বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
বিদ্যুৎ বিভাগের একটি বৃহৎ অংশের নাম ওজোপাডিকো অর্থাৎ
ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি যা দুরারোগ্য ব্যাধি দুর্নীতির ক্যান্সারে আক্রান্ত যার অর্থ পূর্ণাঙ্গভাবে ব্যাখ্যা দিতে গেলে প্রথম আলোচনায় চলে আসবে ট্রেড ইউনিয়নের কথা যার তদারকিতে থাকে প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগন সহ রাজনৈতিক শাসকদলের আমলাদের হস্তক্ষেপ।বাস্তবিক দিক থেকে সত্য কথা বলতে গেলে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন বিদ্যুৎ অফিস মানেই দুর্নীতি আর অনিয়মের আখড়া, এখানকার যে যার মতন সরকার ও জনগণের চোখে আঙুল দিয়ে অবৈধভাবে লুটেপুটে রাতারাতি হয়ে উঠছে অফিসিয়াল পিওন থেকে কোটিপতি। তদন্ত সূত্রে বেরিয়ে এসেছে এমন অসংখ্য কর্মকর্তার নাম সাথে জড়িয়ে রয়েছে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের অনেক সাবেক সরকারের আমলাতান্ত্রিক নেতাদের পরিচয়। যারা বিদ্যুৎ অফিসে সারাদিন বসে থেকেও সন্ধ্যার দিকে পকেট ভর্তি টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে অথচ এই বিদ্যুৎ খাত থেকে সরকারের গুনতে হচ্ছে মাস গেলের হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসান একজন লাইন ম্যান স্টোর কিপার এমনকি ঝাড়ুদার সকলের রয়েছে শহরের আশপাশ দিয়ে নামে বেনামে অসংখ্য জায়গা জমি দুর্নীতির ক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ারদের কথা তো বাদই দিলাম জনগণের অভিযোগসূত্রে বলা হয়েছে ইঞ্জিনিয়ার থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হচ্ছে দুর্নীতির রাঘববোয়াল।
এক্ষেত্রে ১৬ বছরের নির্যাতিত ও শোষণ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই সামাজিক উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির বিভিন্ন নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ এদের বিরুদ্ধে তদারকি ও তদন্ত করার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিল আজ তারই প্রেক্ষিতে বিগত ১৬ বছরের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীতে (ওজোপাডিকো) অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে খুলনার বয়রায় অবস্থিত ওজোপাডিকোর সদর দপ্তরে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
দুদক খুলনা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রকিবুল ইসলামের নেতৃত্বে দুদকের এনফোর্সমেন্টের অভিযানে উপস্থিত ছিলেন সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান শুভ্র ও উপসহকারী পরিচালক মো: শামীম রেজা। এর আগে ৩১ আগস্ট খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ১৬ বছরে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে শ্রমিক নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবর রহমান লিখিত বক্তব্যে বলেছিলেন, এই সময়ে তাদের (ওজোপাডিকো) চারটি প্রকল্প ছিল। যার ২টি বাস্তবায়ন হয়েছে আর দুটি চলমান রয়েছে। চারটি প্রকল্পেরই তথ্য আমরা সংগ্রহ করেছি। সব তথ্যাদি আজ পায়নি, আজ (সোমবারের) মধ্যে তথ্য দিবেন। এরপর আমরা দেখবো। এবং তথ্য পর্যালোচনা করে কমিশনে রিপোর্ট দাখিল করবো।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মনপুরা দ্বীপাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা আপগ্রেডেশন প্রকল্প বাতিল করা প্রয়োজন। কোম্পানির নিজস্ব অর্থায়নে নেওয়া এই প্রকল্প আত্মঘাতি। কারণ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সোলার পাওয়ার প্রডিউসারের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে হবে ২০-২৪ টাকায়। আর গড় বিক্রয় মূল্য ৮.৬৫ টাকা। গড়ে প্রতি ইউনিটে লোকসান হবে ১২-১৬ টাকা। আমরা মনপুরায় সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানাই। প্রকল্প ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে নিলামে মালামাল বিক্রির দুর্নীতি তদন্তের দাবি জানাই। লিখিত বক্তব্যে মজিবর রহমান বলেন, ওজোপাডিকোতে কর্মকর্তা নিয়োগ হয়েছে ৫৩৭ জন। শ্রমিক নিয়োগ হয়েছে মাত্র ১৯৪ জন। অপ্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিয়ে কোম্পানিতে মাথাভারী প্রশাসন সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন), নির্বাহী পরিচালক (পিঅ্যান্ডডি), একটি প্রধান প্রকৌশলী, ৪টি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, মহাব্যবস্থাপকসহ (হিউম্যান রিসোর্স অ্যান্ড অ্যাডমিন) অপ্রয়োজনীয় সকল পদ বিলুপ্ত করতে হবে। তিনি বলেন, ওজোপাডিকোর মোট গ্রাহক ১৫ লাখ ৯২ হাজার ৬৪৮ জন। এর বিপরীতে সরাসরি গ্রাহক সেবার দায়িত্বে থাকা কারিগরি শ্রমিক বা লাইন স্টাফ আছেন ৪৮৫ জন। অর্থাৎ প্রতি ৩ হাজার ২৪৮ জন গ্রাহককে সেবা প্রদানের জন্য মাত্র একজন লাইন স্টাফ রয়েছেন। তাদের ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। এ অবস্থায় এসব পদে শ্রমিক নিয়োগ করা জরুরি। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের মেয়াদে নিয়োগ পাওয়া বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদসহ দলবাজ ও স্বেচ্ছাচারী কর্মকর্তাদের অপসারণ, আউট সোর্সিং নিয়োগ প্রথা বাতিল করে স্থায়ীভাবে শ্রমিক নিয়োগ, কর্মকর্তাদের মতো শ্রমিকদের জন্য ঋণের ব্যবস্থা, কর্মকর্তা-শ্রমিক কর্মচারীদের অবসরের বয়সসীমা ৬২ বছর করা এবং কোম্পানিতে পিআরএল ব্যবস্থা চালুর দাবি জানানো হয়। সমগ্র দেশের বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী গ্রাহকদের অভিযোগ এখনো প্রকাশ্যে বিদ্যুতের সকল শ্রেণীর কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত দুর্নীতি করে যাচ্ছে আর এই দুর্নীতির হাত থেকে এখনো কোনদিন গ্রাহকরা মুক্তি পাবে বলে মনে হয় না।