মোঃ আশরাফুল ইসলাম,মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি.
আর্থিক অনিয়ম, অতিরিক্ত টাকা আদায়, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে মানিকগঞ্জের সদর উপজেলাধীন ‘জাগীর-কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের’ প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২ সেপ্টেম্ব) সকাল ৯টায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকে। পরে সকাল ১০টায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মানিকগঞ্জ শহর প্রদক্ষিণ করে বেলা সাড়ে ১১ টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে অবস্থান নেয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৯শে আগস্ট)একই দাবিতে শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসক বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দেয়।
বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থী,প্রাত্তন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলেন,আজ ৯ দিন যাবত আমরা আন্দোলন করছি। গত কয়েকদিনে আপনারা দেখেছেন বিভিন্ন স্কুল কলেজে শিক্ষার্থীরা জোরপূর্বক অনেক প্রধান শিক্ষককে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছে। কিন্তু আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কিন্তু জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার পরেও আমাদের দাবি আদায়ের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ দেখতে পাইনি। তাই আজ আমরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছি।
তারা আরো বলেন,রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে, সিন্ডিকেট করে নানা অনিয়ম দুর্নীতি করেন প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়, বিনা রশিদে অর্থ আদায়, ভুয়া বিল করে টাকা আত্মসাত, কোচিং বাণিজ্য, উপবৃত্তির শিক্ষার্থী নির্বাচনে অনিয়মসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতি করেন তিনি। এছাড়া প্রধান শিক্ষক কখনো শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করতেন না। এমনকি কেউ তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তাকে শাস্তি দিতেন। অভিভাবকদের সঙ্গেও সবসময় দুর্ব্যবহার করতেন তিনি।
স্মারকলিপি সূত্রে জানা যায়,বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন সময় হতে প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম আওয়ামীলীগের ও এলাকার সন্ত্রাসী ভূমিদস্যু এবং অর্থলোভী কিছু ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটিকে একটি অপরাধের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিণত করে। প্রতিষ্ঠানটির শুরু থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শিক্ষক-কর্মচারীদের অর্থের বিনিময় নিয়োগ প্রদানসহ প্রতিষ্ঠান হতে আয় কৃত অর্থ আত্মসাৎ,শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে অসদাচরণ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, মেয়ে শিক্ষার্থীদের হিজাব পড়তে বাধা প্রদান,উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে অতিরিক্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেখিয়ে পাঠ্যপুস্তক বিদ্যালয়ে এনে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণের পর উত্তেজিত অতিরিক্ত বই বিক্রি করা, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতৃক পাওয়া অনুদানের টাকা ও আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ না করা, শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রেশন ফি আদায়, স্কুল ব্যাচ, শিক্ষার্থী ভর্তি ফি ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের অর্থ বীনা রশিদে আদায়ের ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ও অন্যতম। প্রধান শিক্ষককে কখনো শ্রেণীকক্ষে পাঠদান করতে দেখা যায়নি ।এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের ঠিকাদারের যোগসাজশে অর্থ আত্মসাৎ ও নির্মাণ সামগ্রী বাহিরে বিক্রি করা,বিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণে ব্যাপক দুর্নীতি সহ অত্র বিদ্যালয়ের মাঠে মাটি ভরাট করার নামে অতিরিক্ত অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ বিদ্যমান। এছাড়াও আইসিটি ক্লাসের জন্য সরকারিভাবে ল্যাপটপ দেয়া হলেও সেগুলো দিয়ে শিক্ষার্থীর ক্লাস না করিয়ে বাড়িতে নিয়ে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম।
মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ তরিকুল ইসলাম জানান, শিক্ষার্থীদের দেয়া স্মারকলিপির প্রেক্ষিতে ইতমধ্যে ৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।তদন্ত পরবর্তী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য,গত ২৫শে আগস্ট রোববার থেকে টানা ৯ দিন যাবৎ প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা।