হারুন শেখ স্টাফ রিপোর্টার বাগেরহাট জেলা।।
বাগেরহাটের রামপালে নানান প্রতিকূলতায় ও তীব্র লবণাক্ততার মধ্যেও বোরো ধান আবাদে বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সরকারি প্রণোদনার সহায়তা পাওয়ায় কৃষকরা বোরো আবাদে আগ্রহী হন। এতে আবাদ বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলায় খাদ্য উৎপাদেনে সয়ংসম্পূর্ণার দ্বারপ্রান্তে পৌছানো সম্ভব হয়েছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে এ উপজেলার ১০ টি ইউনিয়ে মোট ৪ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রীড জাতের আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৯৭০ হেক্টর এবং উফশী জাতের আবাদ হয়েছে ৮৫০ হেক্টর জমিতে। এতে মোট চাল উৎপান হয়েছে মোট ২২ হাজার ৬৮৩ মেট্রিক টন।
অপরদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নে আমন ধানের আবাদ হয়েছিল ৮ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হাইব্রীড জাতের ধান আবাদ করা হয় ৮১০ হেক্টর, উফশী জাতের ৬ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে ও স্থানীয় জাতের ধানের আবাদ করা হয় ১ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে। এতে মোট চাল উৎপান হয় ২৪ হাজার ৪০৩ মেট্রিক টন।
এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, উপজেলায় জনসংখ্যা (২০২৩-২৪ অর্থ বছর) মোট ১ লক্ষ ৮৮ হাজার ৩৭৪ জন। এর বিপরীতে আমাদের খাদ্য চাহিদা মোট ৩৬ হাজার ৮৭০ মেট্রিক টন চাল। আমন উৎপাদন ও বোরো উৎপাদন মিলিয়ে মোট উৎপাদন ৩৪ হাজার ৪৭৯ মেট্রিক টন চাল। উৎপাদনের বিপরীতে খাদ্যের চাহিদা বেশী থাকায় এ উপজেলায় খাদ্য ঘাটতি রয়েছে মোট ২ হাজার ৩৯১ টন (চাল)।
কৃষি অফিস ও স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ১০ বছর পূর্বে এ উপজেলায় খাদ্য ঘাটতির বিরাট ফারাক ছিল। এই খাদ্য ঘাটতি কমেছে মূলত বেশকিছু পদক্ষেপের কারণে। কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ, বিনামূল্য কৃষকদের মাঝে লবন সহিষ্ণু বীজ-সার সরবরাহ, মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা, রোগবালাই দমনে ও যথা সময়ে সেচ নিশ্চিত করা, জমির গুণাগুণ বুঝে সঠিক জাত নির্বাচন করাসহ নানানভাবে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের ফলে খাদ্য উৎপান বেড়েছে। আশা করা হচ্ছে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ২/১ বছরেই এ উপজেলা খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ণা অর্জন সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে রামপাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ওয়ালিউল ইসলাম জানান, আমরা চেষ্টা করছি কৃষিতে বিশেষ করে আমন ও বোরো ধান আবাদে বিপ্লব ঘটাতে। এ জন্যে সরকারি বেসরকারিভাবে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের পাশাপাশি তাদের প্রণোদোনার আওতায় এনে চাষাবাদ বাড়াতে। এ উপজেলায় প্রচুর জমি পতিত অবস্থায় রয়েছে। সেগুলোতে আবাদ বাড়াতে চেষ্টা করা হচ্ছে। এখানে চাষে বড় বাঁধা মিষ্টি পানির অভাব। কোথাও কোথাও আবাদি জমি পতিত অবস্থায় পড়ে আছে। এসব জমিতে পুকুর খনন করে বা গভীর নলকূপ স্থাপন করা গেলে এবং মিষ্টি পানির সরবরাহ বাড়ানো গেলে এখানে দ্বিগুণ চাল উৎপাদন সম্ভব। এ জন্যে সচেতনমহল, নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি ও কৃষকদের নিয়ে একটি দীর্ঘ মেয়াদী কর্ম পরিকল্পনা করতে হবে। জমিতে সেচের জন্য মিষ্টি পানি প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিরলসভাবে কাজ করছেন। তাদের আন্তরিকতায় কৃষিতে বিপ্লবের ছোঁয়া লেগেছে। আমরা আমাদের বাংলাদেশের কৃষকদের জন্যে আরো ভালো কিছু করতে চাই এমন মন্তব্য করেন এই কৃষি কর্মকর্তা ওয়ালিউল ইসলাম।