বিপ্লব সাহা খুলনা ব্যূরো :
ঈদ বাজারের একেবারে শেষের মুহূর্তেও ক্রেতাশূন্য মার্কেট শুনশান নীরবতায় গল্প গুজব করে অলস সময় পার করছে দোকানিরা মাঝেমধ্যে দুই-একটা ক্রেতা লক্ষ্য করা গেলেও উচ্চ দামের কারণে ফিরে যাচ্ছে খালি হাতে দেশের অর্থনৈতিক মন্দা রাজনৈতিক অস্থিরতা সব কিছুরই প্রভাব পড়েছে ব্যবসার উপর। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ দেশ স্বাধীনের পর থেকে মোটামুটি ব্যবসা করে আসলেও এরকম দুরবস্থার মধ্যে কখনো পড়িনি বা এরকম চিত্র কখনো নজরেও করেনি সারা বছর যেমন তেমন দুইটি ঈদ এবং হিন্দুদের পূজা পার্বণ আসলে তখন বেচাকেনা হিরক পড়ে যায় এ সময় আমাদের খাওয়ারও সময় থাকে না কিন্তু এবার তার ভিন্ন চিত্র সারাদিন বসে থেকে বিসমিল্লা করার জন্য অপেক্ষা করতে হয় অন্যান্য বছর এমন দিনে ৪০ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা বেচা বিক্রি হয়ে থাকে কিন্তু এবছর নেমে এসেছে একেবারে শূন্যর কোঠায় যার কারণে দোকান খরচই উঠানো সম্ভব হচ্ছে না দিন দিন গচ্ছিত চালান পুঁজি হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছি। ঈদ আসলে দোকান খরচ দ্বিগুণ প্রকর্মচারীদের বেতন বোনাস আনুষঙ্গিক খরচ তো রয়েছে তারপরে নিজেদের সংসার চালানোর কথা তো বাদই দিলাম ব্যবসা টিকিয়ে রাখা হয়েছে দুষ্কর আর এই পরিস্থিতির হাত থেকে কবে পরিত্রাণ পাবো তার কোন ঠিক ঠিকানা নাই। ব্যবসায়ীদের অভিযোগের সূত্র ধরে নগরীর বেশ কয়েকটি শপিংমল ঘুরে দেখা গেছে বাস্তবতার চিত্র চিরচেনা ঈদের বাজারের ভিড় তো দূরের কথা তেমন কোন ভাব প্রলক্ষিত হচ্ছে না পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের মাঝে ব্যবসা টিকিয়ে রাখার গভীর দুশ্চিন্তার কারণে কোন যৌলস নেই তাদের মুখে।
তবে নগরীর ছোট ছোট ফুটপাথের টং দোকানগুলোতে অল্প কিছু ক্রেতা লক্ষ্য করা গেলেও ক্রেতা শূন্য নগরীর বিলাসবহুল শপিংমল ও মার্কেট। আর এই অভিজাত মার্কেট শপিংমলের দোকান মালিকদের অভিযোগ প্রায় কোটি টাকা ইনভেস্ট করে বসে আছি বেচা বিক্রি নাই দৈনিক ২০ হাজার টাকা মার্কেটে সেই চিরচেনা উপচে পড়া ভিড় নাই। এর আগে রমজান ঈদ শুরু হওয়ার ১৫ দিন পূর্বে শবে বরাতের পর পর কিছু ক্রেতা মার্কেটে দেখা গেলেও রমজান শুরুর সাথে সাথে বেচা বিক্রি একদম শূন্যের কোঠায় নেমে আসার কারণে আমরা খুব হতাশার মধ্যে পড়েছিলাম।
এর আগে ২০২০ সালে করোনার কারণে ব্যবসায়িকভাবে বড় আকারে হুচুট খেয়ে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিলাম। সেই অনুপাতে আমাদের ধারণা ছিল মহামারীর দুর্যোগ কেটে গেলে ব্যবসার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এবং তারপর কিছুটা হলেও পরিবর্তন হয়েছিল কিন্তু হঠাৎ করে দেশের নির্বাচিত সরকার উধাও হয়ে যাওয়ার ওর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বৈষম্য কারণে অর্থনৈতিক ভাব একেবারে মন্দ অবস্থানে চলে গেছে যার কারণে আমরা ব্যবসায়ীরা করেছি দোদুল্যমান অবস্থার মধ্যে ব্যবসায়ীদের মাঝে চলছে নীরব চাঁদাবাজি সবকিছু মিলে ব্যবসায়ীরা একেবারেই ভালো নেই তারপরও সিজনের কথা মাথায় রেখে
বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে রমজান ও কুরবানী ঈদের আগেই পর্যাপ্ত পরিমাণে দেশি-বিদেশি সব ধরনেরই আকর্ষণীয় মাল মজুদ করেছি অথচ একদিন বাদেই ঈদ অথচ এখন বেলা তিনটা এ পর্যন্ত ৫ হাজার টাকাও সেল করতে পারিনি বলে জানিয়েছেন খুলনা কেডিএ নিউমার্কেট ফ্যাশন মেলার মালিক পলাশ ব্যাপারী।
এদিকে খুলনা নগরীর অন্যতম থান কাপড়ের মার্কেট আক্তার চেম্বার মালেক চেম্বার ও বড়বাজার এলাকার বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে সেখানে একেবারে ক্রেতা শূন্য শুনশান নিরবতা।
এ চিত্র দেখে মনেই হচ্ছে না ঈদের বাজার। পাশাপাশি দর্জির দোকানগুলোতে নেই কোনো অর্ডারের চাপ।
যা ও দুই একটি অর্ডার আছে তাও সামান্য পাঞ্জাবিতে সীমাবদ্ধ অর্ডার নেই প্যান্ট শার্ট কোট কমপ্লিট স্যুটের।
এক্ষেত্রে লক্ষ্য করা গেছে মহিলাদের পোশাক তৈরীর কিছুটা ব্যস্ততা।
তবে এবার মার্কেট শপিংমল গুলোতে উচ্চবিত্ত শ্রেণির হাতে গোনা কিছু ক্রেতা দেখা গেলেও নিম্ন মধ্যবিত্ত খরিদ্দারদের আনাগোনা খুবই কম তবে
যে সকল ক্রেতাদের মার্কেট শপিংমল গুলোতে দেখা গেছে তারা অধিকাংশই অভিযোগ করে বলছে এবার পোশাকের দাম আকাশছোঁয়া। যার কারণে বাচ্চাদের রুচিসম্মত পোশাক কিনতে পারছি না । এদিকে নগরীর নিক্সন মার্কেট রেলওয়ে মার্কেটে মশিউর রহমান মার্কেট খাজা খানজাহান আলী হকার্স মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে অন্য চিত্র। এখানে দৈনন্দিন খেটে খাওয়া নিম্ন শ্রেণীর কিছুক্রেতা লক্ষ্য করা গেলেও তারা বিভিন্ন দোকানে ঘুরে দাম শুনে ফিরে আসছে খালি হাতে আর সে সকল ক্রেতারা বলছে আমাদের আয় রোজগার সীমিত তা সত্বেও ঈদ পর্ব আসলে ছোট বাচ্চাদেরকে সাধ্যের মধ্য কিছু কাপড়চোপড় কিনে দেওয়া লাগে সেজন্য মার্কেটে এসেছি। কিন্তু যে পোশাক গত বছর কিনেছি ৬০০ টাকা সেই পোশাক এ বছর ১২ থেকে ১৩শ টাকা হওয়ায় আমরা নিরাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছি ফুটপাতের দোকানগুলোতে, কারন অন্তত ছোট বাচ্চাদের সান্তনা দেওয়ার জন্য হলেও কিছু কেনাকাটা করা লাগবে তাছাড়া বাড়িতে বৃদ্ধা বাবা-মা রয়েছে আমরা নিজেদের জন্য কিছু না কিনলেও তাদের অন্তত কিছু দেওয়া লাগে। তারপরে খেয়ে বেঁচে থাকার দ্রব্যমূল্যর যে পরিমাণের দাম বেড়েছে তাতে করে খাবো না পোশাকাদি কিনব। সারা বছর যেমন তেমন ঈদের পর্ব আসলে খরচ দ্বিগুণেও কুলানো যায় না। এখন বর্তমান আয় উপার্জন পরিস্থিতির উপরে আমাদের মতন মানুষদের জীবনে ঈদ উৎসব পর্ব আসা মানেই মরার উপরে খড়ার ঘা।
পাশাপাশি খুলনা আক্তার চেম্বার মার্কেট ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ শামসের আলী মিন্টু বলেন আমার মার্কেটের প্রতিটা দোকানে দোকান মালিকরা প্রায় কোটি টাকা ইনভেস্ট করে মাল মজুদ করেছে কিন্তু সেই তুলনায় বেচাকেনা নাই।
অথচ এখানে শহরের উচ্চবিত্ত থেকে নিম্ন শ্রেণীর সকল ধরনের ক্রেতারা পোশাক তৈরী ও কাপড় কেনা কাটার জন্য ভিড় জমাতে দেখাগেলেও এ বছর সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র টেইলারিং দোকানগুলোতে কোন অর্ডারের চাপ নাই বেচাকেনার ক্ষেত্রে শুন্যের কোঠায়।