নজরুল ইসলাম, জেলা প্রতিনিধি:
ভুয়া ভোটার দিয়ে চলতি মাসের ১৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিরাজগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার ২০২৩সালের কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচন। এতে মানা হচ্ছেনা গঠণতন্ত্র। বিগত কমিটির যোগসাজসে এ নির্বাচন হতে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অপরপক্ষ। ২অক্টোবর ভুয়া ভোটার বাতিল ও নির্বাচন স্থগিত চেয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য মো. জাকির হোসেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ও ক্রীড়া সংস্থার বিভাগীয় সভাপতি ড. মো. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বরাবর একটি চিঠি প্রদান করেছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে জরুরী তদন্তপূর্বক সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসককে মতামত দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, জেলা ক্রীড়া সংস্থার গঠণতন্ত্র (২০১৪ সালের সংশোধিত গঠণতন্ত্র) ৭.১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ক্লাব এ্যাফিলিয়েশনের(অধিভুক্তি) জন্য ক্লাব বা প্রতিষ্ঠানের গঠণতন্ত্র, নীতিমালা, ঠিকানা, কার্যনির্বাহী পরিষদ, ব্যাংক হিসাব ও নিয়মিত খেলাধুলা থাকা আবশ্যক। অথচ, অভিযুক্ত ওইসব ক্লাব বা প্রতিষ্ঠানের এগুলোর কিছুই নেই।
জানা যায়, জেলা ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন ফিফা’র নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত একটি পৃথক সংস্থা। যার পৃথক পৃথক কার্যনির্বাহী পরিষদ থাকা সত্বেও ক্রীড়া পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন জেলা ক্রীড়া সংস্থায় এ্যাফিলিয়েশনের অনুমোদন ছাড়াই চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় ৯টি ক্লাবের প্রতিনিধিকে সংযুক্ত করে দ্বৈত ভোটার করা হয়েছে। যা গঠণতন্ত্র পরিপন্থী।
এছাড়াও, বিগত দিনে সিরাজগঞ্জে হ্যান্ডবলের খেলাধুলা অনুষ্ঠিত না হলেও একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালাকে কেন্দ্র করে প্রথম বিভাগ লীগ দেখিয়ে এ্যাফিলিয়েশনের অনুমোদন ছাড়াই ৮টি প্যাড সর্বস্ব হ্যান্ডবল ক্লাবের প্রতিনিধিকে ভোটার করা হয়েছে। সবমিলে ফুটবল ক্লাবের ৯টি ও হ্যান্ডবল ক্লাবের ৮টি প্রতিনিধিকে সংযুক্ত করে ৫১জনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
অভিযুক্ত ফুটবল ক্লাবগুলো হলো- ইয়াং স্টার ক্লাব, জয়নাল আবেদীন তালুকদার স্মৃতি ফুটবল একাডেমী, মাছুমপুর ক্রীড়া চক্র, কাজিপুর স্পোর্টিং ক্লাব, শামস ফুটবল একাডেমী, শিয়ালকোল যুব সংঘ, উল্লাপাড়া ইয়াং স্টার ক্লাব, সলঙ্গা ক্রীড়া সংঘ ও মাছুমপুর ক্রীড়া চক্র ফুটবল একাডেমী।
আর হ্যান্ডবল ক্লাবগুলো হলো- দি সেন্টার ক্লাব, সিটি ক্লাব, শাপলা ইয়াং স্টার ক্লাব, সিরাজগঞ্জ ক্লাব, মির্জা মোরাদুজ্জামান স্মৃতি সংসদ, সেকেন্দার স্মৃতি সংঘ, কমিউনিটি ফ্রেন্ডস ক্লাব ও কৃষ্টি কবিতা ক্লাব।
এর আগে চলতি বছরের ২০ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনার বরাবর একটি অভিযোগ দাখিল করেন, সমবায় সংস্থা নামে একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মো. ইমরান হোসেন। গত ২২ সেপ্টেম্বর এ ব্যাপারে আপত্তি শুনানী হলেও ১৭জন অবৈধ ভোটারের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৭ সালের মার্চ মাসে জেলা ক্রীড়া সংস্থার চার বছর মেয়াদি কমিটি হয়েছিল। যার মেয়াদ শেষ হয় ২০২১ সালের ১৯ ফেব্রæয়ারি। বিগত কমিটির অধিনে পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগ লীগ আয়োজনে ব্যর্থ হওয়ায় তৎকালীন জেলা প্রশাসক নিজ উদ্যোগে দ্বিতীয় বিভাগ হ্যান্ডবল ও প্রথম বিভাগ কাবাডী লীগ পরিচালনার উদ্যোগ নেন। পরে, রেজুলেশন করে খেলার সময়সূচী নির্ধারণ করা হলেও তৎকালীন কার্যকরী কমিটি নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। যে কারণে ওই খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হয়নি। নিয়মিত খেলাধুলা পরিচালনা না করা, ভোটার বৃদ্ধিতে অনীহা ও বিগত কার্যকরী কমিটির উদ্যোগ না থাকার ফলে পর্যাপ্ত ভোটার করতে পারেনি। যে কারণে সদস্য বৃদ্ধিতে নিয়মনীতি অনুসরণ না করে ফুটবল ক্লাবের ৯জন ও হ্যান্ডবল ক্লাবের ৮জন প্রতিনিধিকে উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এসব বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, জেলা প্রশাসক বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন। তদন্তাধীন বিষয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না বলে জানান তিনি।
সিরাজগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচনের কমিশনার ও সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, বিগত কমিটি রেজুলেশন আকারে যে ভোটার তালিকা দিয়েছে সেই অনুযায়ী চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে, অভিযোগেরভিত্তিতে তদন্ত চলছে। তদন্তের পর যে নির্দেশনা দেওয়া হবে সেই অনুয়ায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) গনপতি রায় বলেন, বিষয়টি তদন্তনাধীন রয়েছে।