মোঃ আশরাফুল ইসলাম,মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি.
মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ভালো বেতনে চাকরি দেওয়ার প্রলোভনে কম্বোডিয়া নিয়ে নির্যাতন ও মানব পাচার করার অভিযোগ উঠেছে মানিকগঞ্জের মুকুল মাহমুদ ও ঝুমুর ইসলাম দম্পত্যির বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত কম্বোডিয়া প্রবাসি মুকুল মাহমুদ সদর উপজেলার ভিকরা গ্রামের মো. আফসার আলীর ছেলে ও ঝুমুর ইসলাম মুকুলের স্ত্রী।
নিরীহ মানুষকে বিদেশে নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে নগদ টাকা আত্মসাৎ করা ও দেশের বাহিরে ক্যাসিনো,মদের বার,যৌনপল্লীসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রয় করাই তাদের পেশা। বিদেশে চাকরির উদ্দেশ্যে লোক পাঠাতে পারে ও মোটা অংকের বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে এমন প্ররোচনা দিয়ে মানুষকে বিদেশ যাওয়ার প্রস্তাব দেয় ঝুমুর।আর প্রবাস থেকে সকল কল-কাঠি নারেন ঝুমুরের স্বামী মুকুল।নিরীহরা তাদের প্রতারণার ফাঁদে পরে বিদেশ যাওয়ার লোভে জায়গা-জমি, ঘর-বাড়ী বিক্রয় করে সর্ব শান্ত হয়ে যায়।বিদেশে পাঠানোর খরচ হিসেবে তারা ৪-৮ লাখ টাকা নেয়। শেষে ভ্রমণ ভিসায় বিদেশে নেওয়ার পর বেরিয়ে আসে তাদের ভিন্ন রূপ। চাকরিপ্রত্যাশীদের গোপন স্থানে আটকে রেখে পাসপোর্ট ও সঙ্গে থাকা অর্থ কেড়ে নেওয়া হয়। শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।
অশ্রুসিক্ত চোখে এমন অভিযোগই করতে থাকেন সদর উপজেলাধীন মত্ত গ্রামের ভূক্তভূগী সোহেল রানা’র মা রেহেনা বেগম।
জানা যায়, চক্রটি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তাদের এজেন্টদের মাধ্যমে যুবকদের টুরিস্ট ভিসায় কম্বোডিয়ায় নিয়ে যায়। এক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশ থেকে ভারত হয়ে কিংবা মালয়েশিয়া বা শ্রীলঙ্কা হয়ে কম্বোডিয়ায় অনুপ্রবেশ করিয়ে থাকে।
পাচারকারীদের একাংশ কম্বোডিয়ায় অবস্থান করে। তারা বাংলাদেশ থেকে যাওয়া যুবকদের রিসিভ করে বিভিন্ন কোম্পানিতে বিক্রি করে দেয়। কোম্পানি তাদেরকে নিজেদের কাজে ব্যবহার করা অবস্থায় উচ্চমূল্যের প্রস্তাব পেলে অন্য কোম্পানিতে বিক্রি করে দেয়। এভাবে শুধু কোম্পানি পরিবর্তন হয় কিন্তু কারও ভাগ্য পরিবর্তন হয়না। বরং অবরুদ্ধ হয়ে থাকতে হচ্ছে মাসের পর মাস।এভাবে জিম্মি করে বড় বড় ক্যাসিনো বা মদের বারে কাজ করতে বাধ্য করা হয় যুবকদের। ক্যাসিনোয় টাকা বিনিয়োগ করে সেখানেই চাকরি করতে হয় তাদের। তবে চাকরি ছেড়ে দিয়ে টাকা নিয়ে বের হওয়ার সুযোগ নেই।
রেহেনা বেগম জানায়,আমার ছেলেকে কম্বোডিয়া নিয়ে ৩মাস ধরে অজ্ঞাত স্থানে বন্দি করে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেছে। খাবার দেয়না। খাবার চাইলে বাংলাদেশ থেকে টাকা নিয়ে খাবার কিনতে বলে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আমার ছেলে দেশে ফেরত আসতে চাইতেছে কিন্তু মুকুল পাসপোর্টও ফেরত দিতেছেনা।পাসপোর্ট নেওয়ার জন্য আবারও ৭০ হাজার টাকা চায।বিদেশ যাওয়ার সময় সাড়ে ৫ লাখ টাকা দিছি ।এখন আমি টাকা কই পামু।
তিনি আরো জানান, র্যা ব অফিসে বিষয়টি জানানোর পর তারা আদালতে মানব পাচারের মামলা দায়ের করতে বলছে। এখন মুকুল মাহমুদ ও ঝুমুর ইসলামের বিরুদ্ধে আদালতে মানব পাচার ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছি।খুব শিঘ্রই মামলা করবো।
এবিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত মুকুল মাহমুদ ও ঝুমুর ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সম্প্রতি ভূক্তভূগী সোহেল রানার এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ভালো বেতনে চাকরির আশ্বাসে কম্বোডিয়া এনে আমাকে দিয়ে জোর করে ক্যাসিনো ও বারে কাজ করানো হচ্ছে ।কাজ না করলে আমার উপর পাষবিক নির্যাতন করে । আমার পাসপোর্টও আটকে রাখছে মুকুল ।আমি দেশে ফিরতে চাই,বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমি সরকারের কাছে সহযোগীতা চাই ।