বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
একজন সৎ নিষ্ঠাবান সাংবাদিক মানিক সাহা আততায়ীদের হাতে নির্মমভাবে হত্যার একুশ বছর অতিবাহিত।
মানিক সাহার বিয়োগ বেদনায় আজও স্বজন ও সহকর্মীদের চোখের পানি ঝরলেও তার কোন বিচার করতে সক্ষম হয়নি প্রশাসন। মানিক সাহা ছিলেন নিবেদিত একজন সৎ নিষ্ঠাবান সাংবাদিক এবং খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি। সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সাংবাদিকতা করাই ছিল তার জীবন বিনাশের মূল কারণ। মানিক সাহা সাংবাদিকতায় অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেনি আপোষ করেনি অপসংবাদিকতাকে। তিনি বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি স্যাটেলাইট ২১শে টেলিভিশনের খুলনা বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। তবে সাংবাদিক মানিক সাহা মৃত্যুর একুশ বছর অতিবাহিত হয়ে গেল তার কোন ন্যায় বিচার এখনো স্বজন ও কর্মীরা সুষ্ঠু বিচার পাইনি বিধায় নতুন করে আবারো মামলাটি তদন্তের দাবি কি করছো খুলনার প্রেসক্লাবের সদস্য ও পারিবারিক স্বজনেরা । এমন অবস্থায় আজ বুধবার পালিত হচ্ছে মরণোত্তর একুশে পদক প্রাপ্ত এই সাংবাদিকদের হত্যাবার্ষিকী।
২০০৪ সালের এদিনে খুলনা প্রেসক্লাব থেকে রিকশায় করে আহসান আহমেদ রোডে নিজ বাড়িতে যাওয়ার সময় ক্লাবের অদূরে চরমপন্থীদের বোমা হামলায় ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। সাংবাদিক মানিক সাহা দৈনিক সংবাদ ও নিউএজ পত্রিকার খুলনাস্থ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, ইটিভি প্রতিনিধি ও বিবিসি বাংলা’র খণ্ডকালীন সংবাদদাতা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০০৯ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন।
সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যা ঘটনার রাতেই খুলনা সদর থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক অংশে পৃথক দুটি মামলা হয়। যার বাদী ছিলেন খুলনা থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) রণজিৎ কুমার পাল। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করা হয়। দুটি মামলার হত্যা অংশে ৯ আসামী সাজাপ্রাপ্ত হলেও বিস্ফোরক মামলায় সকলে বেকসুর খালাস পান। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর মামলার রায় দেন খুলনার দ্রুত বিচার আদালতের তৎকালীন বিচারক জেলা ও দায়রা জজ এম এ রব হাওলাদার।
অপরদিকে ২০০৭ সালের ১৯ মার্চ একই আসামিদের অভিযুক্ত করে বিস্ফোরক মামলার অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। একই বছর এ মামলার অধিকতর তদন্ত শেষে একজন যুক্ত হয়ে আসামী হন ১৪জন। তবে বিচার কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই আসামিদের মধ্যে তিনজন ক্রসফায়ারে মারা যান। পরে ১১ আসামি নিয়ে বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
খুলনা প্রেসক্লাবের অন্তবর্তীকালীন কমিটির আহ্বায়ক এনামুল হক বলেন, যে কোন অপরাধের সাজা না হওয়া অপরাধ কাজ উৎসাহিত করে। আমরা খুলনায় কোন সাংবাদিকদের হত্যার বিচার পাইনি। যা আমাদের জন্য সকল সময় কষ্ট দেয়। সাংবাদিক মানিক সাহাসহ সকল সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতন ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এদিকে সাংবাদিক মানিক সাহার হত্যাবাষির্কী উপলক্ষে খুলনা প্রেসক্লাব, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন, সিপিবি, ছাত্র ইউনিয়ন, উদীচী, রতন সেন পাবলিক লাইব্রেরীসহ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে খুলনা প্রেসক্লাব শহীদ সাংবাদিক বেদী শ্রদ্ধা নিবেদন, স্মরণ ও আলোচনা সভা প্রভৃতি।