রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলাটি ভারতের আসাম সীমান্তঘেষা একটি দূর্গম উপজেলা।খালবিল নদী-নালায় সড়ক বিহীন আঁকাবাকা সীমান্ত পথটি ১০৪৭ হতে ১০৭১ পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার। সীমান্ত পথটি দূর্গম হওয়ায় চোরা কারবারিদের অভয় আশ্রমে পরিণত হয়েছে। যার সুবাদে সীমান্ত এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠে চোরাকারবারি মাদক ব্যাবসায়ী সিন্ডিকেট। প্রায় রাতে চোরাকারবারিরা সীমান্তের কাটাতারের উপর দিয়ে নানা কৌশলে ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু, মহিষ, চিনি, জিড়া, শাড়ি কাপড়, মাদকসহ বিভিন্ন পণ্য কতিপয় ছদ্দবেশী রাজনৈতিক নামধারী নেতা ও প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে সোর্স সেজে কালো বাজারীদের সহায়তা করে ও তাদের সাথে আতাতের মাধ্যমে দেদারসে সীমান্তে চোরাচালান বানিজ্য করে চলছিল। সীমান্তরক্ষি বাহিনী বিজিবিকে চোখে ধুলোদিয়ে চালিয়ে আসছিল এমন রমরমা চোরাচালান ব্যাবসা। রৌমারী সীমান্ত এলাকা হওয়ায় হাত বাড়ালেই যেন সহজেই মিলছে নানা নামীয় মাদকদ্রব্য। মাদকের ছড়াছড়ি হওয়ায় উপজেলা মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় সীমান্তে চোরাচালান বিষয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। সরেজমিন সুত্রে জানা যায়. উত্তরে সীমান্তের সাহেবের আলগা হতে দক্ষিণে আলগারচর, বালিয়ামারী পর্যন্ত প্রায় ১৫ টি পয়েন্ট দিয়ে সংঘবদ্ধ পাচারকারি চক্রটি নানা বাহিনীর নামধারী সোর্সদের সাথে অলিখিত চুক্তির মাধ্যমে রাতের আধারে চেরাকারবারিরা পাচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
রৌমারীতে মাঝে মধ্যে পুলিশ, র্যাব সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি চোরাকারবারিসহ আসামী আটক করে জেলহাজতে প্রেরণ করছে। মূলত সীমান্তের অতন্ত্র প্রহরি হিসেবে সীমান্ত রক্ষায় বিজিবি’র ভূমিকা মূখ্যম হলেও তাযেন আশায় গুড়ে বালি। সুত্র জানায়, চোরাচালানের মাধ্যমে আসা পণ্যের মূল্য হুন্ডির মাধ্যমে চলে যায় ভারতীয় ব্যবসায়ীদের হাতে। তাদের মাধ্যমেই দুই দেশের চোরাকারবারিরা লেনদেন করে থাকে। ভারতীয় পণ্যের জন্য বাংলাদেশের চোরাকারবারিরা ভারতে অগ্রীম টাকাও পাঠিয়ে থাকে বলে একটি সুত্রে জানা যায়।
এদিকে উপজেলা আইন শৃংখোলা মিটিংএ রৌমারী মাদকে ছয়লাফ বিষয়ে আলোচনায় স্থান পেলে নড়েচড়ে বসেন রৌমারী থানার ওসি আব্দুল্লাহিল জামান। তিনি উপজেলার সীমান্তবর্তী দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের সাহেবের আলগা, ইটালুকান্দা, খেতারচর, ছাট কড়াইবাড়ি. ধর্মপুর, শৌলমারী ইউনিয়নের কাউয়ারচর, চরবোয়ালমারী, চরের গ্রাম, নতুন শৌলমারী, গয়টা পাড়া, বেহুলারচর, রৌমারী সদর ইউনিয়নের খাটিয়ামারী, নওদা পাড়া, চাঁন্দারচর, ভুন্দরচর, ঝাউবাড়ি ও যাদুরচর ইউনিয়নে বকবান্দা, খেওয়ারচর, উত্তর আলগারচর দক্ষিন আলগারচর ও বালিয়ামারীসহ বিভিন্ন এলাকায় জোড় অভিযান চালান। এমন অভিযানের ফলে চোরাকারবারিদের পিলে কাপুনি শুরু হয়। রৌমারী থানার অসি আব্দুল্লাহিল জামান রৌমারীকে মাদকমুক্ত করতে জিরো টলারেন্স ঘোষনা করেন। রাতদিন শুরু হয় সারাষি অভিযান। অভিযানে রৌমারীর মাদক ব্যাবসায়ী তথা চোরাকারবারিরা থমকে যায় ও গাঁ ঢাকা দিতে চেষ্টা করে।
এতে থেমে থাকেনি পুলিশি অভিযান। ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ হতে ২৯ জুন ২০২৪ পর্যন্ত ৭ মাস রৌমারী থানা অফিসাস ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন কালে আটক করেন ৪০৭ বোতল ভারতীয় অফিসার চয়েজ মদ যার ওজন ১শ ৭ কেজি, যাহার মূল্য ১১ লক্ষ ৫০০ টাকা, গাজা ৫ কেজি ৪০০ গ্রাম, যাহার মূল্য ৯১ হাজার টাকা, ইয়াবা ট্যাবলেট ৬ হাজার ৮০১ পিছ, যাহার মূল্য ২০ লক্ষ ২৬ হাজার ৮০০ টাকা, একটি অটো ভ্যান জব্দ
যাহার মূল্য ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাাক। উপজেলায় ৬ টি ইউনিয়নে সক্রিয় মাদক ব্যাবসায়ী রয়েছে মামলায় ৬৭ জন।
ওয়ারেন্ট মূলে গ্রেফতারকৃত মাদক ব্যবসায়ী আটক ১৯ জন ও মাদক মামলা ৩৪ জনের নামে রুজু করা হয়েছে। পুলিশ সার্বক্ষনিক চোরাকারবারিদের বিষয়ে তৎপর।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, সীমান্তের অবৈধ ব্যবসা দেশের অর্থনীতি ও আইনশৃঙ্খলায় নেতীবাচক প্রভাব ফেলছে বলে জানান। সীমান্তে চোরাচালান বন্ধে প্রতিমাসেই আইনশৃঙ্খলা সভায় বিজিবিকে তৎপর থাকতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে মাসিক সভায় কুড়িগ্রাম ৪ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য অ্যাড. বিপ্লব হাসান পলাশ বিজিবিকে টহল জোরদারসহ সীমান্তে চোরাচালান রোধে সতর্ক থাকার কথা বলেন।