জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার ধরন্জী ইউনিয়নের বাগুয়ান এলাকায় ছোট যমুনা নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে দীর্ঘদিন থেকে বালু উত্তোলনের কাজ। মাঝেমধ্যে প্রশাসন জরিমানা করলেও তা পুনরায় চালু হত। অতীতে বালু ব্যবসায়ী মোঃ খোকন স্থানীয় আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই গড়ে তুলেছিলেন বালু ব্যাবসার সম্রাজ্য। তবে গত ৫ই আগস্ট ২৪ ইং সালের আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর খোকনের সেই বালুর সম্রারাজ্যে ঘটেছে হাত বাদল। এখন স্থানীয় বিএনপি ও যুবদল নেতা কেরামত আলী ও কারিমুলের ছত্র ছাঁয়ায় চলছে এই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে কেরামত ও কারিমুল বলেন, প্রথমে খোকনের সঙ্গে একটা চুক্তি হলেও খোকন সেই চুক্তি রাখেনি। খোকন এখনো বালুর ঘাট চালাচ্ছে। আর আমার বিরুদ্ধে যে, অভিযোগ উঠেছে সেটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
জানা গেছে, কেরামত আলী পাঁচবিবি উপজেলার ধরঞ্জি ইউনিয়নের কোতোয়ালীবাগ সাত নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির সভাপতি ও কারিমুল হোসেন স্থানীয় যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
স্থানীয়রা জানান, বাগুয়ান এলাকার ছোট যমুনা নদীর বালু ঘাটটিতে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করতেন খোকন হোসেন নামে এক ব্যক্তি। গত ৫ আগস্ট ২৪ইং ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বাগুয়ান এলাকায় ছোট যমুনায় বালুঘাট নিয়ন্ত্রণে নেয় কেরামত ও কারিমুল। এ বালুঘাটকে কেন্দ্র করে মাঝে মধ্যে সহিংস ঘটনা ঘটে। এতে একদিকে নদীর পাড় বিলীন হয়ে যাচ্ছে অপরদিকে ফসলের জমি নদী গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে। তারপরও আমরা ভয়ে কিছু বলতে পারি না। তাদের জ্বালায় আমরা অতিষ্ঠ ও আতঙ্কিত। আর সবকিছু দেখেও যেন প্রশাসন নীরব থাকে। উল্টো যারা বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন তাদের বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাগুয়ান এলাকায় ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। নদীর পূর্বপাড় থেকে বালু উত্তোলন করে বালুঘাট থেকে ট্রাক্টরে করে সেসব বালু বিক্রি করা হচ্ছে। এসব বালুঘাট থেকে নিয়মিত নদী থেকে বালু উত্তোলন করায় নদীর পাড় ধ্বস নেমে এসেছে। বালু উত্তোলন করায় আবার অনেক ফসলি জমি নদীর গর্ভে হারিয়ে গেছে।
বালুঘাটে বালু উত্তোলনের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন ফারুক হোসেন নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পরে থেকে এ বালুঘাট আমি দেখাশোনা করি। অবৈধ ভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রি এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, স্থানীয় বিএনপি নেতা কেরামত ও কারিমুলকে ম্যানেজ করে এ ব্যবসা করা হচ্ছে। বিনিময়ে তাদেরকে কমিশন দিতে হয়। এভাবেই চলছে বালুরঘাট।
অবৈধ বালুঘাটের বালু ব্যবসায় কমিশন নেওয়ার বিষয়ে স্থানীয় যুবদল নেতা কারিমুল হোসেন বলেন, এটির কোন ভিত্তি নেই। এ বালুঘাটের সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত নই। তবে সরকার পরিবর্তন পরে এ বালুঘাট খোকনকে কিছু টাকা দিয়ে কেরামত চাচা এ বালুঘাটের পার্টনার হয়েছে।
পাঁচবিবি উপজেলার ধরঞ্জি ইউনিয়নের কোতোয়ালীবাগ সাত নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির সভাপতি কেরামত আলী বলেন, ৫ই আগস্টের পর খোকনের সঙ্গে একটা চুক্তি হলেও বালু ব্যবসায়ী খোকন সেই চুক্তি রাখেনি। বালুর ঘাট এখনো তিনিই চালাচ্ছেন।
এ বিষয়ে বালু ব্যাবসায়ী খোকনের কাছে জানতে চাইলে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমানা রিয়াজ বলেন, নিউজের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। নথিপত্র দেখে যদি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হয় তাহলে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করব।