সরদার রইচ উদ্দিন টিপু জেলা প্রতিনিধি (নড়াইল)
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের কুমারডাঙ্গা গ্রামে রেকর্ডীয় জমি জোর পূর্বক দখল চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে পার্শ্ববর্তী ধলইতলা গ্রামের চাঁদ মিয়া গাজীর ছেলে গাজী ফারদীন ইসলাম ওরফে কুটি গাজীর বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী হানিফ মোল্যা চাকুরীর সুবাদে বাহিরে থাকায় তার পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া তাদের রেকর্ডিয় জমি অন্যের নিকট বিক্রির নামে বড় অংকের টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে ওই কুটি মিয়া বলে জানা গেছে।
শুক্রবার (১১ আগষ্ট) সরেজমিনে গিয়ে কাগজপত্রে দেখা যায়, ১৯২৬ সালে সিএস পর্চা মূলে ৫৯২২ দাগের ৪৪ শতক জমির রেকর্ডিয় মালিক মৃত ফেলারাম মোন্ডলের ছেলে নিবারন ও সুদন মন্ডোল। ১৯৬২ সালের এসএ পর্চায় একই দাগের ৪৩ শতক জমি নিবারন মোন্ডলের ছেলে পরেশ, বিপিন বিহারী ও জোতিন্দ্র নাথের নামে আসে এবং হাল রেকর্ডেও তাদের নাম দৃশ্যমান হয়। অতঃপর দলিল মূলে ৩০ ধারা সংশোধণীর মাধ্যমে মৃত আলী মিয়া মোল্যার স্ত্রী সাহিদা বেগম ও তার ভাই ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা থানার কামার গ্রামের বাবু মোল্যার নামে ওই দাগের হাল ১৩৫৯৬ দাগে ৪০ শতক জমি রেকর্ড হয়। এ ছাড়া ওই জমিতে সাহিদা বেগমের কবর রয়েছে। তার মৃত্যুয়ান্তে ওয়ারীশ হিসাবে ছেলে মোঃ হানিফ মোল্যা ভোগ-দখলে আছেন।
সাহিদা বেগমের ছেলে আবু হানিফ মোল্যা জানান, তার পিতা বিগত ২০০১ সালে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তি ও তৎকালীন চেয়ারম্যান লাল মিয়া শেখের মাধ্যমে মৃত বিপিন বিহারী সরকার, মৃত বিদ্যাধর সরকার ও মৃত প্রফুল্ল সরকার এর ১৫ জন ওয়ারীশের নিকট হইতে ২৩০৯ নং কবলা দলিলমূলে সাবেক ৫৯২২দাগসহ মোট ৫টি দাগ থেকে আমার মাতা সাহিদা বেগমের নামে ২০শতক জমি ও আমার মামা বাবু মোল্যার নামে ২৩১০ নং দলিল মুলে ৭৭ শতকসহ মোট ৯৭ শতক জমি খরিদ করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মায়ের মৃত্যু হলে ওই জমিতেই দাফন করা হয়। সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী ধলইতলা গ্রামের চাঁদ মিয়া গাজীর ছেলে কুটি মিয়া গাজী আমার নামে মিথ্যা মামলা করে হয়রানির পাশাপাশি ওই জমি জবর দখলের চেষ্টা করছে এবং পার্শ্ববর্তী জাফর শেখের স্ত্রী হাফিজা বেগমের নিকট মৌখিকভাবে বিক্রি করেছে বলে জানা গেছে। আমি চাকুরীর সুবাদে বাহিরে থাকায় আমার স্ত্রীকে অকথ্য ভাষায় কথা বলে হুমকি দিয়ে আসছে। আমি এর শুষ্ঠ বিচার চাই।
ইতনা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড সদস্য শাহাদুল শেখ বলেন, এই জমিটা ২০ বছর যাবৎ আলী মিয়া মোল্যার ছেলে হানিফ মোল্যা ভোগ-দখলে আছে। তার মায়ের কবর রয়েছে ওখানে। ধলইতলা গ্রামের কুটি মিয়া গাজীর নাকি দলিল আছে বলে দাবি করতেছে। এলাকার মাতুব্বরেরা কুটি মিয়ার কাগজপত্র দেখেছে কিন্তু কার্যকর হয় নাই। কারন হাল কের্ড করে হানিফ মোল্যা দখলে আছে।
প্রতিবেশী আব্বাস শেখের স্ত্রী কাজলী বেগম বলেন, আমরা এখানে ১৫/২০ বছর যাবত বাস করছি। ওই জমিটা হানিফ মোল্যারা খাচ্ছে বলে জানি।
অন্য প্রতিবেশী অসুস্থ লাহু মিয়া বলেন, এই জমিটা সম্পূর্ণ হানিফ মোল্যারাই পাবে। কুটি মিয়া কয়েক মাতুব্বরের সাথে আতাত করে ধান্দাবাজী করতেছে।
প্রকৃতপক্ষে কুটি মিয়া কোন জমি ওখানে পাবেনা।
কুটি মিয়ার কাছ থেকে জমি ক্রয়কারী জাফর মোল্যার স্ত্রী ফিরোজা বেগম বলেন, এই জমিটি আমার বাড়ীর পাশে। ২০১১ সাল থেকে দেখে আসছি হানিফ মোল্যা ওই জমি খায়। কিন্তু কুটি মিয়া নিজেকে ওই জমির মালিক দাবী করে আমাদের কাছে বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে ৬ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে দলিল করে দিতে পারেনি। অতঃপর টাকা ফেরত চাইলে দিবে বলে আজ-কাল করে ঘুরাচ্ছে।
অভিযুক্ত কুটি মিয়া গাজীর সাথে মুঠোফোনে এ বিষয়ে কথা হলে নিজেকে ওই জমির মালিক দাবী করে বলেন, সরকার বলেছে কাগজ যার জমি তার। সে হিসাবে ওই জমির যাবতীয় কাগজ আমার আছে এবং কোর্টে মামলা চলমান রয়েছে। এ ছাড়া একটি রায়ও তিনি পেয়েছেন বলে জানান।
ইতনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ শিহানুক বলেন, কুটি মিয়া গাজী একটি ফালতু লোক। ওই জমি আলী মোল্যারা বহুদিন আগে থেকে খেয়ে আসছে, ওখানে তার স্ত্রীর কবরও রয়েছে। ওখানে কুটি মিয়ার কোন সম্পত্তি নাই।