বিপ্লব সাহা খুলনা ব্যুরো:
মুক্তিযোদ্ধার আঞ্চলিক কমান্ডের এক তথ্য প্রতিবেদনে উঠে এসেছে আওয়ামী লীগের দুই হাইব্রিড নেতা একজন সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক আর একজন জেলা প্রশাসকের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ দুজনেই মুক্তিযুদ্ধের সনদ ভুয়া বলে প্রমাণিত হওয়ার কারণে তাদের দুজনেরই মুক্তিযুদ্ধের সনদ বাতিলের সুপারিশ করে কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের নিকট সুপারিশ করবেন আঞ্চলিক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, এ বিষয়ে তথ্য প্রতিবেদনে যা জানা গেছে তা হচ্ছে খুলনা আওয়ামী লীগের নেতা তালুকদার আব্দুল খালেক ও শেখ হারুনর রশিদের মুক্তিযুদ্ধের সনদ সম্পূর্ণ ভুয়া যা আওয়ামী লীগেরই আমলে নিজস্ব ক্ষমতাবল ও স্বজন প্রীতি আধিপত্যর সুফল হিসেবে তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ,ক,ম মোজাম্মেল হক অধিক ভালোবাসার খাতিরে এই দুজনকে মুক্তিযোদ্ধা সনদ প্রদান করেন। তবে বিষয়টি মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ডার ও খুলনার আঞ্চলিক কমান্ডার সহ মুক্তিযুদ্ধের ক্রান্তিলগ্ন ও বিজয়ের পরবর্তী সময়ের ইতিহাস যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে এই দুজনের ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদের কথা ফলে দুজনেরই মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের জন্য কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলে সুপারিশ করেছে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভায় এ সুপারিশ করা হয়। আওয়ামী লীগ জামানায় তারা এ সনদ গ্রহণ করে। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে রণাঙ্গনে সশস্ত্র যুদ্ধে তাদের সম্পৃক্ততা ছিল না। উভয়ই বাঙালি জাতীয়তাবাদের দর্শনে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। একাত্তরের মার্চে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ যুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে, শহরে দেওয়াল লিখনের উদ্যোগ নেয়। তৎকালীন স্টেট ব্যাংকের মোড় (আজকের বাংলাদেশ ব্যাংক) নগর ভবন ও পিকচার প্যালেস মোড়ে দেওয়াল লিখনের অংশ নেওয়া ছাত্রলীগ কর্মীদের সাথে তালুকদার আব্দুল খালেকের সম্পৃক্ততা ছিল। এসময় তিনি সক্রিয় ছিলেন। ২৫ মার্চ গণহত্যার পর শহর ছেড়ে বাগেরহাট মহকুমার রামপাল থানার মল্লিকেরবেড় পৈতৃক বাড়িতে অবস্থান করে গৃহ শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বিজয়ের পর শহরে ফিরে আসেন। তিনি নিজে কখনও দাবি করেননি যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তার শুভাকাক্সক্ষীরা মুক্তিযুদ্ধের সনদ নেওয়ার জন্য তদবির করে।
মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত আ.ক.ম মোজাম্মেল হোসেন স্বাক্ষরিত সনদ তিনি সংগ্রহে রাখেন। এম এম সিটি কলেজের প্রাক্তন ছাত্রদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে স্মরণিকায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথা এম এম সিটি কলেজ শিরোনামের প্রবন্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় তার নাম নেই। তিনি এবং শেখ হারুন এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন ছাত্র। মুজিববাহিনীর খুলনাস্থ আঞ্চলিক অধিনায়ক এ্যাডভোকেট স.ম বাবর আলী বিভিন্ন সময়ে সামাজিক অনুষ্ঠানে বলেন, ৬দফা দেওয়ার পর শেখ হারুন ছাত্রলীগ ত্যাগ করেন। ১৯৬৬ সালের ৭জুন ৬দফা উত্থাপন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের ৯মাস রাণঙ্গনের সাথে তার সম্পৃক্ততা ছিল না। জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়কের উদ্ধৃতি দিয়ে সিটি কলেজের স্মরণিকায় এক প্রবন্ধে বলা হয়, শেখ হারুন যুদ্ধ চলাকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প পরিদর্শন করতেন মাত্র। তিনিও তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হোসেন স্বাক্ষরিত সনদ গ্রহণ করেন।
যুদ্ধে অংশ না নিয়ে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেত্রী অধ্যাপিকা হাসিনা বানু শিরিনও সনদ গ্রহণ করেন। পাক জামানায় তিনি অগ্নিকন্যা নামে পরিচিতি পান। ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপার মনোনয়নে খুলনা-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য ও হুইপ নির্বাচিত হন। তার মৃত্যুর পর সন্তান ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা ভোগ করছেন। খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের গর্বিত ছাত্রীদের তালিকায় তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সার্কিট হাউজে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক উপদেষ্টার সাথে খুলনা জেলা ও নগর সংসদের কর্মকর্তারা সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা আহ্বায়ক স্থানীয় অমুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি বলেন, অমুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে দাওয়াত না করা এবং তাদের জানাজায় অংশ না নিতে জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়। বিধি অনুযায়ী অমুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে তিনজনের লিখিত অভিযোগ নির্ধারিত ফরমে প্রশাসনের মাধ্যমে দাখিল করতে পরামর্শ দিয়েছেন।