ইয়াছিন আলী ইমন
কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় ব্রহ্মপুত্রের তাণ্ডবে সর্বস্বান্ত হচ্ছে নদীপারের মানুষ। দুই সপ্তাহ ধরে অব্যাহত ভাঙনে চিলমারী ইউনিয়নের শাখাহাতি, মনতলা ও গাজির পাড়া এলাকার প্রায় ৯০টি পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে। সহায়-সম্বল হারিয়ে এসব পরিবার সাত থেকে ১০ দিন ধরে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে। গত কয়েক দিনের ঝড়বৃষ্টিতে তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই।তবে তাদের খবর নিতে প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কেউ আসেননি বলে অভিযোগ করেছে তারা।
এদিকে ভাঙনের কবলে পড়ে তিনটি বিদ্যুতের খুঁটি নদীগর্ভে চলে গেছে। ক্ষতির মুখে পড়েছে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পল্লী বিদ্যুতের সাবমেরিন প্রকল্প। এতে বিদ্যুিবচ্ছিন্ন রয়েছে কয়েকটি এলাকা।সরেজমিন গিয়ে নদীভাঙনের কারণে ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ায় খোলা আকাশের নিচে থাকা পাঁচ বছরের শিশু ফারিয়াকে হাড়-কাঁপানো জ্বরে থরথর করে কাঁপতে দেখা যায়। অভাবের কারণে একমাত্র সন্তানের চিকিৎসাও করতে পারছেন না বাবা ফিরোজ মিয়া। একই কথা জানান রুপালি বেগমও। রোদ-বৃষ্টির কারণে তাঁর তিন বছরের শিশু রোকাইয়া জ্বরে ভুগছে।স্থানীয়দের অভিযোগ, গত দুই সপ্তাহ ধরে শাখাহাতি, মনতলা ও গাজিরপাড়া এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদ তাণ্ডব চালিয়ে এলাকার মানুষকে সর্বস্বান্ত করে ফেললেও স্থানীয় প্রশাসনসহ দেখা মেলেনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের।শুরু থেকে পাউবো ভাঙন রোধে কাজ করলে এমন পরিস্থিতির শিকার হতো না বলেও আক্ষেপ করেন তাঁরা। তবে পাউবো বলছে, তাদের হাতে প্রকল্প না থাকায় ভাঙন রোধে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।শাখাহাতি এলাকার নয়া মিয়ার স্ত্রী হজেদা বেগম বলেন, ‘নদী বাড়ির কাছত (কাছে) আসছে। ঘরবাড়ি ভেঙে কোনো রকম আছি।কোথাও যাওয়ার জায়গা নাই। দুটা ছোট বাচ্চা নিয়ে পাঁচ-ছয়দিন ধরে খেয়ে না-খেয়ে খোলা আকাশের নিচে আছি। বৃষ্টি আসলে অন্যের ঘরে যাই।মনতলা এলাকার বাসিন্দা আকবর আলী জানান, ৯ একর জমির মালিক ছিলেন তিনি। নদী ভেঙে তাঁকে ফকির করে দিয়েছে।চিলমারী ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন,দুই সপ্তাহ ধরে শাখাহাতি, মনতলা ও গাজির পাড়া এলাকায় তীব্র ভাঙন শুরু হয়। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরে জানানো হলেও ভাঙন রোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে এসব এলাকার প্রায় ৯০টি পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লা আল মামুন বলেন,প্রকল্প না থাকায় ভাঙন রোধে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।ইউএনও রাফিউল আলম বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।