বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
খুলনা জেলার দক্ষিণাঞ্চল ডুমুরিয়া, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, চালনা, কয়রা বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে হাজার হাজার হেক্টর আবাদি অনাবাদি জমিতে বেশ কয়েক বছর ধরে স্থানীয় কৃষকরা তরমুজের চাষ করে প্রথম কয়েক বছর সাফল্যতার সাথে স্বাবলম্বী হলেও গত দুই তিন বছর যাবৎ লোকসানের কারণে স্বপ্ন ধূসর হচ্ছে । সময় মতন জমি প্রস্তুুত বীজ বপন আগাছা পরিষ্কার কীটনাশক সার সবকিছু প্রয়োগ করে ও যেন সফল্যতা ধরাছোঁয়ার নাগালের বাইরেই থেকে যাচ্ছে। তবুও এই এলাকার তরমুজ চাষীরা এবারও মাঠের পর মাঠ জুড়ে প্রত্যাশা প্রাপ্তির স্বপ্ন বুকে ধরে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে ধারদিনা কর্জ করে হলেও প্রাকৃতিক সকল দুর্যোগকে মাথায় রেখে ঝুকেছে তরমুজ চাষে। ইতোমধ্যে মাঠজুড়ে সবুজ পাতার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে কৃষকের উজ্জ্বল সম্ভাবনা। আর এরই মধ্যে রমজানকে লক্ষ্য করে বাজার সয়লাব হয়েছে এই এলাকার তরমুজ তবে মৌসুম অনুপাতে ফসল পক্ত না হলেও রোজাদারদের চাহিদা মেটাতে জেলার ফল ব্যবসায়ীরা আগাম কৃষকদের মাঠ থেকে কেটে আনছে ছোট মাঝারি সাইজের আধা পাকা তরমুজ। তবে ফলের রং গারো লাল ও মিষ্টি স্বাধ না হলেও শখ করে কিছুটা বাড়তি দাম দিয়ে হলেও বছরের নতুন ফল কিনছে রোজদাররা। ফলে প্রথম প্রথম কৃষকরা কিছু লাভের মুখ দেখলেও ভবিষ্যৎ কতটা সম্ভাবনা তা নির্ভর করছে আবহাওয়া ও দেশের বিভিন্ন জেলা পর্যায়ের পাইকার ফইরাদের ন্যায্য দামের ওপর।
এক্ষেত্রে এ অঞ্চলের কৃষিবিদরা জানিয়েছেন মূলত বছর পনেরো আগেও এই এলাকায় কখনো তরমুজ চাষে কৃষকদের এতটা বেশি আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়নি।
তবে সিডর আয়লার মতন বড় বড় দুর্যোগ লবণ পানির কবলে বছরের পর বছর রবিশস্য নষ্ট হওয়ার ফলে ভাঙ্গন কবলিত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা কোন উপায়ান্ত না পেয়ে অবশেষে জীবন জীবিকা বাঁচানোর তাগিদে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ও স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তরের কর্তাদের পরামর্শ নিয়ে তরমুজ চাষের দিকে মনোযোগী হয় চাষিরা। তবে বেশ কয়েক বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ ফসলটি চাষ করে লক্ষ্যমাত্রার থেকেও বেশি লাভবান হয়ে সফলতার মুখ দেখে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে কৃষকদের।
পাশাপাশি বহিরাগত জেলার পাইকার খরিদ্দারদের আনাগোনাও ছিল লক্ষণীয় এবং প্রধান সড়কের দুই ধার দিয়ে সারিবদ্ধ থাকতো পাইকারদের তরমুজ বহনকারী ট্রাক এবং নদীতে নোঙ্গর করতো অসংখ্য ট্রলার ফলে চাহিদা মত মূল্য পেতো কৃষকরা তাই পরবর্তী বছরে বেশি পরিমাণে জমিতে আবাদ করার চিন্তা ধারার কোন বিকল্প না রেখে অনেক পতিত জমিতে ও তরমুজ চাষের আগ্রহ বাড়িয়ে লাভের আশায় থাকলেও পাশ্ববর্তী বরিশাল বিভাগের অন্তর্গত কুয়াকাটা এলাকায় কৃষকরা একটু আগেভাগে প্রক্রিয়া অনুযায়ী তরমুজ চাষ করার ক্ষেত্রে গেল দুই তিন বছর যাবত অনেকাংশেই ক্ষতির মুখে পড়েছে খুলনা অঞ্চলের তরমুজ চাষিরা। কারণ বরিশাল কুয়াকাটা এলাকার মাটির উর্বরতা ও আগাম চাষের ফলে ফলন ভালো হয় এবং সেখানকার ফল সুস্বাদু ও বড় সাইজ হওয়ার কারণে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় রাজধানীর সহ দেশের বেশ কিছু জেলার পাইকার ক্রেতারা সময় বাঁচানো ও পত্তায় পোষানো দুদিকেই লক্ষ্য রেখে খুলনা অঞ্চলের অধিকাংশ ক্রেতারাই তরমুজ ব্যবসার মোকাম করছে বরিশাল ও কুয়াকাটা এলাকা থেকে।
তাছাড়া তরমুজের প্রকারভেদে বিশ্লেষণ করতে গেলে খুলনা অঞ্চলের তরমুজ সাইজে ছোট মিষ্টতা কম হওয়ার কারণে পরপর কয়েক বছর খুলনা অঞ্চলের তরমুজ চাষীদের অধিকাংশ ফল ক্রেতার অভাবে মাঠে থেকেই নষ্ট হয়ে গো খাদ্যয়পরিণত হয়েছে ফলে তাদের লক্ষ লক্ষ টাকা লোকশান গুনতে হচ্ছে।