রুপম চাকমা বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রতিনিধি
১৯৮৮ সালে ৮-১০ আগস্টের মধ্যে সেনাবাহিনী ও সেটলার বাঙালি কর্তৃক রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার হিরাচর, সার্বোতলি ও পাবলাখালী এলাকায় সংঘটিত গণহত্যার সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার ও খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সাজেকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ), হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ) ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ।
আজ বুধবার (৯ আগস্ট ২০২৩) সকালে উক্ত গণহত্যার ৩৫ বছর উপলক্ষে বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়।
“নতুন প্রজম্ম বজ্র কন্ঠে জেগে ওঠো” শ্লোগানে সকাল ৯টায় বাঘাইহাটের রেতকাবা দোপদা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বনানী বনবিহার এলাকা ঘুরে পূরনায় একই স্থানে এসে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে পিসিপি’র বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি অজল চাকমার সভাপত্বিতে ও সাধারণ সম্পাদক সত্য চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখে ইউপিডিএফ সংগঠক আর্জেন্ট চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সদস্য উজ্জ্বলা চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাজেক থানা শাখার সভাপতি নিউটন সভাপতি, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি অমনিতা চাকমা। সমাবেশে স্থানীয় কার্বারী ও জনপ্রতিনিধিরাও সংহতি জানান।
সমাবেশে ইউপিডিএফ সংগঠক আর্জেন্ট চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার লক্ষ্যে ডজনের অধিক গণহত্যা সংঘটিত করা হয়েছে। ১৯৮৮ সালে ৮ – ১০ আগস্টের মধ্যে সেনাবাহিনী ও সেটলার বাঙালি কর্তৃক আগস্ট বাঘাইছড়ি উপজেলার হিরাচর, সার্বোতলি, পাবলাখালীসহ অন্তত ৭টি পাহাড়ি গ্রামে হামলা ও গণহত্যা চালানো হয়। এতে অন্তত অর্ধশতাধিক লোককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ গণহত্যার ৩৫ বছর পার হলেও এ ঘটনার কোন তদন্ত হয়নি এবং ঘটনায় জড়িতদের বিচার ও শাস্তি হয়নি।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত গণহত্যায় জড়িতদের বিচার ও শাস্তি না হওয়ায় এখনো তারা সক্রিয় রয়েছে। ফলে বার বার পাহাড়িদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা সংঘটিত হয়ে থাকে। ২০০৮ ও ২০১০ সালে দুইবার সাজেকে পাহাড়িদের উপর বর্বর আক্রমণ চালানো হয়। এতে বুদ্ধপুদি চাকমা ও লক্ষ্মী বিজয় চাকমাকে হত্যাসহ অসংখ্য মানুষকে আহত করা হয়।
তিনি হিরাচর, সার্বোতলি, পাবলাখালীসহ বিভিন্ন গ্রামে সংঘটিত হামলা ও গণহত্যার সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচার ও সর্বেচ্চ শাস্তির দাবি জানান।
নিউটন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সামরিক শাসিত অঞ্চল হ্ওয়ার কারণে এখানে রাষ্ট্রীয় বাহিনী দ্বারা সংঘটিত কোন ঘটনারই বিচার হয় না। এই বিচারহীনতার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবত সংঘটিত গণহত্যা ও সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িতরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। ফলে বার বার পাহাড়িরা আক্রন্তের শিকার হচ্ছেন। এখানে রাষ্ট্রীয় বাহিনী জবাদিহি ছাড়া যা ইচ্ছে তাই করে যাচ্ছে।
তিনি নিউটন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত গণহত্যাসহ সকল অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্মকে আন্দোলনে সামিল হয়ে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী অমনিতা চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবত যত গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে তাতে বেশির ভাগ শিকার হয়েছেন নারীরা। হামলাকারী সেনা-সেটলাররা নারীদের ধর্ষণ, নিপীড়ন চালিয়েছে। কিন্তু এসব ঘটনার বিচার আমরা পাই না।
তিনি শাসকগোষ্ঠির অন্যায়-অত্যাচার, নারী নির্যাতন, ভূমি বেদখলসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে নারী সমাজকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান এবং হিরাচর, সার্বোতলি, পাবলাখালী পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত সকল গণহত্যায় জড়িত সেনা-সেটলারদের বিচার ও শাস্তির দাবি জানান।
        
                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                
                                
                                
                                
                                