রুপম চাকমা বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রতিনিধি
খাগড়াছড়ির পানছড়িতে গত ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ সেনা মদদপুষ্ট ঠ্যাঙাড়ে নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীদের হামলায় শহীদ বিপুল চাকমা, সুনীল ত্রিপুরা, লিটন চাকমা ও রহিন ত্রিপুরার স্মরণে রামগড় শোকসভা অনুষ্ঠিতে হয়েছে।
আজ শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, সকাল সাড়ে ১০টায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ ও ইউপিডিএফের যৌথ উদ্যোগে এই শোকসভার আয়োজন করা হয়।
শোকসভার শুরুর পূর্বে শহীদ বিপুল, সুনীল, লিটন ও রহিন-এর স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিস্তেম্ভে ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের নেতা-কর্মীবৃন্দ, রামগড় এলাকাবাসী ও ছাত্র-ছাত্রীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
পরে ইউপিডিএফ রামগড় উপজেলা ইউনিটের সংগঠক নিটুন চাকমা সভাপতিত্বে ও পিসিপি রামগড় উপজেলা শাখা সাধারণ সম্পাদক তৈমাং ত্রিপুরার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত শোকসভায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফের রামগড় উপজেলা ইউনিট সংগঠক সুবর্ণ মারমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় তথ্য প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রজেন্টু চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সদস্য জার্মেন্ট ত্রিপুরা, পিসিপির রামগড় উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি রাজু ত্রিপুরা, নারী আত্মরক্ষা কমিটি রামগড় উপজেলা শাখা সভাপতি স্বপ্না চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রামগড় উপজেলা শাখার সভাপতি লিটন চাকমা।
বক্তারা বলেন, গত ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ রাত ৯:৩০ টার সময় পানছড়িতে সেনাবাহিনী মদদে নব্য মুখোশ ঠ্যাঙারে বাহিনী কর্তৃক সাংগঠনিক কাজে যা্ওয়া গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিপুল চাকমা ও খাগড়াছড়ি জেলা শাখা সহ-সভাপতি লিটন চাকমা, পিসিপির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সুনীল ত্রিপুরা ও ইউপিডিএফ সংগঠক রহিন ত্রিপুরাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। যুব সম্মেলন সফল করতে সেখানে অবস্থান করায় নব্য মুখোশ ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীরা তাদেরকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সকলে সেনা-মুখোশদের ঘৃণা নিন্দা জানাচ্ছেন এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বিচার দাবি করছেন। কিন্তু ঘটনার ৪দিন অতিবাহিত হতে চললেও প্রশাসন এখনো খুনিদের গ্রেফতার করেনি। খুনিরা এখনো সেনাবাহিনীর ছত্রছায়ায় অবস্থান করে জনগণকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।
তারা আরো বলেন, সরকার ও সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন নস্যাৎ করে দিতে নানা ষড়যন্ত্রের খেলায় মেতে উঠেছে। তারই অংশ হিসেবে অধিকার আদায়ের আন্দোলনে যুক্ত নেতা-কর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে। পোষ্য সন্ত্রাসী বাহিনীকে দিয়ে সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করছে। আমরা একই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দেখেছি ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর বাজারে। সেদিন সন্ত্রাসীরা ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পুলিশ-গোয়েন্দাদের সামনে প্রকাশ্যে দিবালোকে ব্রাশফায়ার করে একে একে ৬ জনকে এবং পেরাছড়া ১ জনকে হত্যা করেছিল। কিন্তু সেই ঘটনার জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার করা হয়নি। ফলে সন্ত্রাসীরা আবারো পানছড়িতে ৪ জনকে হত্যার ঘটনা সংঘটিত করেছে।
বক্তারা সেনা মদদপুষ্ঠ ঠ্যাঙারে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এলাকায় এলাকায় ছাত্র-যুবক-নারীসহ সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
বক্তারা অবিলম্বে বিপুল, সুনীল, লিটন, রহিনের খূনিদের গ্রেফতার করে বিচার ও শাস্তি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন তুলে নিয়ে পূর্ণগণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।