মোঃ আশরাফুল ইসলাম,মানিকগঞ্জ.
কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় অধিক মুনাফার লোভে ধান, গম বা ভুট্টা চাষ কমিয়ে তামাক চাষে ঝুঁকছে মানিকগঞ্জের কৃষকেরা।স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক জেনেও অধিক মুনাফার আশায় তামাকের কাজ করছেন নারী-পুরুষ,বৃদ্ধ ও শিশুরা।
সরজমিনে মানিকগঞ্জের সদর,সাটুরিয়া,শিবালয় ও দৌলতপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায ঘুরে দেখা যায়, কেউ তামাক গাছের পরিচর্যা করছেন, কেউ নষ্ট পাতা কাটছেন, আবার কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তামাক ক্ষেতে সার দিচ্ছেন। তামাক পোড়ানো ও প্রক্রিয়াজাতের কাজ করছেন নারী, বৃদ্ধা ও শিশুরা। আর প্রান্তিক কৃষকরা তামাক পাতা তোলা ও পোড়ানোর কাজে ব্যস্ত।
তামাক চাষি নাজিম উদ্দিন বলেন, তামাকের আবাদ তিন মাসেই হয়ে যায়। বোরো ধান চাষে খরচ অনেক বেশি তবে তামাক চাষে প্রচুর খাটুনি। স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হয়। তামাকের সময় বাড়ির ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। রাত-দিন এক করে নারী-পুরুষ ও শিশুরা কাজ করে।
আকবর নামের আরেক চাষি বলেন, তামাক চাষে লাভ বেশি। প্রতি বিঘায় প্রায় ১ লাখ টাকার তামাক বিক্রি হয়। প্রতি বিঘায় ৫ হাজার চারা লাগানো যায়। বিঘায় ১০ মণ শুকনো তামাক হয়। প্রতি মণ শুকনো তামাক বিক্রি হয় প্রায় ৮০০০ টাকায়। খরচ হয় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা আর লাভ থাকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি, ঢাকা টোব্যাকো, জাপান টোব্যাকো, আবুল খায়ের টোব্যাকো, নাসির টোব্যাকো, আকিজ টোব্যাকোসহ বেশ কয়েকটি তামাক কোম্পানি বীজ, সার ও অগ্রিম ঋণসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তামাক চাষে চাষিদের আগ্রহী করে তুলছে। এ কোম্পানিগুলোর আর্থিক সহযোগিতা, বিনামূল্যে বীজ, ঋণে সার ও নগদ অর্থসহ তামাক ক্রয়ের নিশ্চয়তার কারণে তামাক চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কৃষি বিভাগ থেকে তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হলেও তামাক কোম্পানির লোভনীয় আশ্বাসের কারণে তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, কৃষকদের তামাক চাষের কুফলগুলো বোঝানোর পাশাপাশি অন্যান্য ফসল চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
জেলার সিভিল সার্জন মোয়াজ্জেম আলী খান জানান, তামাক স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তামাকের গুঁড়া বাতাসের সঙ্গে মানুষের শ্বাসনালী দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। তামাক ফুসফুসের ক্ষতি করে। তামাকের কারণে মানুষের ব্রংকাইটিস, অ্যাজমা, টিবিসহ বিভিন্ন রোগ হতে পারে। তামাক উৎপাদন ও প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত চাষিদের কাজের সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রতি নজর দিতে বলেন এই কর্মকর্তা ।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মতিয়ার রহমান বলেন,সাটুরিয়া, শিবালয় ও দৌলতপুরসহ সদর উপজেলায় তামাকের চাষ হয়। তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে কৃষি বিভাগ যথেষ্ট আন্তরিক ও তৎপর। মাঠ পর্যায়ে তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করে ধান, ভুট্টা, গম,আলু,সরিষাসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর ফসল চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।