বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
থেমে গেছে ঝড় থামেনি সর্বস্ব হারানো আর্তনাদের কান্না।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে মাথা গোজার ঠাই বাস্তভিটা গাছপালা এমনকি গরু ছাগল সর্বস্ব হারিয়ে পানিবন্দী অবস্থায় অতি কষ্টে খোলা আকাশের নিচেয় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে যুদ্ধ করে মানবেতর জীবন পার করছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় বেশ কয়েক জেলার লক্ষ লক্ষ মানুষ।
উপকূলীয় এলাকার মানুষদের ছোট বড় মাঝারি আধা পাকা কাঁচা ঘর রেমালের এক রাতের তাণ্ডবে ভেঙে চুরে তছনছ করে সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে চোখের জলে অনিশ্চিত জীবনে ভাসিয়ে দিয়ে গেছে ফলে জীবন ঝুঁকি নিয়ে অতি কষ্টে অনাহারে কোনরকম জীবন পার করছে মাঠে-ঘাটে। এরই মধ্য খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে অসংখ্য মানুষ অসুস্থ হচ্ছে চিকিৎসা ওষুধ ও খাদ্যের অভাবে।
এদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটুকু শুকনো খাবার ও সহযোগিতা করছে তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই সামান্য। ঝড়ের পরদিন থেকে র্যাব, সেনাবাহিনী সহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংস্থা এবং সরকারের ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক অসহায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাশে গিয়ে দাঁড়ালেও কোনক্রমে চোখের জল শুকাচ্ছে না ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের। সর্বস্ব হারানো আর্তনাদে বুক চাপড়িয়ে কেঁদে কেঁদে বলছে সবইতো চলে গেলো নেই কিছু অবশিষ্ট থাকবো কোথায়, বাঁচবো কি নিয়ে, খাব কি, ভেঙে গেছে সব গাছপালা ঘরবাড়ি হারায় গেছে গরু ছাগল কিছু নেই আমাদের শুধু চিহ্ন রয়েছে এই ভিটাটুকু। এখন শুধুমাত্র চোখের জল ছাড়া সহায়সম্বল কিছুই নাই এখন আমরা বড় অসহয়। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের এমন আর্তনাদের কান্নার সর্বস্ব হারানো বেদনায় শোক বিহব্বলে ভারী হয়ে উঠেছে ওই সকল এলাকার আকাশ বাতাস। এক রাতে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার মৎস্য ঘের ভেসে গেছে বেঁচে থাকার স্বপ্ন। অসংখ্য বেড়িবাধ ভেঙ্গে নোনা জলে প্লাবিত হয়ে বঙ্গোপসাগর সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকা কটকা, রায়েন্দা, ভোলা, চরফ্যাশন, মোংলা, বাগেরহাট, শরণখোলা, এদিকে খুলনা জেলার বেশকিছু উল্লেখযোগ্য সারা বছর ভাঙ্গনের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা মানুষদের জীবনে মরার উপর খড়ার ঘা হয়ে চালনা, দাকোপ , বেতবুনিয়া , এদিকে সাতক্ষীরা, কয়রা, দেলুটি সহ অসংখ্য এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
আর এ সকল সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোয় সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মৎস্য ঘের ব্যবসায়ীরা। এখানকার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন বাংলাদেশের আটটি বিভাগের মধ্য সব থেকে উল্লেখ যোগ্যভাবে বেশি সোনালী চিংড়ির চাষ হয়ে থাকে দেশের দুই বিভাগ খুলনা ও বরিশাল এলাকা জুড়ে আর এখানকার চিংড়ি মাছ উৎপাদন করে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়েও প্রতি বছর বিদেশে চিংড়ি মাছ রপ্তানির মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব খাতে উপার্জন হয় মোটা অংকের রাজস্ব । তবে এবছর ঘূর্ণিঝড় রেমালের বাতাসের পাশাপাশি ছয় থেকে সাত ফুট জলোচ্ছ্বাস হয়ে রাতারাতি সকল চিংড়ি ও সাদা মাছের ঘেরসহ অসংখ্য পুকুর ভেসে প্লাবিত হয়ে মাছ ভেসে গেছে ফলে মৎস্য চাষিরা সম্পন্ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একটি টাকাও এখান থেকে ঘরে তোলার কোন সম্ভাবনা তাদের নাই উপরন্তু বিভিন্ন আর্থিক সংস্থার কাছে এরা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়বে।
অপরদিকে দক্ষিণাঞ্চলের বনও পরিবেশ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্তারা জুড়ালোভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন বিগত ৬০ থেকে ৬৫ বছরে বাংলাদেশের ওপর প্রাকৃতিক অনেক দুর্যোগ ঝড়ের কবলে পড়েলেও এবছরে রেমালের দীর্ঘ সময়ের তাণ্ডবের আঘাত সাথে মুষলধারা বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাসে গভীর সুন্দরবন সহ উপকূলীয় এলাকার মানুষদের যে পরিমাণে ক্ষতি হয়েছে সাথে সুন্দরবনের অসংখ্য প্রাণী পানিতে ভেসে মৃত্যুবরণ করেছে। তাছাড়া এক সুন্দরবনে যে পরিমাণে ক্ষতি হয়েছে তা আগামী ৪০ বছরেও ক্ষতিপূরণের সম্ভাবনা নাই। সাথে উপকূলীয় এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা এখনো এই মুহূর্তে হিসাব নিকাশ করে পরিমাণ বর্ণনা করা যাবে না তবে এটুকু বলতে পারি সিডর আইলার থেকেও অধিক পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবার রেমালের তান্ডবে যার কারনে এসব এলাকার মানুষরা আরও এক ধাপ অর্থনৈতিকভাবে বিরাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পিছিয়ে পড়তে হয়েছে আর সেই ক্ষতির সহায়তা হিসেবে সরকার তথা দেশের উদারমনা সংস্থা যদি এগিয়ে এসে অসহায় মানুষদের পাশে থেকে ত্রাণ ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত না করে তাহলে বিনা চিকিৎসায় অনাহার খাদ্য অভাবে গৃহহীন খোলা আকাশের নিচে সর্বক্ষণ মৃত্যু ঝুঁটির সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হবে।