বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় যখন কাঁদছে দেশ প্রাণোচ্ছল মাইলস্টোন ক্যাম্পাস মৃত্যুপুরীতে পরিণত।
দেশ জুড়ে যখন অসংখ্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শোকের মাতম বাতাসে পুড়া লাশের গন্ধ মাইলস্টোন স্কুল তথা প্রতিটি সন্তান হারানো মা বাবার আর্তনাদ ভারী হয়ে উঠেছে চারিপাশ এবং দগ্ধিতরা বিভিন্ন হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে জীবন মরণ সন্ধিক্ষণে ঠিক সেই মুহূর্তে একদল হিজড়া ছুটে এসেছে আত্ম মানবতার কাছে মাথা নত করে আমরা ওদের টাকায় খাই ওদের রক্ত আমাদের শরীরে।
আমাদের তো অবলম্বন বলতে কিছুই নাই, আমাদের সন্তান নাই, ওরাই আমাদের সন্তান, আমরা ওদের রক্ত দেবো, প্রয়োজনে শরীরে চামড়া দেবো ওদের বাঁচানোর জন্য জীবন লাগলে আমরা তাও দেব ওদের রক্ত দিতে না পারলে আমাদের রক্তের কোন মূল্য নাই। আমরা এখানে যতজন এসেছি তাদের রক্ত যদি ম্যাচ না করে প্রয়োজনে সারা বাংলাদেশের হিজড়াদের এখানে হাজির করব, কারন আমরা ওদের কাছে ঋণী আমরা প্রতিদিন দ্বারে দ্বারে ঘুরে সমাজের নবজাতকদের বুকে জাপটে ধরে আনন্দ পাই, নাচ গান করি আশীর্বাদ করি, তাই ওদের মমত্ব আমাদের হৃদয় জড়িয়ে আছে আর সেই সকল সন্তানেরা বিমান বিধ্বস্ত হয়ে অকাতরে মৃত্যুবরণ করার শোক আমাদের বুকে কুরে কুরে খাচ্ছে কঠিন বেদনায়, ঘুমাতে পারেনি রাতে তাই এখানে ছুটে এসেছি আমাদের সর্বস্ব দিয়ে ওদের সহযোগিতা করতে হয়তো বা কোন পাপের কারণে ঈশ্বর আমাদের এই জীবন দান করেছেন তাতেও আমাদের দুঃখ নাই যদি আমরা সমাজের ক্রান্তি লগ্নে যেকোনো কাজে নিজেদেরকে উৎসর্গ করতে পারি আপনারা জানেন বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে সেখানে আমাদের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদেরকে নগদ ২৫ লক্ষ টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছিলাম।
একদল তৃতীয় লিঙ্গের অবহেলিত স্বজন থাকতেও বিতাড়িত ভদ্রবেশি লোক চক্ষুর জঞ্জাল হিসেবে চিহ্নিত হিজড়া উপস্থিত গণমাধ্যমে এসব কথা বলেছে।
এ সময় হৃদয়বিদীর্ণ ক্ষোভে হিজড়াদের মধ্যে একজন বলেছে দুর্ঘটনায় কবলিত পাইলটকে যদি রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয় তাহলে ২৫ জন শিশুকে বাঁচিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজের গর্ভে ধারণ করা দুটি সন্তানের কথা না ভেবে নিশ্চিত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নেওয়া একজন মমতাময়ী মা শিক্ষিকাকে কেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হলো না এটা কেমন বৈষম্য আপনাদের। গতকালকে যখন টেলিভিশনে আমরা এ খবর গুলো দেখেছি তখন আমরা এতটাই মর্মাহত ব্যথিত দিশেহারা ঐ মুহূর্তে ঠিক কি করবো তা আমরা বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
অথচ আমরা তখন এটাও দেখেছি বিভিন্ন হাসপাতালবগুলোর বার্ন ইউনিট ও দুর্ঘটনার ঘটনাস্থল মাইলস্টোন স্কুলে গিয়ে দেশের উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা এতটাই গণমাধ্যমের সামনে নিজেদের সোডাউন করার জন্য ব্যতিব্যস্ত তাতে করে ব্যাঘাত ঘটেছে ক্ষতিগ্রস্ত মুমূর্ষ রোগীদের সেবা দিতে একপর্যায়ে চিকিৎসকরা বিরক্ত হয়ে বলতে বাধ্য হয়েছে আপনারা এভাবে ভিড় করলে রোগীদের বাঁচানো সম্ভব হবে না কারণ বার্ন ইউনিট একটি স্পর্শকাতর জায়গা তবুও কে সোনে কার কথা দলে দলে নেতারা এসে ভিড় জমাচ্ছে বড় বড় বুলি আওড়াচ্ছে অথচ তাদের এই লোক দেখানো সমাজ সেবায় ক্ষতি ছাড়া কিছুই হচ্ছে না। সবকিছু মিলে দেখেছি মানবতার দেয়াল ভেঙে গেছে। আর যাদের বুকের সন্তান চলে গেছে তারাই বুঝতেছে কতটা যন্ত্রনা। সবচেয়ে বড় কথা পিতা-মাতার কাঁধে সন্তানের লাশ এমন নিষ্ঠুর শোকের ভার সহ্যই করা বড় কঠিন, আমরা কিছুটা হলেও ওদের মমতা বুঝি কারণ ওদের জন্মের পর আঁতুড় ঘরের আতুরের গন্ধ আমাদের নাকে স্পর্শ করে প্রতিমুহূর্তে ওদের কোমল ছোট্ট দেহটা আমাদের হৃদপিণ্ডের প্রতিটি ধমনীতে মিশে আছে।