সালাউদ্দীন,কয়রা(খুলনা) প্রতিনিধিঃ
খুলনার কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নে যৌতুকের তাড়নায় স্বামীর অত্যাচারে এখন ঘরছাড়া শারমিন আক্তার রুমি (২১) নামের এক নারী। দুই শিশুকন্যাকে নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সংসারে ফিরতে না পারায় যৌতুকের মালামাল ফেরত চাচ্ছেন তিনি।
জানা গেছে, শারমিন উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের জোড়সিং গ্রামের দিনমজুর মো.মজিবুর রহমান গাজীর মেয়ে। স্বামী আবু জাফর সরদারেরর দাবিকৃত যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় দুই শিশুকন্যাকে নিয়ে ঘর ছাড়তে হয়েছে তাকে। সংসার ফিরে পেতে ২০২২ সালে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন শারমিন আক্তার। সে সময় স্বামীর ঘরে ফিরিয়ে নেওয়ার শর্তে আদালত থেকে মামলা তুলে নেয়।
কান্নাজরিত কণ্ঠে শারমিনের মা রেহেনা পারভীন বলেন,২০২০ সালে পারিবারিক সিদ্ধান্তে শারমিনের বিয়ে হয় একই উপজেলার কয়রা সদর ইউনিয়নের ৩নং কয়রা গ্রামের বাসিন্দা আবু বকর সরদারের ছেলে আবু জাফরের সঙ্গে।বিয়ের সময় মোটরসাইকেল ও ঘর সাজাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল এবং দুটি গরু যৌতুক দেওয়া হয়।
তাদের দাম্পত্য জীবনে এক বছর পরে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। শিশুটির বয়স বর্তমানে ৩ বছর। দাম্পত্য জীবনের শুরুতে আবু জাফরের সংসারে অভাব-অনটন থাকায় শারমিন ব্যবসার জন্য তার বাবার বাড়ি থেকে ২৬ হাজার টাকা এনে স্বামীকে দেন। বিয়ের পর প্রথম বছর দাম্পত্য জীবন ভালো চললেও পরের বছর থেকে যৌতুকের দাবিতে স্বামীর অত্যাচার ও নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন শারমিন।
এরপর দিন যত যেতে থাকে যৌতুকের দাবিতে শারমিনের ওপর বাড়তে থাকে অত্যাচারের মাত্রা। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার এলাকায় শালিস হলেও শারমিনের উপর নির্যতন থেমে থাকেনি।
বিয়ের দুই বছরের মাথায় বসত ঘর নির্মাণ ও ব্যবসা করার জন্য শ্বশুরবাড়ি থেকে আরও তিন লাখ টাকা এনে দেওয়ার জন্য স্ত্রীর ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। এই টাকা দিতে অক্ষমতা প্রকাশ করায় শারমিনের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন আরও বেড়ে যায়।শারমিন আদালতে একটি মামলা দায়ের করলে আবু জাফর তাকে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে সংসার করবে সেই শর্তে মামলা প্রত্যাহার করে নেয়।মামলা প্রত্যাহার করে সংসারে ফিরলেও তার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন দ্বিগুন হারে বেড়ে যায়।এর মধ্যে কোল জুরে দ্বিতীয় কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।বারবার কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ায় শাশুড়ি ননদ ও স্বামীর মানষিক নির্যাতনের শিকার হয় শারমিন।
সম্প্রতি স্বামী প্রকাশ্যে হুমকি দেন,বেদকাশী বাপের বাড়ি হতে কয়রা সদরে এসে আইনী পরামর্শ ও চলাফেরা করতে নিষেধ করেন।বাধ্য হয়ে উত্তর বেদকাশী ইউনিয়ন পরিষদে পুলিশের সহযোগিতায় সালিশী আলোচনায় যৌতুকের দেওয়া মালামাল ফেরত চায় এবং আবু জাফরের সংসারে ফেরত যাবে না বলে জানান।
কথা বলতে চাইলে শারমিন আক্তার কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন,
সংসার করার জন্য কিনা করেছি।আমার আব্বা হতদরিদ্র মানুষ।তারা যৌতুকের জন্য এত টাকা বারবার দিবে কোথা হতে।বাড়ির সব গরু বিক্রি করে আমার স্বামী কে টাকা দেওয়া হয়েছে তারপরও তার মন ভরেনি।দুই শিশু কন্যা নিয়ে বাবার বাড়ি চার মাস ধরে আছি, কন্যাদেরও খোঁজ নেয়নি আবু জাফর।আমি বিয়ের পর থেকেই স্বামীর সংসার করতে চেয়েছি। কিন্তু যৌতুকলোভী স্বামী ও তাঁর পরিবারের লোকজনের অত্যাচারে সংসার ছেড়ে বাবার বাড়িতে আসতে বাধ্য হয়েছি।
দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কবি শামসুর রহমান বলেন,মেয়েটির বিয়ের পর অনেকগুলো সালিশ করে ব্যর্থ হয়েছি।মেয়েটিকে বারবার নির্যাতন করে তার স্বামী।সালিশ মিমাংশা করে স্বামীর ঘরে পাঠিয়ে দেওয়ার কিছু দিন ভাল থাকে তারপর শুরু হয় যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন।