বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
খুলনা শহরের প্রাণকেন্দ্র ভৈরব নদীর উপর থেকে ব্রিজ নির্মাণের মাধ্যমে খুলনা দিঘলিয়া নড়াইল কালিয়া গোপালগঞ্জ সহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলের মানুষের সাথে মেলবন্ধনে আবদ্ধ ও যোগাযোগ মাধ্যম উন্নত হওয়ার লক্ষ্যে প্রায় অর্ধ যুগ আগে সেতু প্রকল্পটির কাজ শুরু হলেও গত ৬ বছরে দৃশ্যমান হয়েছে ১৫ শতাংশ প্রকল্পটি থমকে আছে নানান জটিলতায়। নকশায় ত্রুটি, জমি অধিগ্রহণসহ নানা সংকটে নির্ধারিত মেয়াদে শেষ হয়নি খুলনার ভৈরব সেতুর নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। এখানেই শেষ নয়, কাজ শুরুর সাড়ে তিন বছরে অগ্রগতি মাত্র ১৫ শতাংশ। ফলে এই সেতুটি কবে বাস্তবায়িত হবে আর মহানগরী খুলনার সঙ্গে দিঘলিয়া উপজেলা ও নড়াইল, গোপালগঞ্জসহ দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের সরাসরি সংযোগ হবে, তা বলতে পারছে না কেউ। এ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের ভৈরব সেতু কি স্বপ্ন হয়েই থাকবে এ আশঙ্কায় অপেক্ষার প্রহর গুনছে।
স্থানীয় লোকজন দল-মত না দেখে দ্রুত সেতুটি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, সেতুটি বাস্তবায়িত হলে দীর্ঘদিনের অবহেলিত কৃষিনির্ভর দিঘলিয়াসহ ভৈরবপারের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি গড়ে উঠবে বাণিজ্যিক জোন।
সেতু প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, মহানগরী খুলনার সঙ্গে দিঘলিয়া, কালিয়া, নড়াইল, গোপালগঞ্জসহ আশপাশের এলাকার সংযোগ স্থাপনে ভৈরব নদের ওপর একটি সেতু নির্মাণের যৌক্তিক দাবি ছিল দীর্ঘদিনের।
গণমুখি এ সেতুটির নির্মাণ কাজ সম্পন্নের দাবী পূরণে ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর ‘ভৈরব সেতু’ নামের প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন লাভ করে। স্টিল স্ট্রাকচারের ১.৩১৬ কিলোমিটার সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৬১৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
এর মধ্যে মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৩০৩ কোটি টাকা, জমি অধিগ্রহণে ২৮১ কোটি টাকা ও বাকি বরাদ্দ সেতু সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজে। ২০২০ সালের ২৭ জুলাই সেতু নির্মাণ কাজের দরপত্র আহবান করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।
বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে কাজটি বাস্তবায়ন করছে ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিমিটেড (করিম গ্রুপ) নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ না করেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটিকে ওয়ার্ক অর্ডার দেয়। ২০২১ সালের ২৪ মে দিঘলিয়া প্রান্তে সরকারি খাস জমির ওপর ২৪ ও ২৫ নম্বর টেস্ট পাইলিংয়ের নির্মাণ কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
ভৈরব সেতু বাস্তবায়ন সংস্থা মেসার্স ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের প্রকৌশলী সূত্রে জানা গেছে, উক্ত সেতুটি ২৯ টি পিলারের উপর প্রতিষ্ঠিত হবে। ইতো মধ্যে দিঘলিয়া অংশের পিলারগুলোর কাজ শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। নতুনভাবে আবার কাজ শুরু হবে ২/৪ দিনের মধ্যে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দুই দফায় সময় পরিবর্তন করেও কাজ শেষ করা যায়নি যুক্তিযুক্ত কারণে।বর্তমানে সেতুটি পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত নকশায় ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে। যা দ্রুতই অনুমোদন হয়ে আসবে এমনটায় আশা করছেন সংশ্লিষ্ট সকল মহলের।
দৌলতপুর-দিঘলিয়ার মাঝে ভৈরব নদের উপর নির্মাণাধীন ভৈরব সেতুর জন্য জমি অধিগ্রহণ ও বিদ্যুৎ পোল স্থানান্তর সম্পন্ন হলেও খুলনা শহরাংশের রেলওয়ের জায়গা হস্তান্তর ও বিদ্যুতের খুঁটি স্থানান্তর প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি। অপরদিকে এ ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজের ধীর গতি শুরু থেকে পরিলক্ষিত হয়ে আসছে। কাজে কেন ধীর গতি এ প্রশ্নের জবাব আজও অবধি মিলেনি।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে এ সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। এ সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করার দাবীতে দিঘলিয়া জনপদের মানুষ শুধু দাবীই জানায়নি মানববন্ধনের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও তার কোন ইতিবাচক সারা এখনো পাওয়া যায়নি। তবে প্রকল্পটির কিছু কর্মকর্তারা বলছে যে যে জটিলতার কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে সে জটিলতা গুলো নিরসন করতে পারলেই দ্রুত ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পের কাজটি সম্পন্ন হবে।