বরিশাল জেলা প্রতিনিধি।
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড দাওকাঠী গ্রামের মো: রুস্তম আলী হাওলাদার ৭৫) হত্যাকাণ্ডের জট খুলেছে,পারিবারিক দ্বন্দ্বে প্রবাসী ফেরত ওই বৃদ্ধাকে তার একমাত্র ছেলে বাদশা হাওলাদার (৪৫) হত্যা করেছে বলে নিশ্চিত করে বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশ গত ২১শে জানুয়ারি মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় দাওকাঠী এলাকা থেকে আসামিকে গ্রেফতার করা হয়।২৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশ। ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, মোঃ রুস্তম আলী হাওলাদার (৭৫), পিতা-মৃত আতাহার উদ্দিন হাওলাদার, সাং-দাওকাঠী,০৫নং ওয়ার্ড, ১২নং রঙ্গশ্রী ইউনিয়ন, থানা-বাকেরগঞ্জ, জেলা-বরিশাল গত ইং-১৭/০৪/২০২৪ তারিখ সকাল অনুমান ১০.০০ ঘটিকায় নিখোঁজ হয়। পরিবার সহ আত্মীয়-স্বজনরা খোঁজাখুঁজির একাপর্যায়ে গত ১৯/০৪/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ রাত অনুমান-০০.৩০ ঘটিকায় বাড়ির পাশের কচুক্ষেতে রুস্তুম আলী হাওলাদারের অর্ধগলিত লাশ পাওয়া যায়। রুস্তুম আলী হাওলাদারের একমাত্র ছেলে বাদশা হাওলাদার (৪৫), এর সংবাদের প্রেক্ষিতে বাকেরগঞ্জ থানার অপমৃত্যু মামলা নং-১২, তারিখ- ২০/০৪/২০২৪ খ্রিঃ রুজু করে মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য লাশ ময়না তদন্ত করিতে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়। গত ইং-২৮/১২/২০২৪ তারিখ মৃত রুস্তম আলী হাওলাদারো লাশের ময়না তদন্ত রিপোর্ট প্রাপ্ত হইয়া পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে রুস্তুম আলী হাওলাদারকে হত্যা করা হয়েছে। ২১/০১/২০২৫ খ্রিঃ তারিখ রুস্তম আলী হাওলাদারের হত্যাকান্ডের বিষয়ে অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে বাকেরগঞ্জ থানার মামলা নং-১৯, তারিখ- ২১/০১/২০২৫, ধারা-৩০২/৩৪/২০১ পেনাল কোড-১৮৬০; রুজু করা হয়। বরিশাল জেলার মাননীয় পুলিশ সুপার জনাব মোঃ শরিফ উদ্দীন মহোদয়ের নিবিড় তত্ত্বাবধানে ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জনাব মোঃ আলাউল হাসান, বাকেরগঞ্জ সার্কেল, বরিশাল মহোদয়ের দিক নির্দেশনায়, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জনাব সুরেজীত বড়ুয়ার নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ)/ মোঃ ফোরকান মিয়া, এসআই (নিঃ)/ মোঃ সোহেল রানা, এসআই (নিঃ)/ মোঃ রিয়াজ উদ্দিন সহ সঙ্গীয় ফোর্সের সমন্বয়ে একটি চৌকস টিম মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেফতার করার লক্ষ্যে অভিযান পরিচালনা করে। রুস্তম আলী হাওলাদার নিখোঁজ হওয়ার পর হতে তার একমাত্র ছেলে বাদশা হাওলাদার (৪৫) এর দৈনন্দিন অস্বাভাবিক জীবন-যাপন ও আচরণ, সহেন্দজনক কথাবার্তা ও নিয়োজিত বিশ্বস্থ সোর্সের নানাবিধ তথ্যে জোড়ালো সন্দেহের প্রেক্ষিতে বাদশা হাওলাদার (৪৫) কে ২২/০১/২০২৫ খ্রিঃ তারিখ বিকাল অনুমান ১৭.৩০ ঘটিকায় থানায় এনে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বাদশা হাওলাদার (৪৫) কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তার পিতা রুস্তুম আলী হাওলাদার জীবন ও যৌবনের সোনালী সময়গুলো পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা আনায়ন ও ভবিষ্যত বিনির্মানের স্বাপ্নে প্রবাসে কর্মজীবন কাটিয়ে বার্ধক্য জীবনে বাড়ি ফিরে আসেন। নিজ বাড়ির অদূরে বাকেরগঞ্জ থানার দাওকাঠী গ্রামে একটি দোতলা পাঁকা ভবন নির্মান করে স্ত্রী- সন্তান সহ পরিবারের সকলকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। পরিবারের সকল সদস্যদের পারিবারিক আচার আচরণে কোনরূপ ভুল দৃষ্টিগোচরে এলে রুস্তম আলী হাওলাদার সংশোধনের জন্য রাগধমক করতেন। পরিবারের সকলে রুস্তম আলী হাওলাদারকে স্বাভাবিক জীবন-যাপনের বাধা হিসেবে শত্রু ভাবতে শুরু করে। রুস্তম আলী হাওলাদার তার সারা জীবনের উপার্জিত অর্থ-বিত্ত দিয়ে একমাত্র ছেলেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার সকল প্রচেষ্টা সফল করে ছেলের সুখে সুখী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার অভিভাবকত্ব ও অনুশাসন পরিবারের কেউ সহ্য করতে না পেরে একমাত্র ছেলে বাদশা হাওলাদার (৪৫) পিতা রুস্তুম আলী হাওলাদারকে হত্যা করে পৃথিবী থেকে সরিয়ে পরিবারকে অবারিত স্বাধীনতা প্রদানের জন্য পিতাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। হত্যার পরিকল্পনা অনুযায়ী একাধিকবার হত্যার চেষ্টা করে। নানান প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকায় হত্যা করতে না পারলেও গভির মনোযোগ সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। ১৭/০৪/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ সকাল অনুমান ১১.৩০ ঘটিকায় রুস্তুম আলী হাওলাদার (৭৫) বাড়ির সামনে কচুক্ষেতে কাজ করা কালীন সময়ে বাদশা হাওলাদার (৪৫) পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যার উদ্দেশ্যে একটি লাল রংয়ের গামছা দিয়ে রুস্তম আলী হাওলাদার (৭৫) এর গলায় ফাঁস দিয়ে ও শ্বাস রোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। কচুপাতার আড়ালে লাশ গোপনে লুকিয়ে রেখে বাদশা হাওলাদার (৪৫) স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে থাকে। আসামী বাদশা হাওলাদার (৪৫) তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট হত্যাকান্ডের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, প্রস্তুতি, হত্যাকান্ড সংঘটন ও হত্যার পরবর্তী সময়ে নিজেকে আড়াল করার নানান কৌশলের কথা সবিস্তারে প্রকাশ করে। ২৩/০১/২০২৫ খ্রিঃ তারিখ বাদশা হাওলাদার (৪৫) কে বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করলে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। মামলাটি বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশ নিবিড়ভাকে তদন্ত করছে।
