ঢাকাFriday , 18 July 2025
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ
  3. অভিযোগ
  4. অর্থনীতি
  5. আইন আদালত
  6. আটক
  7. আন্তর্জাতিক
  8. আবহাওয়া
  9. ইতিহাস
  10. কবিতা
  11. কুষ্টিয়া
  12. কৃষি
  13. খুন
  14. খেলাধুলা
  15. চাকুরী
আজকের সর্বশেষ সবখবর

দৃশ্যপট-২-

দেশ চ্যানেল
July 18, 2025 11:40 am
Link Copied!

ইমরান হোসেন

লেখাটির শিরোনাম দেখে পাঠক মনে প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে দৃশ্যপট -১ শিরোনামে কোন লেখা আছে কিনা। না পাঠক দৃশ্যপর্ট-১ শিরোনামে কোন লেখা এর আগে ছাপা হয়নি।

দৃশ্যপট -২ বলতে আমার বর্তমান সময়কে বুঝিয়েছি। আর দৃশ্যপট -২ হল আমার ফেলে আসা সোনালী সেই অতীত শৈশব কৈশোর। দৃশ্যপট -২ হল আমার বর্তমান সময়। আর দৃশ্যপট -১ হল প্রত্যেকটি মানুষের অতীত। আমি হয়তোবা কিছুটা অবতারণা করব। কিন্তু পাঠক তার নিজের অজান্তে হারিয়ে যাবে তার নিজস্ব একান্ত অতীতে।

আজ বেশ কয়েক মাস যাবত কবি মহাদেব সাহার বন্ধুর জন্য বিজ্ঞাপন কবিতাটি একটি লাইন খুব বেশি মনে পড়ছে “অথচ সে জানে আমার সব বদঅভ্যাস, স্বভাবের যাবতীয় দোষ তবুও সে যাবে আমার সাথে ক্যামেরায় ফিল্ম ভর্তি করে নিয়ে আত্মহত্যাকারী এক যুবকের ছবি তুলে দিতে, অবশেষে মফস্বল শহরগামী কোন এক ট্রেনে চড়ে নেমে যাবে আমার সাথে ভুল ইস্টিশনে। ”

বন্ধু বন্ধুর শত ভুল জেনেও বন্ধুর সবকিছু সঠিক মনে করবে এরই নাম বন্ধুত্ব।

ব্যক্তিগতভাবে আমি ছোট্ট একটি চাকরি করি। চাকরির সুবাদে পরিবার নিয়ে একটি মফস্বল শহরে থাকি।

গত ঈদুল ফিতরের ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে নিজেকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করলাম। ঈদের দিন ভোরবেলা ফজরের নামাজ আদায় করে কবর জিয়ারত করতে যাওয়া আমার অনেক পুরাতন একটি অভ্যাস। সুবিধা হল ফজরের নামাজ জামাতের সহিত আদায় করা আর আত্মীয়-স্বজনদের কবর জিয়ারত করা। সেই সাথে ঈদের দিন সকাল বেলাতেই বন্ধুদের সাথে তুমুল একটা আড্ডা হয়। কিন্তু এবার আমাকে আমি আবিষ্কার করলাম সম্পূর্ণ নতুনভাবে। একজন খ্যাতনামা ডাক্তার সাহেব ও একজন শিল্পপতি ছিলেন সেখানে তাদের সাথে প্রতিবারই কথা হয়, আড্ডা হয় কিন্তু এবার দেখলাম ডাক্তার সাহেবের কাছে আমি কোন বন্ধু নয় নিছক একজন রোগী নয়তোবা ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ আর শিল্পপতি বন্ধুর কাছে অন্য কোন এক মানুষ।

ঈদের নামাজ পরবর্তী সময় আমাদের বড় রকমের চা চক্র হতো একসময়। সেখানে আমরা বন্ধুরা সহ এলাকার ছোট বড় অনেকেই থাকতো। খুবই মজা করে আড্ডা দিতাম কিন্তু এবার সেখানে কোন বন্ধু পাইনি।পাইনি এলাকার ছোট বড় কাউকেই। পেয়েছি বুদ্ধিজীবী, জ্ঞানী গুণী, রাজনীতিবিদ তবে মানুষ খুঁজে পায়নি।

মজার ব্যাপার হলো গত কয়েকদিন আগে আমার এক বন্ধুকে খুব প্রয়োজন ছিল। ফেসবুকেও খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমার কাছে থাকা মোবাইল নাম্বারটাও বন্ধ পাচ্ছিলাম। আমি ওর নাম্বারটা খোঁজার জন্য অন্তত আরো পাঁচ জন বন্ধুকে ফোন দিয়েছি। প্রথমে ফোন দিলাম এক বিসিএস ক্যাডার বন্ধুকে, সে ফোনটি কেটে দিল। ভাবলাম বন্ধুটি খুব ব্যস্ত। কিন্তু আজ অবধি তার কলব্যাক পাইনি। আমি এখন পর্যন্ত বন্ধুর ফোনের অপেক্ষায় আছি। মোবাইল নাম্বারটা নেওয়ার জন্য অন্য আরো অনেক বন্ধুকে ফোন দিয়েছি তারা অন্তত আমার ফোনটি রিসিভ করেছে কিন্তু যে বন্ধুর ফোন নাম্বার দরকার সে নাম্বারটা কেউ দিতে পারেনি।

এবার আমি আমার চেনার দুটি বন্ধু সার্কেলের উদাহরণ উপস্থাপন করব। এই দুটি সার্কেলকে আমার সামনে বড় হতে দেখেছি। দুটি সার্কেলের বন্ধুগুলো সবাই মধ্যবিত্ত পরিবারের। কোনোমতে পড়াশোনা খরচ চালিয়ে যেতে হয়। প্রথম সার্কেলের সবাই আজ মোটামুটি ভাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত কিন্তু সমস্যা হল প্রথম এই সার্কেলের বন্ধুদের মধ্যে কারো সাথে কারো যোগাযোগ এই মুহূর্তে সম্ভবত নেই। সম্ভবত বলছি কেন, সত্যিকার অর্থেই নেই। কারণ হিসেবে আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে সবাই প্রতিষ্ঠিত এবং সবার থেকে সবাই উপরে উঠতে চায় আর অন্য সার্কেলের শুধুমাত্র একজন বন্ধু সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা। অন্য বন্ধুরা সামাজিক এবং আর্থিকভাবে তেমন একটা এগোতে পারেনি। কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠিত বন্ধুর কথা তারা বন্ধুর কথা তারা গর্ব সহকারে বলে। এবং সেই প্রতিষ্ঠিত বন্ধুটি অন্য বন্ধুদের বন্ধুদের আঁকড়ে রাখে। তাহলে কি দাঁড়ালো প্রথম সার্কেলের বন্ধুদের মধ্যে মনে মনে স্নায়ু যুদ্ধ চলমান যাকে খাস বাংলায় বলে হিংসা। অন্যদিকে দ্বিতীয় সার্কেলের মধ্যে হিংসা পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

বর্তমান সময়ে একটি ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যাচ ভিত্তিক বন্ধু সার্কেল। ব্যাচ ভিত্তিক বন্ধুত্ব টা আমার কাছে সম্পূর্ণভাবে মেকি মনে হয়েছে। যেমন ধরুন আপনি ২০০১ সালের এসএসসি ব্যাচ। ব্যাচ ভিত্তিক বন্ধুত্ব এখন ভুরি ভুরি পাওয়া যায়। কিন্তু আমার কাছে পরিলক্ষিত হয়েছে যেটা উক্ত ব্যাচের যারা সফল তাদেরকে এই সমস্ত গ্রুপের মধ্যমণি করে রাখা হয়েছে। আর যারা ঝরে গেছে তারা অনাদারের অবহেলায় রয়ে গেছে তাদের খোঁজ কেউ রাখে না। আর যারা সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত তারাই থাকে এ সমস্ত প্রোগ্রামের মূল আকর্ষণ। তার মানে কি দাঁড়ালো ঝরে পড়া বন্ধু গুলো সবার চোখের আড়ালে থেকে গেল।

এখন বর্তমান সময়ের অন্য একটি ট্রেন্ডের বন্ধুত্বের বর্ণনা দিয়ে আমার লেখাটি শেষ করব। বর্তমান সময়ে ফেসবুক গ্রুপ ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম বের হয়েছে সেখানে সারা বিশ্বের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বন্ধুরা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এক হয়। বিষয়টা আমার কাছে প্রথমে খুবই ভালো লেগেছে ঠিক এই ভেবে যে, প্ল্যাটফর্ম গুলো বিভিন্ন শ্রেণি পেশার বন্ধুদের মধ্যে একটি মেলবন্ধন সৃষ্টি করবে। মাঝেমধ্যে বন্ধুদের মধ্যে গেট টুগেদার হবে। তো একবার গেলাম একটি খ্যাতনামা ফেসবুক প্ল্যাটফর্মের প্রোগ্রামে। গিয়ে তো আমার রীতিমতো চোখ উল্টানোর অবস্থা। আমি কার বন্ধু বুঝতেই পারলাম না। অনুষ্ঠান চলল, দেখলাম বিভিন্ন বন্ধু বান্ধবীদের কিরকম আনন্দ, উল্লাস, আমোদ। আমার দিকে কেউ ফিরেও তাকালো না। তখন আমার মনে পড়ে গেল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কেউ কথা রাখেনি কবিতার একটি লাইন “ভিকিরির মত চৌধুরীদের গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি ভিতরে রাস উৎসব অবিরল রঙের ধারার মধ্যে সুবর্ণ কঙ্কন পড়া ফর্সা রমনীরা কত রকম আমোদে হেসেছে । আমার দিকে তারা ফিরেও চাইনি। ”

ফেসবুক প্ল্যাটফর্মের একটা খারাপ অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। গত কয়েক মাস আগে ঘুরতে গিয়েছিলাম পরিবারসহ কক্সবাজার। তো হোটেল বুক করতে হবে আগে থেকেই। আমি কোন চিন্তা না করে ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম থেকে হোটেল ম্যানেজমেন্ট এ চাকরি করে এমন এক বন্ধুর মোবাইল নাম্বার নিয়ে ফোন করলাম। আমার পরিচয় দিলাম। বন্ধু আমার ফোন পেয়ে খুব খুশি হল, বলল -দোস্ত তুমি কোন চিন্তা করো না সব দায়িত্ব আমার। বাসায় আমি গর্ব করে বললাম দেখেছো বন্ধু থাকলে কত উপকার হয়। আমার বন্ধু আমার জন্য থার্ড ক্লাস মানের একটা হোটেল দেখিয়ে ফাইভ স্টার মানের হোটেলের ভাড়ার চাইল। ততক্ষণে আমার আর বুঝতে বাকি রইল না যে, বন্ধুটি আমার কমিশন খাবে। পরে বন্ধুটির খপ্পর থেকে কৌশল করে এ যাত্রায় বেঁচে গেলাম। এই যদি হয় বন্ধুত্বের নমুনা তাহলে কিভাবে চলবে এই জীবন। প্রত্যেকটি মানুষের একজন একান্ত বন্ধু লাগবে অন্তত মনের ফাপর ঘোচানোর জন্য।

 

পরিশেষে আমাকে বলতেই হয় –

আমার চারপাশে মানুষ,

কিন্তু কেউ আমার নয়।

হাসে, কথা বলে,

তবু মনে হয় — এরা শুধু শব্দ, হৃদয় নয়।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।

Design & Developed by: BD IT HOST