খায়রুল বাশার ময়মনসিংহ প্রতিনিধিঃ
ময়মনসিংহে শিক্ষিকার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিতত হওয়ার পরও শাস্তি!
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা কাদিগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা নুপুর আক্তারের বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগটি মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভালুকা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব সৈয়দ আহমেদ। এরপরও ওই শিক্ষিকার ডেপুটেশনের জন্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নিজেই। গত ৯ আগষ্ট জেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আবু ইউসুফ খান বিদ্যালয়টি সরেজমিনে পরিদর্শন করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
এর আগে গত ২৬ জুলাই নুপুর আক্তারকে অন্য বিদ্যালয়ে ডেপুটেশন (সংযুক্ত) করার একটি প্রস্তাব জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে প্রেরণ করেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। এই বিষয়টি জানতে পেরে নূপুর আক্তারকে ওই বিদ্যালয়ে বহাল রাখতে বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক, অভিভাবকবৃন্দ ও কমিটির সদস্যরা আলাদা তিনটি আবেদন করেছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে।
বিভিন্ন কাগজপত্র ঘেটে ও সরেজমিনের অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৩ ফেব্রুয়ারী উপজেলার কাদিগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি দখল ও বাঁশ কেটে নেয়ার বিষয়ে সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির নামে ভালুকা মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শাহনাজ আক্তার। কিন্তু ওই অভিযোগের বিষয়ে কোনো ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এরপর গত ২৩ মে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা নুপুর আক্তারকে ভালুকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ফোনে ডেকে নিয়ে ওই বিষয়ে আরেকটি অভিযোগ নেওয়া হয়। পরদিন এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভালুকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদুল আহমেদ সহকারী কমিশনার ভূমিকে ল্যান্ড সার্ভে করার সুপারিশ করেন। এর মধ্য ওই বিদ্যালয়ের ওয়াশব্লক নির্মাণের জন্য একটি বরাদ্দ আসে। ফলে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে পরিত্যক্ত ভবনের একটি কক্ষ ভেঙ্গে ওয়াশব্লক নির্মাণের জায়গা করে দেন এবং পাশেই কক্ষ ভাঙ্গার ইট মজুত করে রাখেন।
পরবর্তীতে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা নুপুর আক্তার ও তাঁর স্বামী পুলিশের উপপরিদর্শক সালেহ ইমরানের নামে বিদ্যালয়ের জমি জবর দখল ও অনুমতি ছাড়া ভবন ভেঙ্গে মালামাল আত্মসাতের বিষয়ে একটি লিখত অভিযোগ দেন কালাম তালুকদার নামের এক ব্যক্তি। ১০ মে উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি তুলে ধরেন ভালুকা প্রেসক্লাবের সভাপতি কামরুল হাসান পাঠান। এর পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে প্রধান ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন সভার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদুল আহম্মেদ। কমিটিকে সময় দেওয়া হয় সাত কার্য দিবস।
গত ১৭ জুলাই ভালুকা প্রেসক্লাবের সভাপতি কামরুল হাসান পাঠান ও স্থানীয় সাংবাদিক, ইউপি চেয়ারম্যান, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও অভিযোগ কারী কালাম তালুকদারের উপস্থিতিতে সরেজমিনে তদন্ত করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ও তাঁর স্বামী পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি। ওই দিনই দিনই সরকারী সার্বেয়ার দিয়ে বিদ্যালয়ের জমি মাপঝোঁক করে সীমানা চিহ্নিত করে দেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমাইয়া আক্তার।
এরপর ওই পাঁচ সদস্যের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগেই গত ১৯ জুলাই কমিটির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে আরেকটি অভিযোগ দেন কালাম তালুকদার। এরপর ৩১ জুলাই ইউএনও এরশাদুল আহমেদ নিজেই সরেজমিনে তদন্ত করেন। তিনিও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ও তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে করা অভিযোগের প্রমান পাননি বলে জানান সেখানে উপস্থিত থাকা লোকদের।
পরে বিদ্যালয়ের জমিদাতা সদস্যদের নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে কে কতটুকু জমি দান করেছে তাঁর কাগজ পত্র দাখিল করতে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারী করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়। অভিযোগ মিথ্যা প্রমানের পরেও শিক্ষিকার বদলীর বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আবু ইউসুফ খান মুঠোফোনে বলেন, কাদিগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার মান ভালো। প্রধান শিক্ষিকা বলেছিল, স্থানীয় কিছু মানুষ তাঁকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করছে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আজকেই যোগদান করেছেন। উনাকে এই বিষয়টি অবগত করবেন তিনি।