নজরুল ইসলাম:
সড়ক উঁচু-নিচু, খানাখন্দে ভরপুর, পিচ উঠে চৌচির কয়েক ফুট যেতে না যেতেই রাস্তায় ফাটল দেখা যাচ্ছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ থেকে কুন্দইল ও বারুহাসের রাস্তার প্রকল্প। প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয়ে রাস্তাটির এখন বেহালদশায় পরিণত হয়েছে।এদিকে নিম্নমানের কাজ করা হলেও যাচাই-বাছাই ছাড়াই বিলও পরিশোধ করা হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলী, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের যোগসাজশে এমন অপকর্ম চালিয়েছে বলে এলজিইডিসহ একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, আরটিআইপি প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২২ সালে তাড়াশ থেকে কুন্দইল ও বারুহাস রাস্তার কাজ বাস্তবায়ন করে তূর্ণা এন্টার প্রাইজ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এতে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
রাস্তাটিতে নিম্নমানের কাজ নিয়ে অভিযোগ উঠলে শুরু হয় তদন্ত। যেখানে অনিয়মের নানান দিক উঠে আসে।
তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, রাস্তার মাটির কাজ, ব্যবহৃত বালুর মান, খোয়ার ব্যবহার ও পরিমাপ কোনো কিছুই ঠিক নেই। এছাড়া গার্ড পোষ্ট, কিলোমিটার পোষ্ট, সিসি ব্লক,পেলাসেডিং, নামফলক এমনকি রাস্তার দৈর্ঘ্যের পরিমাপেও কম পায় তদন্ত কমিটি। কাজ না করেই প্রায় অর্ধকোটি টাকার বিল উঠানোর বিষয়টিও উঠে আসে তদন্তে। বিল প্রদানে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়ন নেওয়ার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি।
এ বিষয়ে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে বিল উঠনোর ঘটনায় এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ঠিকাদার আলমসহ একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা যায়, খাল খননে অনিয়ম ও দুর্নীতি, তাড়াশ থেকে বারুহাস রাস্তার নিম্নমানের কাজ এমনকি একাধিক কাজের প্রত্যয়নে অনিয়ম নিয়মে সংবাদ প্রকাশ হলে পাবনার তত্ত¡াবধায়ক অফিসে বদলি করা হয় নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলামকে। কিন্তু বিশেষ ব্যবস্থাপনায় হঠাৎ বদলি স্থগিত করা হয়। এরপর থেকেই আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম।
এ বিষয়ে পাবনার আঞ্চলিক অফিসের তদন্ত কর্মকর্তা নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম জানান, গত ২৫ সেপ্টেম্বর এই কাজের তদন্ত প্রতিবেদন প্রধান প্রকৌশলী এবং অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর কাছে জমা দেয়া হয়েছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখবেন।
অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জুলফিকার আলী জানান, রাস্তাটির নিম্নমানের কাজের বেশকিছু ছবি ও ভিডিও পেয়েছি। স্থানীয় পর্যায় থেকে অনেক অভিযোগও আসছে। এ ঘটনায় বিভাগীয় মামলা চলমান। এছাড়া প্রকৌশলী সফিকুল ইসলামের একাধিক অনিয়মের তদন্ত করছে দুদক।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২২মার্চ সড়কের নিচের অংশের খোয়া এবং ইট নিম্নমানের হওয়ায় নির্মাণকাজ নিয়ে এলাকাবাসী ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে তর্কবিতর্ক শুরু হয়। পরে স্থানীয়দের চাপের মুখে বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। পরে নির্বাহী প্রকৌশলীর সহযোগিতায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পুনরায় বাস্তবায়ন করে ।
এলজিইডির হিসাব রক্ষক আবু সাঈদের সহযোগিতায় প্রত্যয়ন ছাড়াই চূড়ান্ত বিল প্রদান করা হয়। এদিকে সহকারি প্রকৌশলী সৌরভের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ এনে কুড়িগ্রাম ও হিসাবরক্ষক আবু সাঈদকে নওগাঁয় বদলি করা হয়।