বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
অসহনীয় লোডশেডিং বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা শিল্প উৎপাদন খাতে তার মধ্যে অধিক হুমকির মুখে খুলনা বিভাগ,এই বিভাগের শিল্প মালিকসহ ব্যবসায়ীদের ও স্বাভাবিক জনজীবনের ওপর পরেছে বিরূপ প্রভাব, দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় খুলনা বিভাগসহ মোট ২১জেলায় হঠাৎ বিদ্যুৎ বিভ্রাটে লোডশেডিং শুরু হয়েছে। একই সাথে ভ্যাপসা গরম পড়েছে অসহনীয় ভাবে দুই সমস্যা নিয়ে অতিষ্ঠ জনজীবন। একই সাথে বিঘ্নিত হচ্ছে বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল শিল্পকল কারখানার হ্রাস পেয়েছে উৎপাদন , প্রভাব পড়ছে যোগাযোগ মাধ্যমেও ফলে লোডশেডিং এর রাহুর কড়ালগ্রাসে খুলনার জনগণ।
একদিকে যেমন অসময়ে প্রচন্ড গরমের দাবদহে জনজীবন অতিষ্ঠ অন্যদিকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অসংখ্যবার বিদ্যুতের লোডশেডিং এ বিপর্যয় ঘটছে সামগ্রিক ভাবে ।
বিঘ্ন ঘটছে কমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায়। এতে মার্কেট শপিংমল গুলোতেও ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসায়ীরা।
দিনে যেমন তেমন রাতে ঘনঘন লোডশেডিং এর কারনে অসহ্য গরম সাথে মশার উপদ্রবে ডেঙ্গু আতঙ্ক বিরাজ করছে বিদ্যুৎ না থাকলে বৈদ্যুতিক পাখা বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে মশার আক্রমণ শুরু হয়, গরম ও মশার অত্যাচারে সারারাত ছটফট করা লাগে ঘুমানোর কোন উপায় অন্ত থাকছে না
অথচ রাত পোহালেই কর্মের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়তে হয়। ফলে কর্মস্থলে( গিয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঝিমানো লাগে আর
এ অবস্থায় গ্রাহকদের সেবা দেওয়াটাও কষ্টসাধ্য। এভাবে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বর্ণনা দিলেন খুলনা সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার আফাজ উদ্দিন। পাশাপাশি একই অভিযোেগে ওয়েস্টার্ন সী ফুড কোম্পানীর ম্যানেজার লোডশেডিং এর ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন বিদেশী বায়ারদের সাথে হাজার হাজার কোটি টাকার চুক্তি সাপেক্ষে সময় মতন পণ্য সরবরাহ দিতে না পাড়লে শিপমেন্ট ক্যান্সেল হয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক আর এরকম যদি বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে শিপমেন্ট ক্যানসেল হয়ে যায় তাহলে আমাদের ব্যাংকের কাছে ঋণ হয়ে কোম্পানি বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবে না । পাশাপাশি মিল কল কারখানায় উৎপাদনে ধ্বস নেমেছে ফলে দ্রব্য মূল্য সহ সর্বক্ষেত্রেই এর বিপর্যয়ের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে । কারণ খুলনা নগরীর বেশ কিছু বেকারির কারখানা, রাইস মিল, তুষকাঠ ফ্যাক্টরি, সী ফুড কোম্পানি, ফুড ফ্রোজেন, বরফ কল, ও কোল্ডষ্টোর গুলো ঘুরে সরজমিনে দেখা গেছে প্রতিদিন এদের পন্য উৎপাদনের পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও প্রায় চার এর তৃতীয়াংশ উৎপাদন থেকেই পিছিয়ে পড়েছে সকল উৎপাদন মুখী ব্যবসায়ীরা।
এক্ষেত্রে সময় মত তারা গ্রাহক পর্যায়ে পর্যাপ্ত মাল সরবরাহ দিতে পারছে না বিধায় তাদের ফ্যাক্টরিগুলো এখন লোকসানের হুমকির মুখে।সে ক্ষেত্রে আমরা সময় মতন কোন কিছুই করতে পারছি না কেবল বিদ্যুৎ লোডশেডিং এর কারণে। আরে লোডশেডিং এর সমস্যা খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় তো রয়েছে পাশাপাশি বরিশাল বিভাগের ৬ জেলা ও বৃহত্তর ফরিদপুর ৫ জেলা সহ মোট ২১ জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্ব রয়েছে ওয়েষ্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)। আর এই প্রধান সংস্থাটি খুলনা মহানগরীর বয়রা এলাকায়। আর এই ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ২১ জেলার ১৪ লাখ ২৮ হাজার গ্রাহক আর এর মধ্যেও খুলনায় রয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে ২ লাখ ৪৫ হাজার গ্রাহক। সংশ্লিষ্ট তথ্য অনুযায়ী ২১ জেলায় ওজোপাডিকোর আওতাধীন এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা একটা পর্যন্ত বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৬৫৯ মেগাওয়াট।এর বিপরীতে সরবরাহ ছিল ৫৬০ মেগাওয়াট, অর্থাৎ লোডশেডিং ছিল ৯৯ মেগাওয়াট এর মধ্যে শুধু খুলনাতেই ছিল ৪৫ মেগাওয়াট। এছাড়া বরিশালে ১১
মেগাওয়াট, গোপালগঞ্জে ৫,নড়াইলে ২, মাগুরায় ৩,সাতক্ষীরায় ২,কুষ্টিয়ায় ৬, চুয়াডাঙ্গায় ৫,ফরিদপুরে ৬, রাজবাড়ীতে ৪, মাদারীপুরে ৪, শরীয়তপুরে ২ ও ঝালকাঠিতে ৪ মেগাওয়াট লোডশেডিং ছিল।
লোডশেডিং এর ব্যাপারে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্তারা আরো তথ্য দিয়ে বলেন পায়রা সহ রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র হঠাৎ কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে বিদ্যুৎ সংকটের অনিশ্চিত অন্ধকারের পথে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি বড় অংশ । পাশাপাশি সমগ্র দেশ জুড়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের আশঙ্কা রয়েছে যাও খুব অতি অল্প সময়ের মধ্যেই পরিলক্ষিত হবে।
আর এতে করে সাধারণ মানুষের ভিতরে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠবে। সাথে উৎপাদন মুখি শিল্প কলকারখানা বন্ধ হয়ে উৎপাদন থেকে পিছিয়ে পড়বে হলে সরকারকে রাজস্ব খাতে কোটি কোটি টাকার লোকসান গুনতে হবে এতে করে বিভিন্ন দেশের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক অনেকাংশে অবনতি ঘটবে। তবে যে সকল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো কয়লার অভাবে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে সেগুলো অচিরেই কয়লা সংগ্রহ করে উৎপাদনে গেলে বিদ্যুৎ লোডশেডিং এর সমস্যা থেকে উত্তরণ পাবে।
তবে বিদ্যুৎ বিভ্রাটও বারবার লোডশেডিং এর ব্যাপারে খুলনা ওজো পাডিকোর একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে বারবার বিদ্যুৎ লোডশেডিংএর ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি স্পষ্ট বলেন এটা আমাদের হাতে করনীয় কিছু নাই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গুলো থেকে যতক্ষণ পর্যন্ত সঠিক মাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন না করতে পারবে ততদিন পর্যন্ত সমগ্র দেশ জুড়েই লোডশেডিং চলমান থাকবে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বরত উর্দনকর্তা যে পদক্ষেপ নিয়েছে সেই পদক্ষেপ অনুযায়ী যদি কার্য সম্পাদন করতে পারে তাহলে নভেম্বরের মাঝামাঝি নাগাদ কিছুটা হলেও এর ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হবে। ফলে উৎপাদন মুখে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো সচল থাকবে পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জীবনে স্বস্তি ফিরে আসবে।