জিয়া চৌধুরী (খুলনা প্রতিনিধি)
বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের ভোক্তা সংরক্ষণ অধিকারের কঠোর হুঁশিয়ারির পর বাজারে ডিমের দাম কিছুটা কমলে ও সরকারের বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত মুল্যে বিক্রি হচ্ছে না। গতকাল শুক্রবার দৌলতপুরের বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা দোকান ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৫৬ টাকা দরে। এতে প্রতি পিসের দাম পড়ছে ১২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১৩ টাকা। অথচ অন্তবর্তীকালিন সরকার খুচরা পর্যায়ে দাম বেঁধে দিয়েছিলো ১১ টাকা ৮৭ পয়সা। যার প্রতি ডজন ডিমের দাম পড়ে ১৪২-১৪৪ টাকা। অর্থাৎ সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে ভোক্তাকে প্রতি ডজন ডিমের জন্য বাড়তি গুনতে হচ্ছে ৮- ১২ টাকা। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের তোয়াক্কা না করে বেশি দামে ডিম বিক্রি করছে। তবে কিছু কিছু পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা ছোট সাইজের ডিম ১৫০ টাকা এবং মাঝারি সাইজের ডিম ১৫৬ টাকা দরে বিক্রি করছে। দৌলতপুরের পাইকারি ডিম ব্যবসায়ীরা বলছে তারা ডিলারদের কাছ থেকে প্রতি পিচ ছোট ডিম ১২ টাকা এবং মাঝারি সাইজের ডিম ১২ টাকা ৫০ পয়সা দরে কিনছেন।
দৌলতপুরের তাজ ডিম স্টোরের মালিক তাজ জানান সরকারের বেঁধে দেওয়া ডিমের মুল্য শুনে অনেক ক্রেতা ডিম কিনতে আসছে। কিন্তু বেঁধে দেওয়া দামে ডিম বাজারে বিক্রি হচ্ছে না, কারণ ডিমের ডিলারদের কাছ থেকে আমাদের বেশি দামে ডিম কিনতে হচ্ছে। আমরা যে ডিম ডিলারদের কাছ থেকে ১২ টাকায় কিনতে পারছি সে ডিম ভোক্তার কাছে ১২ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি করছি। এবং যে ডিম ১২ টাকা ৫০ পয়সায় কিনছি সে ডিম ১৩ টাকায় বিক্রি করছি। ডিলারদের কাছ থেকে প্রতি ডজন ডিম ১৪৪- ১৫০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে।
সেকারণে আমরা ও ভোক্তার কাছে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে অর্থাৎ প্রতি ডজন ডিম ১৪২-১৪৪ টাকা দরে বিক্রি করতে পারছি না। উৎপাদকরা সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে ডিলারদের কাছে বিক্রি করলে ও ডিলাররা বেশি দামে পাইকারদের কাছে বিক্রি কারায় ভোক্তারা ন্যায্য মুল্যে ডিম পাচ্ছে না । হাত যত বদলাচ্ছে ডিমের দাম তত বাড়ছে। মাঝ খানে সুবিধা ভোগী ডিলাররা ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রন করছে বলে একাধিক মাধ্যমে জানা গেছে। জানা যায় ডিম উৎপাদক প্রথমে ডিম তাদের ডিলারদের কাছে বিক্রি করেন, ডিলার বিক্রি করেন পাইকারদের কাছে, পাইকাররা বিক্রি করেন ক্ষুদ্র ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে, ক্ষুদ্র ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেন ভোক্তার কাছে। এভাবে একটা ডিম এতগুলো হাত বদল হয়ে যখন ভোক্তার কাছে পৌঁছায় তখন ডিমের প্রকৃত মুল্যে ভোক্তা ক্রয় করতে পারেন না।
কাজী ফার্মের ডিমের ডিলার হারুন জানান গত বছরের তুলনায় এই বছর মুরগীর বাচ্চার উৎপাদন কম, তাছাড়া অতিরিক্ত গরমের কারণে অনেক মুরগী হিটস্ট্রোকে মারা গিয়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন জেলায় বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে অনেক ফার্ম নষ্ট হয়ে গেছে, অনেক মুরগী মারা গিয়েছে। যার কারণে ডিমের উৎপাদন কম। বড় বড় ফার্ম গুলোতে তেমন একটা মুরগী নাই। ছোট ছোট প্রান্তিক খামারিদের কাছ থেকে বেশি ডিম কিনতে হচ্ছে। যার কারণে সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারে বেশি দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে। এই অঞ্চলে যতগুলো ফার্ম রয়েছে তার মধ্য কাজী ফার্মের ডিমের দাম অন্যান্য ফার্মের থেকে একটু কম। দৈনিক যে পরিমান ডিমের চাহিদা রয়েছে তা পুরণে করতে কাজী ফার্মের পাশাপাশি অন্যান্য ফার্মের থেকে ও ডিম ক্রয় করতে হয় এবং বেশি মুল্যে কিনতে হয়। কাজী ফার্মের ডিমের দাম কম থাকলে ও আকিজ ফার্ম সহ অন্যান্য ফার্মের ডিমের দাম একটু বেশি সে কারনে সকল ফার্মের ডিম একই দামে বিক্রি করা হয়। তা না হলে ডিমের বাজারে দামের অনেক তারতম্য দেখা দেয়। তিনি আরো বলেন আজ আকিজ ফার্মের ডিম ১২ টাকায় কিনে ১২ টাকা ১০ পয়সায় বিক্রি করেছি। ডিমের দাম বেশি থাকায় চাহিদার তুলনায় কম ডিম কিনেছি। দৌলতপুর বাজারে ডিম কিনতে আসা পাবলা শের -ই -বাংলা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল খায়ের মোঃ জয়নাল আবেদীন জানান সরকার সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু বাজারে সরকারের নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে না। প্রতি ডজন ডিম ১৫০- ১৫৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এই জন্য নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা দরকার।
দৌলতপুরের ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান সহ অন্যান্য ডিম ব্যবসায়ীরা বলেন আজ প্রতি পিচ মাঝারি সাইজের সাদা ডিম ডিলারদের কাছ থেকে কিনে আমাদের দোকান পর্যন্ত পৌছাতে প্রায় ১২ টাকা ৫০ পয়সা পড়েছে। এর মধ্য অনেক ডিম ভেঙ্গে যায়, নষ্ট হয়ে যায়, যার কারণে প্রতি পিচ ডিম ১৩ টাকা এবং ছোট সাইজের ডিম ১২ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি করছি। আমরা ১ টা ডিম ১২ টাকা ৫০ পয়সায় কিনে ১৩ টাকা বিক্রি করছি প্রতি ডিমে লাভ হচ্ছে ৫০ পয়সা।
ডিলাররা কাজী ফার্ম থেকে ডিম কিনছে ১১ টাকায়। বিক্রি করছে প্রায় ১২ টাকা ৫০ পয়সা। তারা প্রতি পিচ ডিমে লাভ করেছে ১ টাকা ৫০ পয়সা। ডিলারা যদি ১১ টাকায় কিনে ১১ টাকা ২০ পয়সায় বিক্রি করে তাহলে ভোক্তারা সরকারের নির্ধারিত দামে ডিম কিনে খেতে পারবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডিম ব্যবসায়ী বলেন সরকার উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারিতে ১১ টা ১ পয়সা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা ডিম বিক্রির সিন্ধান্ত দেয়। কিন্তু উৎপাদকের প্রতি ডজন ডিমের দাম বিক্রয় মুল্য পড়ে ১৩০ টাকা ৯২ পয়সা, ফার্মের মালিকদের কাছ থেকে ডিলাররা কিনে পাইকারদের কাছে বিক্রি করছে ১৪৪-১৫০ টাকা। পাইকার ভোক্তার কাছে বিক্রি করছে ১৫০-১৫৬ টাকা। মাঝখান থেকে সব চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে ডিলারা। ডিলাররা ডিমের দাম কমালে বাজারে ডিমের দাম কমে যাবে এবং ভোক্তারা সরকারের নির্ধারিত দামে ডিম কিনতে পারবে। উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ডজন ডিমে গুনতে হচ্ছে ২০-২৫ টাকা অর্থাৎ প্রতি পিচ ডিমে বাড়িতে গুনতে হচ্ছে পায় ২ টাকা।