– আবুজর গিফারী
সেকালের গ্রিসের লোকেরা মনে করত পৃথিবী চ্যাপ্টা থালার মতো। শুধু গ্রিসে নয়, গোটা দুনিয়াজুড়ে এ ধারণা চালু ছিল। অ্যারিস্টটলই এই ভুল ভাঙলেন। ‘অন দ্য হ্যাভেনস’ বইয়ে লিখলেন, পৃথিবী চ্যাপ্টা থালার মতো নয়।
এটা একটা গোলক। কিন্তু লোকে সেটা মানবে কেন? অ্যারিস্টটল তাঁর বইয়ে শক্ত যুক্তি দেখিয়েছিলেন।
অ্যারিস্টটল ব্যাখ্যা দিলেন, চন্দ্রগ্রহণ কেন হয়? অ্যারিস্টল বলেছিলেন সূর্য আর চাঁদের মাঝখানে পৃথিবী এসে পড়ে বলেই চন্দ্রগ্রহণ হয়। চন্দ্রগ্রহণের সময় পৃথিবীর যে ছায়া পড়ে চাঁদের ওপর, সেই ছায়া সব সময় গোলাকার।
কখনো লম্বাটে হয় না, কিংবা উপবৃত্তাকারও হয় না। পৃথিবী যদি থালার মতো হতো তাহলে ছায়াটা উপবৃত্তাকার হতো, গোলাকার নয়। অ্যারিস্টটল বললেন, পৃথিবীর আকার গোলকের মতো বলে বলেই চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদের ওপর গোলাকার ছায়া পড়ে।
আরেকটা যুক্তি হলো ধ্রুবতারা।
এটা সব সময় আকাশের একই জায়গায় থাকে। ধ্রুবতারা থাকে উত্তর মেরুবিন্দুর ঠিক ওপরে। তাই উত্তর মেরু থেকে কোনো পর্যবেক্ষক যদি দেখেন, তিনি সব সময় মাথার ওপরেই দেখবেন ধ্রুবতারাকে। কিন্তু কেউ যদি দেখেন বিষুব রেখা থেকে, তিনি দেখবেন ঠিক দিগন্ত রেখায় অবস্থান করছে ধ্রুবতারা। সে যুগে এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাতায়াত করত বণিক ও ব্যবসায়ীরা।
তাঁরা দিক ঠিক করতেন ধ্রুবতারা দেখে। তাঁদের কাছ থেকেই জানা যেত কোন দেশে ধ্রুবতারার অবস্থান কোথায়।
অ্যারিস্টটল জানতেন উত্তর দিকের দেশগুলোতে দেখলে এই তারাকে আকাশের অনেক ওপরে দেখা যায়। কিন্তু দক্ষিণ দিক থেকে দেখলে একে নিচের আকাশে দেখা যায়। ধ্রুবতারার অবস্থানের এই তারতম্য থেকেও পৃথিবীর গোলাকৃতির বিষয়টা নিশ্চিত হওয়া যায়।