছিল। যুব সমাজকে তারা ধব্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়েছে। ১৫ বছরের জঞ্জাল সরিয়ে দিতে হবে। ছাত্র ও যুব সমাজকে খেলাধুলার দিকে ধাবিত করে সুন্দর খেলা উপহার দিয়ে মাদক মুক্ত খুলনা শহর গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বিএনপি’র ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল।