সাব্বির আকাশঃ
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় যথাযোগ্য মর্যাদায় ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আনুষ্টানিক ভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পন ও আলোচনা সভা অনুষ্টিত হয়।
তেলিয়াপাড়া জা বাগানের স্মৃতিসৌধের সামনে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা একেএম ফয়সলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোছাঃ জিলুফা সুলতানা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোঃ আক্তার হোসেন বিপিএম, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মাধবপুর-চুনারুঘাট সার্কেল) নির্মলেন্দু চক্রবর্তী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের নেতা গৌর প্রসাদ রায়, প্রফেসর আব্দুর জাহের, সুকোমল রায়, কায়সার চৌধুরী, আব্দুল সালাম, শাহজাহানপুর ইউ/পি চেয়ারম্যান পারভেজ হোসনে চৌধুরী প্রমুখ।
এর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও ‘৭১-এর বীর শহীদদের স্মরণে স্মৃতিসৌধে জেলা মোছাঃ জিলুফা সুলতানা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম ফয়সল পুষ্পস্তক অর্পণ করেন। উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা দাবি করে বলেন স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও ঐতিহাসিক এ স্থানটি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। অথচ এই স্থানটিকে সংরক্ষণ করে একটি মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর নির্মাণ করলে নতুন প্রজম্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে।
উল্লেখ্য যে ১৯৭১ সালের ৪ ঠা এপ্রিল হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ম্যানেজার বাংলোয় স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উর্ধ্বতন ২৭ সেনা কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এ বৈঠকেই দেশকে স্বাধীন করার শপথ এবং যুদ্ধের রণকৌশল গ্রহন করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গণকে ভাগ করা হয় ১১টি সেক্টর ও ৩টি বিগ্রেডে। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এমএজি ওসমানী পিস্তলের গুলি ছুড়ে আনুষ্টানিক ভাবে মুক্তিযুদ্ধে শুভ সূচনা করেন। এখান থেকেই মুক্তিবাহিনী গঠন, মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্টানিক সূচনা ও রাজনৈতিক সরকার গঠনের প্রস্তাব তথা মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক প্রতিটি গুরুত্বর্পূন বিষয়ের প্রথম পাঠের অনুশীলন হয় এখানেই।
২৮ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ইতিহাসের অমূল্য উপাদান সেখানে বিদ্যমান। সমরক্ষেত্র হিসাবেও এ স্থানের রয়েছে অতুলনীয় গৌরব-গাথা। ২৫ মার্চ মধ্য রাতে পাক বাহিনী কর্তক গণহত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন বাহিনীর বাঙ্গালী অফিসার ও সদস্যরা যার যার অবস্থান থেকে বিদ্রোহ করে শক্রুর মোকাবেলা করতে থাকে।
সুসজ্জিত বিশাল পাকিস্থানী বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করা সহজসাধ্য ব্যাপার ছিল না। এর জন্য প্রয়োজন ছিল একটি সরকার ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অধীন সম্মেলিত সামরিক প্রয়াস। এরই আলোকে ১৯৭১ সালের ৪ঠা এপ্রিল ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ম্যানেজার বাংলো ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উর্ধ্বতন ২৭ সেনা কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এক বৈঠকেই দেশকে স্বাধীন করার শপথ এবং যুদ্ধের রণকৌশল গ্রহন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গণকে ভাগ করা হয় ১১টি সেক্টর ও ৩টি বিগ্রেডে।
কর্নেল এমএজি ওসমানী পিস্তলের গুলি ছুড়ে আনুষ্টানিক ভাবে মুক্তিযুদ্ধের শুভ সূচনা করেন। তেলিয়াপাড়াকে প্রথম অস্থায়ী সেনা সদর গন্য করে মুক্তিযোদ্ধ কালে মুক্তিবাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের নীতি-নির্ধারণী সর্বমোট ৩টি সভার মধ্যে প্রথম দুটি সভা এখানেই অনুষ্টিত হয়। ওই বৈঠকে তৎকালীন কর্ণেল অব(ঃ) এম.এ.জি উসমানী, লেঃ কর্ণেল এম.এ রব, লেঃ কর্ণেল সালাউদ্দিন মোহাম্মদ রেজা, মেজর কে.এম শফিউল্লাহ্, মেজর জিয়াউর রহমান, মেজর খালেদ মোশাররফ, মেজর নূরুজ্জামান, মেজর শাফায়াত জামিল, মেজর মঈনুল হোসেন চৌধুরী, মেজর নূরূল ইসলাম, মেজর আবু উসমান, মেজর সি.আর দত্ত, ব্রাহ্মনবাড়ীয়ার বিদ্রোহী মহকুমা প্রশাসক কাজী রকিবউদ্দিন, ভারত সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে বিএসএফ এর পূর্বাঞ্চলীয় মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার ভি,সি পান্ডে এবং আগরতলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ওমেস সায়গল প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।