আব্দুল গাফ্ফার
শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
বগুড়ার শেরপুরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর কাম অফিস সহকারি সোলায়মান আলী। পদে খুব বড় কোনো কর্মকর্তা না হলেও অফিসটিকে দীর্ঘদিন ধরে নিজের কব্জায় রেখেছেন তিনি। এতে করে তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন এখানে সেবা নিতে আসা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। কারণ টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেন না ওই অফিস সহকারি। এমনকি ঘুষ না দিলে প্রতিষ্ঠানের কোনো ফাইলও নড়ে না।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারি চাকরি বিধি লঙ্ঘণ করে একুশ বছর ধরে একই কর্মস্থলে চাকরি করছেন অফিস সহকারি সোলায়মান আলী। অথচ বিধি অনুযায়ী একজন সরকারি কর্মকর্তা একই কর্মস্থলে টানা তিন বছরের বেশি সময় থাকতে পারবেন না। কিন্তু এসব নিয়মের কোনো বালাই নেই তার কাছে। ওই অফিস সহকারির বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও বরাবরেই রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই তার খুঁটির জোর কোথায় এনিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে একই অফিসে কর্মরত থাকায় তার অন্যায় দাবি ও অসৎ আচরণে ক্ষুব্ধ শিক্ষক-কর্মচারীরা এবার সোচ্চার হয়েছেন। সেইসঙ্গে ওই অফিস সহকারি হাত থেকে মুক্তি পেতে বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত ২০০২ সালের অক্টোবর মাসে শেরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর কাম অফিস সহকারি পদে যোগদান করেন সোলায়মান আলী। এরপর থেকে অদ্যবধি দীর্ঘ একুশ বছর একই কর্মস্থলে রয়েছেন। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। বিশেষ করে শিক্ষক-কর্মচারীদের জিম্মি করে হাতিয়ে নিচ্ছিলেন মোটা অঙ্কের টাকা। তার দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকার করলেই হয়রানির শিকার হতে হয় তাদের।
অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি নিজেকে একজন ক্ষমতাধর কর্মকর্তা মনে করেন। তাই অফিসে বসেই ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকেন সোলায়মান আলী। সেইসঙ্গে অর্থের বিনিময়ে অফিসের কম্পিউটার ব্যবহার করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যানবেইস জরিপ, অনলাইন এমপিও আবেদনসহ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন তথ্য এন্টির কাজ করেন। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাজের নামে পাসওয়ার্ড গ্রহণ করে পরবর্তীতে তা পরিবর্তন করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। এই অফিস সহকারি অসৎ আচরণে উপজেলার শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান না হলে যে কোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি তৈরী হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হয়েছে ওই অভিযোগে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন অফিস সহকারি কাম ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মো. সোলায়মান আলী, তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, একটি কু-চক্রি মহল আমার প্রমোশন বাধাগ্রস্ত করার জন্য এই মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন। যা সম্পুর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এছাড়া অচিরেই এই কর্মস্থল থেকে চলে যাবেন বলেও দাবি করেন তিনি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে দেওয়া অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ইতিমধ্যে বিষয়টি তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই অভিযোগগুলো তদন্তে কমিটি করা হবে। সেইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।