বিশেষ প্রতিনিধি খুলনা
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, “আমরা যেন কোনো চাঁদাবাজ, দখলবাজ বা টাকা পাচারকারীর সহযোগী না হই। আমাদের লক্ষ্য একটি দুর্নীতিমুক্ত ও ন্যায়ের সমাজ গড়ে তোলা।”
আজ শনিবার (২৬ জুলাই) শিববাড়ি মোড়ে ইসলামী আন্দোলন খুলনা মহানগর ও জেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এই গণসমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
সভায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর সভাপতি মুফতি আমানউল্লাহ। যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন মহানগর সহ-সভাপতি শেখ মো. নাসির উদ্দিন, জেলা সেক্রেটারি হাফেজ আসাদুল্লাহ আল গালিব এবং মহানগর সেক্রেটারি মুফতি ইমরান হোসাইন।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, “মানুষকে পাথর মেরে হত্যার ঘটনা এখনকার সমাজকে আইয়্যামে জাহেলিয়াতকেও হার মানাচ্ছে। ইসলামের পক্ষে দেশব্যাপী আওয়াজ উঠেছে, কিন্তু সেই মুহূর্তে একটি স্বার্থান্বেষী মহল বিভক্তির ষড়যন্ত্র করছে। এদের রুখে দিতে হবে।”
চরমোনাই পীর আরও বলেন, “১৫ বছরের পতিত ফ্যাসিবাদ এখনও দেশের জন্য হুমকি হয়ে আছে। এই স্বৈরতান্ত্রিক শক্তি দেশকে অস্থিতিশীল করতে নানা ফন্দি আঁটছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকেও নিজেদের আচরণ ও বক্তব্যে শালীনতা বজায় রাখতে হবে।”
খুলনা বিভাগের ছয়টি সংসদীয় আসনে ইসলামী আন্দোলনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় তার সঙ্গে মঞ্চে জামায়াতে ইসলামীর দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের চারজন ঘোষিত প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “দেশে সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামী আইনই একমাত্র পথ। সকল রাজনৈতিক দল শাসন করেছে, এখন প্রয়োজন কুরআনের আইন।”
তিনি বলেন, “যখনই ইসলামী শক্তির ঐক্য গড়ে উঠছে, তখনই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র শুরু হচ্ছে। টেলিভিশনে চরমোনাই পীরকে নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, অথচ এসব বক্তব্য ইসলামের বিরুদ্ধেই বলা হচ্ছে। তাই সকল ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করে সবাইকে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে হলে সংখ্যানুপাতে (পিআর পদ্ধতি) ভোটের ব্যবস্থা করতে হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী যে ঐক্য ছিল, এখন সময় এসেছে সাধারণ ইস্যুতে আবারও সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার।”
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমীর হাফেজ মাওলানা আব্দুল আউয়াল, যিনি চরমোনাই পীরের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যারা চরমোনাই পীরকে নিয়ে মিথ্যা স্লোগান দেয়, তাদের ওপর আল্লাহর গজব নাজিল হবে।”
এছাড়া সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমাদ, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক মাওলানা শোয়াইব হোসেন, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি মোস্তফা কামাল, জেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুল্লাহ ইমরানসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।
সমাবেশে খুলনার ছয়টি আসনে যাদের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়, খুলনা-১: আলহাজ্ব মাওলানা আবু সাঈদ, খুলনা-২: আলহাজ্ব মুফতি আমানউল্লাহ, খুলনা-৩: হাফেজ মাওলানা আব্দুল আউয়াল, খুলনা-৪: অধ্যক্ষ ইউনুস আহমাদ, খুলনা-৫: মুফতি আব্দুস সালাম, খুলনা-৬: হাফেজ আসাদুল্লাহ গালিব।
সমাবেশে অন্যান্য দলের নেতা ছাড়াও বক্তব্য রাখেন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মহানগর সহ-সভাপতি প্রশান্ত কুমার হালদার।
সমাবেশ শুরুর কথা ছিল বিকেলে, তবে সকাল থেকেই নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বৃষ্টির মধ্যেও তারা রাজপথে অবস্থান নেন এবং নামাজ শেষে ফিরে এসে আবারো অংশ নেন কর্মসূচিতে।
সমাবেশে বক্তারা জানান, আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে ইসলামী ও ধর্মবিরোধী শক্তির মধ্যে এক সরাসরি লড়াই, যেখানে ‘এক ব্যালট বাক্স, এক লক্ষ্য’ নিয়েই ইসলামী জোট অংশ নেবে।