সুলাইমান পোদ্দার তজুমদ্দিন
তজুমদ্দিনে পারিবারিক কলহের জেরে বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন রোজা মনি ওরফে মাকসুদা (৩০)। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুর আনুমানিক ৩টার দিকে তিনি চাউলে দেওয়ার গ্যাসের ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি বুঝতে পেরে বিকেল ৪টার দিকে তাঁকে তজুমদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। তবে কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন দেখে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভোলা সদর হাসপাতালে রেফার করেন। ভোলায় নেওয়ার পথে কুঞ্জেরহাট বাজার সংলগ্ন এলাকায় রোগীর অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে আবার তজুমদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফিরিয়ে আনা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত রোজা মনি চাঁদপুর জেলার মতলব থানার আসোশিলা গ্রামের সাইফুল ইসলামের মেয়ে। তিনি কাতারপ্রবাসী বেলালের স্ত্রী। সৌদি প্রবাসে থাকাকালীন অনলাইনের মাধ্যমে বেলালের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। পারিবারিক সম্মতিতে তাঁদের আনুষ্ঠানিক বিয়ে সম্পন্ন হয়। পাঁচ বছরের দাম্পত্য জীবনে তাঁদের তিন বছর বয়সী বানী নামের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।
রোজা মনি শ্বশুরবাড়ি তজুমদ্দিন উপজেলার শিবপুর ২নং ওয়ার্ডের খবিরাম বাড়িতে বসবাস করতেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালে তিনি স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় যান এবং পরে বাবার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন।
স্বামী বেলালের ভাষ্যমতে, তাঁর বাবা-মা ও বোন অসুস্থ থাকায় রোজা মনি গত ১২ মার্চ তাঁদের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন, ঘরের তালা ভাঙা এবং বিভিন্ন মালামাল চুরি হয়েছে। তিনি এ ঘটনার ছবি তুলে স্বামীকে পাঠালে বেলাল জানান, নতুন করে তিনি এসব কিনে দেবেন। তবে রোজা মনি এতে সন্তুষ্ট না হয়ে তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন, বিশেষ করে বোনদের সন্দেহ করে ফোনে তাঁদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন।
এ ঘটনার জেরে বেলালের সঙ্গে তাঁর কথোপকথন হয়। বেলাল জানান, ‘‘আমার স্ত্রী আমাকে ফোন দিয়ে বলেছিল, ‘তোর সংসার করব না, নিজেকে শেষ করে দেবো।’ আমি সঙ্গে সঙ্গে আমার মাকে জানালে তিনি বলেন, যদি ঝগড়া করে তাহলে তাকে আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দাও বা ঢাকায় বাসা ভাড়া করে দাও। এরপর আমি আবার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে শান্ত হতে বলি এবং বিকল্প থাকার ব্যবস্থা করব বলে জানাই। কিন্তু সে জানায়, কোথাও যাবে না, বরং বিষ খেয়ে জীবন শেষ করে দেবে।’’
এরপর রাগের মাথায় তিনি স্থানীয় বাজার থেকে কীটনাশক কিনে এনে তা পান করেন, যা তাঁর মৃত্যুর কারণ হয়।
তজুমদ্দিন থানা সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে এবং লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ভোলায় পাঠানো হয়েছে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয়রা এ মৃত্যুর সঠিক তদন্ত ও ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন।