বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
আমার ৭৮ বছর বয়সে কত বড় বড় ঘূর্ণিঝড় সিডর আইলা আম্ফান ঝড়-বৃষ্টি জলোচ্ছ্বাস বন্যা দেহিছি কিন্তু এইরকম একটানা সময় ধরে যেরম ঝড় সেরকম বাতাস সেরকম বৃষ্টি তার সাথে জলোচ্ছাসের ধাক্কায় বেড়িবাঁধ ভাইঙ্গে নুনা জল ঢুইকে মানুষজনের ক্ষতি তো করিছে তারপরে আবার বনের একেবারে নিরীহ প্রাণী হরিণগুলো মইরে ভাইসে বেড়াচ্ছে তা মোটেই দুই চহি দেহার মতন না ঝড় থাইমে যাওয়ার পরে জেহেনে যাচ্ছি সেনে বনের পশুপাখি মইরে জেনেসেনে পইড়ে রইছে জলে ভাসতিছে। আর না মইরে বা এগে বাঁচার উপায় কি জঙ্গলের মধ্যির যত উঁচু জাগা ছেলো সেই জাগা দখল কইরে নিয়ে এই জগার মিয়া বিটারা শহরের মানষিগে ঘুরে দেহার জন্যি কি সব পিকনিকির জাগা বানাইছে তাইছাড়া গাছপালা যা ছেলো তা দেশের বড় বড় নিতাগে হুকুমে কাইটে নিয়ে যাচ্ছে মানষিরা তার জন্যিই বনের মধ্যি একেবারে ফাঁকা এগে আশ্রয় নিয়ে বাইচে থাকার মত কোন উঁচু ঢিপি ও নাই গাছ ও নাই। যে তাইতে আশ্রয় নিয়ে ইরা বাঁচতি পারবে ভগবান বিটাও এগে জন্যি এহেবারে নির্দয় কিন্তু ঝড়ের সময় মানষিগে বাঁচানোর জন্যি তো সরকার সাইক্লোন খুলিছে মানুষগের বাড়ি ঘর ভাইঙেচুরে গেলিও সাইক্লোনে আশ্রয় নিয়ে মানুষরা বাচিছে কিন্তু নিরীহ বনের পশুপাখিগে কথা কিডা ভাবীছে ইরাতো সত্যি মইরেই গেছে এগের জন্যি কান্দার কেউ নাই দুঃখ করার কেউ নাই এসব কথা নাগরিক ভাবনাকে বলেছেন সুন্দরবন কটকা এলাকার বাসিন্দা গোবিন্দ মন্ডল।
অপরদিকে বন সংরক্ষক (বিএফ) মিহির কুমার দো জানিয়েছেন ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে যা বিগত দিনের ইতিহাস অতিক্রম করবে তবে ক্ষতির পরিমাণ জানতে কাজ শুরু করেছে বনবিভাগ বনের বিভিন্ন স্থানে মিলছে বন্যপ্রাণীর মরা দেহ আজকের দিন পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী বনের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এবং পানিতে ভাসমান অবস্থায় প্রায় ৪৫ টির কাছাকাছি হরিণের মৃতদেহ এবং এলাকার মানুষ কর্তৃক ১৭টি হরিণকে জীবিত উদ্ধার করে চিকিৎসা দিয়ে বনে অবমুক্ত করা হয়েছে। উদ্ধার ও অনুসন্ধান তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। অপরদিকে জলোচ্ছ্বাসে বনের মিষ্টি পানির পুকুর গুলোতে ঢুকে পড়েছে সাগরের নোনা জল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বন বিভাগের ২৫ টি বনবিভাগের অফিস কর্মীদের থাকার জায়গা সহ বিভিন্ন স্থাপনা সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন সাধারনত জলোচ্ছ্বাস হলে বন্যপ্রাণীরা উঁচু স্থানে গাছে আশ্রয় নেয় রেমালের প্রভাবে বনের ভেতরের অধিক উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হয়েছে ফলে বনের উঁচু স্থান তলিয়ে যাওয়ায় প্রাণীদের আশ্রয় নিতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে এবং অধিক জলোচ্ছ্বাসের ফলে নিরাপদ আশ্রয় না যেতে পেরে হরিণগুলোর মৃত্যুবরণ হয়েছে। পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফ ও) কাজী মোহাম্মদ নুরুল করিম বলেন এখনো আমরা সব জায়গায় যেতে পারছিনা সাগরও নদী উত্তাল প্রায় ২৫ থেকে ৩০ ঘন্টার জলোচ্ছ্বাস ছিল যার ফলে অনেক বন্যপ্রাণী মারা যাওয়ার কথা শুনতে পাচ্ছি তবে আরো বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে আমরা জানাতে পারব। এ সময় তিনি আরো বলেন বাগেরহাট শহর থেকে বনের অভ্যন্তরে ১০০ কিলোমিটার দূরে সাগরের কাছাকাছি আমাদের স্টেশন রয়েছে সেগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে পূর্ব বনবিভাগের দুবলারচর, শিলারচর, কচিখালী, কটকা, শরণখোলা ও বরগুনা জেলার পাথরঘাটা স্টেশনে টিনের চালা উড়ে গেছে।তার মধ্য সব থেকে বেশি ক্ষতির কথা উল্লেখ করে বলেছে সুন্দরবন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ তথা প্রাণীকুলের সুপীয় মিষ্টি পানির বন্দোবস্ত হিসাবে যে সকল পুকুর গুলো ছিল সেগুলো নোনা জল ঢুকে চার থেকে পাঁচ ফুট নোনা জলের নিচে তলিয়ে গেছে ফলে এলাকার মানুষের বিশুদ্ধ খাবার জলের সংকট হয়ে পড়েছে। অপরদিকে সুন্দরবন দুবলার চরকটকা এলাকার অসংখ্য মানুষ অভিযোগ করে বলেছেন কটকা, ডিমলারচর, দুবলারচর, করমজলসহ অসংখ্য জায়গা দখল করে দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক নিদর্শন জীববৈচিত্র আবাসের অভয়ারণ্য আবাসভূমি সরকারের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের প্রকাশ্য সখ্যতায় দেশের প্রভাবশালী পর্যটক ব্যবসায়ীদের ব্যবসা প্রসারের লক্ষ্যে হেক্টর এর পর হেক্টর জমি দখল করে প্রাকৃতিক কয়েক লক্ষ বৃক্ষ নিধন করে তাদের স্বার্থ সিদ্ধি করছে ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হুমকির মুখে দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের দুই বিভাগের মানুষ ও প্রাণী কূল।
এদিকে খুলনার দক্ষিণাঞ্চল চালনা, দাকোপ, মংলাসহ বিভিন্ন এলাকার নদীবন্দর উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ৫৫ টি দুর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙে নদীর জল ঢুকে ভেসে গেছে মাছের পুকুর ঘের ফলে ২৪৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির আভাস পাওয়া গেছে পাশাপাশি রেমালের তাণ্ডবে ১০ জেলায় তিন দিনে ঝরে গেছে ২১ প্রান। এবং অসংখ্য কাঁচাপাকা ঘরবাড়ি ভেঙে তছনছ হয়ে ঝড়ও জলোচ্ছ্বাসে বিলীন হয়ে যাওয়ার ফলে দক্ষিণাঞ্চলের দুই বিভাগের প্রায় লাখো মানুষরা গৃহীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন পার করছে। ইতোমধ্য ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের মাঝে স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু শুকনো খাবার বিতরণ করলেও তা প্রয়োজনের থেকে একেবারেই অপ্রতুল। এখানকার মানুষদের জন্য খাবার যেমন অতি প্রয়োজন পাশাপাশি বিশুদ্ধ খাবার জল ও পেটে অসুখ জ্বর সর্দি কাশির ঔষধের রয়েছে একান্ত অতি জরুরী প্রয়োজন পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব হয় খোলা আকাশের নিচে থাকা অসহায় মানুষদের ঘর দুয়ার তৈরির উপকরণ বন্দোবস্ত করে এ সকল অসহায় মানুষদের মাথার উপর চালা তৈরি করে দেওয়া।