হারুন শেখ রামপাল (বাগেরহাট) সংবাদদাতা।।
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সগুনা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ তুহিন বাদশার বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সেই সাথে শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে আসা পরিদর্শককে অর্থ দেওয়ার নাম করে শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে তোলা এমপিও’র অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি ওই পরিদর্শকের স্বাক্ষর ও সিল জাল করে বিভিন্ন কাগজ পত্রে নিজেই স্বাক্ষর করেছে বলে অভিযোগ সূত্রে জানাযায়।
২৩ মে বৃহস্পতিবার রামপাল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক কর্মকর্তা আনোয়ারুল কুদ্দুস বরাবর সগুনা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-কর্মচারীদের এক লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে এসব তথ্য পাওয়া যায় ।
অভিযোগ করে শিক্ষক-কর্মচারীরা জানান, গত ০১ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক মোঃ শামীম আলি সগুনা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন ও নিরিক্ষার জন্য আসেন । পরবর্তীতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওই কর্মকর্তাকে অর্থ দেওয়ার কথা উল্লেখ করে অন্য সকল শিক্ষক-কর্মচারীদের এক মাসের বেতনের (এমপিও) টাকা সংগ্রহ করেন । যার আনুমানিক হিসাব ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৭৮৩ টাকা। ওই টাকা এবং অডিট সংক্রান্ত কাগজপত্র ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও প্রধান শিক্ষক তা না করে হাতিয়ে নেয় । কিন্তু আমরা জানি যে অডিট অফিসার কোন অর্থের কথা বলেন নি, তিনি শুধুমাত্র অডিট সংক্রান্ত কাগজপত্রের কথা বলেছেন। এসব জানাজানি হলে তিনি অডিট কর্মকর্তার স্বাক্ষর, নাম সিল জাল করে এ গুলো ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন । শিক্ষক কর্মচারীরা অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, এর আগে প্রধান শিক্ষক তুহিন বাদশা টিউশন ফির ১ লাখ ৬১ হাজার টাকা আত্মসাত করে এবং সেটি স্বিকার করলেও এখনও ফেরত দেয় নাই । এই অবস্থায় তারা সমুদয় অর্থ ফেরত এবং এই জিম্মি দশা থেকে মুক্তির জন্য প্রধান শিক্ষকের অপসারণ দাবি করেন।
এর আগে ২০ মে সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সকল শিক্ষক কর্মচারীরা ক্লাস বর্জন করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছন । এ সময় তারা জানান, তাদের থেকে যে অর্থ জোরপূর্বক আদায় হয়েছে তা তারা ফেরত চান এবং ব্যাক্তিগত ভাবে ধার দেওয়া অর্থও ফেরত চান ।
ওইদিন আরও জানা যায়, বিভিন্ন অভিযোগে ২১/০৩/২০২২ তারিখে প্রধান শিক্ষক তুহিন বাদশাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় । প্রবর্তীতে ১৮/০৪/২০২২ তারিখে ম্যানেজিং কমিটির সাধারণ সভায় সকল কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য, সুধীজন ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সম্মুখে আনীত ১৬ টি অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করলে তার স্থগিতাদেশ বাতিল করা হয় । এবং এ মর্মে তুহিন বাদশা অঙ্গীকার করেন, আগামী ৪০ কর্মদিবসের মধ্যে সুষ্ঠ জবাব কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করবেন । কিন্তু দু’বছর অধিপতি হলেও এ পর্যন্ত কোন জবাব তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে প্রদান করেননি ।
এর মধ্যে, ওই বিদ্যালয়ের ২টি টিনের ঘর কেজি দরে বিক্রি, ২০১৭ সাল থেকে শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দকৃত টিউশন ফি উঠিয়ে আত্মসাত, প্রতিষ্ঠানের জমি লীজ দিয়ে টাকা আত্মসাত, ২০২১ সালে শিক্ষার্থীদের জন্য বোর্ড থেকে ফেরত দেওয়া টাকা শিক্ষার্থীদের না দিয়ে আত্মসাত, বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সিন্ধান্ত কে বৃদ্ধাঅঙ্গুলি দেখানো, এছাড়া ব্যাংক হিসাব পরিচালনায় বোর্ডের সিন্ধান্ত না মেনে নিজের পছন্দ মত লোক দিয়ে হিসাব পরিচালনা করে টাকা আত্মসাত, নিয়োগ বানিজ্য করে ব্যাপক অর্থ আত্মসাত সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষক তুহিন বাদশার বিরুদ্ধে।
অর্থ লেনদেনের ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে আসা সহকারী পরিদর্শক মোঃ শামীম আলীর সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি জানান, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অন্যের স্বাক্ষর নিয়ে তার নিকট এসেছিল। পরে তিনি স্বাক্ষর করে দিয়েছেন। তবে তার নামে কোন অর্থ আদায় করে থাকলে তিনি ওই প্রধান শিক্ষককে ওই কর্মকতা-কর্মচারীদেরকে ফেরত দিতে বলবেন বলে জানান।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, বিধান চন্দ্র পাল বলেন অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে গত ২০ মে শিক্ষক কর্মচারীরা ক্লাস বর্জন করলে তিনি ব্যাপারটা জানতে পারেন । পরবর্তীতে শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন । তিনি আরও জানান, এর আগে তুহিন বাদশা সগুনা গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্যের পর গ্রামবাসী তুহিন বাদশার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করেন, যা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয় ।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আনোয়ারুল কুদ্দুস অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইনানুগ আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব ।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক তুহিন বাদশার কাছে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালাতে গেলে বিভিন্ন সেক্টরে লেনদেন করতে হয় , তারই অংশ হিসেবে শিক্ষকরা কোন কারণে ক্ষুব্ধ থাকতে পারে সন্দেহ করতে পারে, তারই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা অফিসে তারা একটি অভিযোগ দিয়েছেন, অভিযোগ তদন্তাধীন আছে তাই আমি এটি নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না । তবে তদন্ত শেষে তিনি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সব কিছু জানাবেন বলে জানান ।