আব্দুল গাফ্ফার শেরপুর বগুড়া প্রতিনিধি
বগুড়ার শেরপুরে ক্ষমতার পালাবদলে সরকারি জলাশয় দখলে নিতে গিয়ে গ্রাম পুলিশ মিজানুর রহমান ওরফে মিজানকে (৩০) পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। রোববার (১৮ আগস্ট) রাতে নিহতের মা মাহেলা বেগম বাদি হয়ে ওই মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় সতের জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো দশ থেকে বারোজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। বিগত ০৬আগস্ট সকাল অনুমান নয়টার দিকে উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের আটাইল গ্রামস্থ মোশার পুকুর এলাকায় ওই গ্রাম পুলিশ সদস্যকে বেধড়ক পেটানো হয়। এসময় তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাঁর স্ত্রী, ভাইসহ অন্তত পাঁচজন নারী-পুরুষকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। পরে আহতদেরকে দ্রুত উদ্ধার করে বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরমধ্যে গ্রাম পুলিশের সদস্য মিজানুর রহমানের অবস্থার অবনতি ঘটলে ঢাকার একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০আগস্ট সকালে মারা যান তিনি।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের ঢেপুয়া গ্রামের ওমর ফারুক, ইউসুফ হোসেন, আব্দুস সামাদ, বেলাল হোসেন, আবু বকর সিদ্দিক, ইয়াকুব আলী, হাফিজুর রহমান, রেজাউল করিম, আব্দুল বারিক, জসমত আলীম, সোহরাব আলী, নাজমুল হোসেন, বিশাপুর ইউনিয়নের আরাফাতগাড়ী গ্রামের শুকুর আলী, মোমেনা বেগম, ইসমাঈল হোসেন ও পাশ্ববর্তী রায়গঞ্জ উপজেলার শিবপুর গ্রামের স্বাধীন হোসেন, কাউসার হোসেন। এছাড়া আরো দশ থেকে বারোজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের আটাইল গ্রামস্থ মোশার জলাশয়টি সরকারি হওয়ায় চলতি বছরের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তর থেকে দরপত্র জমা দেওয়ার মাধ্যমে ডেকে নেয় স্থানীয় আদর্শগ্রাম সমবায় সমিতি। এরপর সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা ছাড়া হয়। বর্তমানে ওই জলাশয়টিতে সাত থেকে আট লাখ টাকার মাছ রয়েছে। কিন্তু ০৫আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর সরকারি জলায়শটি দখলে নেওয়ার পাঁয়তারা শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ০৬আগস্ট সকাল নয়টার দিকে ওমর ফারুকের নেতৃত্বে দুইটি মিনি ট্রাকে ভরে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রে সর্জিত হয়ে প্রায় পঁচিশ থেকে ত্রিশজন ব্যক্তি ওই জলাশয়ে গিয়ে জোরপূর্বক মাছ উত্তোলন শুরু করেন। এসময় গ্রাম পুলিশ সদস্য মিজানুর রহমান ওরফে মিজান বাধা দিলে তাকে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে তাঁর মাথা ফেটে যায় এবং প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। একপর্যায়ে তাঁকে বাঁচাতে তাঁর স্ত্রী কুলসুম বেগম, ভাই সোহেল রানা বাবু, মুঞ্জুয়ারা বেগম, আলমগীর হোসেন ও সোহেল রানা এগিয়ে এলে তাদেরকেও পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। পরে স্থানীয়রা আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে বগুড়ার শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। এরমধ্যে গ্রাম পুলিশের সদস্য মিজানুর রহমানের অবস্থার অবনতি ঘটলে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
বিষয়টি সম্পর্কে বক্তব্য জানতে চাইলে শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম রেজা বলেন, এই ঘটনায় থানায় মামলা নেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। এদিকে ঘটনাটি সম্পর্কে বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত ওমর ফারুকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ঘটনার পর থেকে পলাতক থাকায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি