মোকছেদুল ইসলাম :
হঠাৎ করেই ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে উত্তরের জেলা নওগাঁ। বেড়েছে শীতের তীব্রতা। ঘনকুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় হাড় কাঁপানো শীতে জনজীবন একেবারেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রায় ১সপ্তাহ দেখা নেই সূর্যের। আবার মাঝে মধ্যে হিমেল বাতাস শীতের তীব্রতাকে বাড়িয়েছে দ্বিগুন। আজ রবিবার (১৪ জানুয়ারি) নওগাঁর বদলগাছীতে সর্বনিন্ম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০দশমিক ৩ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত শনিবার (১৩ জানুয়ারি) তাপমাত্রা ছিল ৮দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এই শীত মৌসুমে নওগাঁর সর্বনিন্ম তাপমাত্রা ছিল। বিষয়টি মুঠোফোনে নওগাঁ প্রতিনিধিকে নিশ্চিত করেছেন বদলগাছি আবহাওয়া অফিসের টেলিপ্রিন্টার অপারেটর আরমান হোসেন।
আরমান হোসেন বলেন, এখন শৈত্য প্রবাহ চলছে। আরও দুই তিন দিন থাকতে পারে। এছাড়া এই তাপমাত্রা কমতে পারে। নওগাঁ ও তার আশেপাশের অঞ্চলগুলো আরো কয়েক দিন ঘনকুয়াশায় ঢাকা থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
এদিকে গতকালের চেয়ে তাপমাত্রা বাড়লেও শীতের অনুভূতি কিন্তু কমেনি, বরং দিন দিন এর তীব্রতা বাড়ছে। দিনের বেলাতেও যানবাহনগুলো লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। ঘন কুয়াশায় কোন কিছু স্পষ্ট দেখা না যাওয়ার কারণে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে মহাসড়কসহ অন্যান্য সড়কে চলাচলরত বাস, ট্রাক, ভটভটি, অটোচার্জারসহ সকল যানবাহন হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। অপরদিকে চরম বেকায়দায় পড়েছে খেটে-খাওয়া দিনমজুর শ্রেণির মানুষরা। শীতের তীব্রতা বেশি হওয়ার পরও খেটে-খাওয়া মানুষরা কাজে ফিরছে। হঠাৎ করে ঘন কুয়াশা আর শীত পড়ার কারণে চরম বিপাকে পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরাও।
গত কয়েকদিন থেকেই আকাশ মেঘলা। সঙ্গে আছে ঘন কুয়াশা। ঘড়ির কাটায় দুপুর সাড়ে ১২ টা পার হতে চললো। এখনও দেখা মিলেনি সূর্যের মুখ। এতে বেড়েছে শীতের প্রকোপ। সন্ধ্যা নামলে পথঘাট, হাট-বাজার জনশূন্য হয়ে পড়ে। রাতে তাপমাত্রা আরও কমে যায়। এতে স্বাভাবিক কাজ কর্ম বাধাগ্রস্থ হওয়ায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে দিন এনে দিন খাওয়া কর্মজীবী ও শ্রমজীবী মানুষদের। অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। নিম্ন আয়ের মানুষরা গরম কাপড়ের জন্য ছুটছেন ফুটপাথের দোকানগুলোতে।
জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, একটু গরমের উষ্ণতার জন্য বয়স্করা কাঁথা বা কম্বল জড়িয়ে গুটিসুটি হয়ে বসে আছেন। গবাদি পশুর গায়ে চট জড়িয়ে রেখেছেন। স্থানীয় হাসপাতালে বাড়ছে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা। এদের মধ্যে অধিকাংশই আমাশয়, নিউমোনিয়া, ডায়ারিয়া ও সর্দি জ্বড়ে আক্রান্ত।
জেলার রাণীনগর উপজেলা থেকে অটোরিকসা চালাতে এসেছেন তপন সরকারসহ আরও অনেকে। কথা হয় তাদের সাথে। তারা জানান, কুয়াশার কারণে অনেক সময় আমাদের লাইটেও কাজ হয়না। তেমন কিছু দেখা যায়না। যদি কোনো দূর্ঘটনা ঘটে এই ভয়ে। তারপরও বের হতে হয়, পেটের তাগিতে। বসে থাকলে তো আর পেট চলবে না। তাই বাধ্য হয়ে এই তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে বের হতে হয়েছে।
গত শনিবার রাত সাড়ে নয়টা। হঠাৎ করে কুয়াশায় ঢাকা পড়ে চারেদিক। কথা হয় মোটর সাইকেল আরোহী সুজন সরকার ও রনির সাথে। তারা দুজনে রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলা থেকে এসেছিলেন। হঠাৎ কুয়াশায় ঢাকা পড়ে যাওয়ার কারণে তারা বলে উঠলেন এটা কি হলো, এখন যাবো কিভাবে?