ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ জেলার মাঝ দিয়ে বয়ে চলা প্রমত্তা যমুনা নদীর ওপর যমুনা সেতুর ৩০০ মিটার দূরত্বে দেশের দীর্ঘতম যমুনা রেল সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। সেতুটি চলতি বছরের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ বা শেষের দিকে উদ্বোধনের কথা থাকলেও তা হচ্ছে না।
আগামী ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে এটি উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা।
‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্প’ বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিডি) আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান জানান, মূল সেতুর কাজ ইতোমধ্যে শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। সেতুটির অন্য কিছু কাজ বাকি রয়েছে। সেতুটি নির্মাণে নির্ধারিত যে ব্যয় ধরা হয়েছিল তা থেকে কিছুটা সাশ্রয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি জানান, দেশের দীর্ঘতম এই রেল সেতু চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে উদ্বোধনের কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে এটি উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছেযমুনা রেল সেতু দিয়ে বিরতিহীনভাবে প্রতিদিন কমপক্ষে ৮৮টি ট্রেন দ্রুতগতিতে পারাপার হতে পারবে।
ফলে সেতু পারাপারে ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় বেচে যাবে। এছাড়া টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের সেতু পূর্ব প্রান্তে নতুন রেল স্টেশনের কাজ প্রায় সম্পন্ন। সিরাজগঞ্জের পশ্চিম প্রান্তের রেল স্টেশনের কাজও শেষের দিকে। নির্মাণ শ্রমিকরা এখন রঙ-তুলি ও ঘষামাঝার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
প্রকল্প সূত্র জানা গেছে, সাধারণ ট্রেনের পাশাপাশি দ্রুতগতির (হাইস্পিড) ট্রেনও চলাচলের উপযোগী করে নির্মাণ করা হয়েছে যমুনা রেল সেতু। ফলে সেতুতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো যাবে। তবে শুরুতে (উদ্বোধনেরেএক বছর) সাধারণত ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে। ক্রসিংয়ে পড়বে না রেলগুলো। এতে সময় সাশ্রয় হবে ২০ থেকে ৩০ মিনিট।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নেয়া এই প্রকল্পের চূড়ান্ত নকশা প্রণয়নসহ সেতুর নির্মাণ ব্যয় প্রথমে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি সাত লাখ টাকা ধরা হয়েছিল। পরবর্তীতে এর মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়। এতে প্রকল্পের ব্যয় সাত হাজার ৪৭ কোটি টাকা বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকায় দাঁড়ায়। এর মধ্যে দেশীয় অর্থায়ন ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ দিয়েছে ১২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা, যা প্রকল্পের ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ।
সমান্তরাল ডুয়েলগেজ ও ডাবল ট্র্যাকসহ প্রায় ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেল সেতুর দু’পাশে ০.০৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, ৭ দশমিক ৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ সাইডিংসহ রেললাইন নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পে রেলপথের পাশাপাশি সেতুর গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে।
১৯৯৮ সালে যমুনা সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেয়ায় কমিয়ে দেয়া হয় ট্রেনের গতি।
বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি সেতুটি নির্মাণকাজের ভিত্তি স্থাপন করে। এরপর ২০২১ সালের মার্চে রেল সেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়।