লেখক: মুফতি খোন্দকার আমিনুল আবদুল্লাহ
ইসলাম এমন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান, যেখানে মানুষের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। আল্লাহর রহমতে বান্দার গুনাহ মাফ এবং নেকীর ভাণ্ডার বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন আমল রয়েছে। এর মধ্যে একটি বিশেষ আমল হলো— সালাতুল তাসবীহ।
রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর প্রিয় চাচা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব রা.-কে এই নামাজের পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং বলেছেন:
> “হে চাচা! আমি কি আপনাকে এমন একটি আমল শিক্ষা দিব না, যা করলে আল্লাহ আপনার অতীত ও ভবিষ্যতের, পুরোনো ও নতুন, ভুলে কিংবা ইচ্ছায় করা, প্রকাশ্য ও গোপন—সব গুনাহ মাফ করে দিবেন? (এটি হচ্ছে সালাতুল তাসবীহ)।”
(সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ১২৯৭; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৮৭)
নামাজের রাকাত ও তাসবীহ
সালাতুল তাসবীহ চার রাকাত নামাজ।
প্রত্যেক রাকাতে মোট ৭৫ বার তাসবীহ পড়তে হবে।
চার রাকাতে মোট ৩০০ বার এই তাসবীহ পড়া সম্পন্ন হবে।
তাসবীহ
سُبْحاَنَ اللهِ وَالْحَمدُ للهِ وَلَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبرُ
উচ্চারণঃ সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।
অর্থঃ আল্লাহ পবিত্র, সব প্রশংসা তাঁর জন্য, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই, আর আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ।
পড়ার নিয়ম
১ম রাকাত, সানা শেষে তাসবীহ ১৫ বার।
সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা শেষে তাসবীহ ১০ বার।
রুকুতে যাওয়ার পর রুকুর তাসবীহ শেষে তাসবীহ ১০ বার।
রুকু থেকে উঠে “রব্বানা লাকাল হামদ” শেষে তাসবীহ ১০ বার।
প্রথম সিজদায় সিজদার তাসবীহ শেষে তাসবীহ ১০ বার।
সিজদার পর বৈঠকে তাসবীহ ১০ বার।
দ্বিতীয় সিজদায় তাসবীহ ১০ বার।
মোট: ৭৫ বার।
২য় রাকাত
সূরা ফাতিহার আগে তাসবীহ ১৫ বার।
এরপর প্রথম রাকাতের মতো একই নিয়মে পড়তে হবে।
৩য় ও ৪র্থ রাকাত
দ্বিতীয় রাকাতের মতো একই নিয়মে পড়তে হবে।
ভুল হলে কী করবেন?
যদি কোথাও তাসবীহ পড়া বাদ পড়ে যায়, তবে পরবর্তী রুকনে গিয়ে বাদ পড়া সংখ্যাগুলো পূর্ণ করতে হবে। তবে সাজদায়ে সাহু ওয়াজিব হলে সেখানে তাসবীহ পড়া যাবে না।
তাসবীহ গোনার জন্য আঙুলের গাঁট গণনা করা ঠিক নয়, তবে আঙুল চেপে স্মরণ রাখা যেতে পারে।
ফজিলত ও উপকারিতা
ইমাম ইবনে আবিদীন রহ. বলেন:
“সালাতুল তাসবীহ জীবনেও একবার আদায় করলেও যথেষ্ট।” (রদ্দুল মুহতার, ২/২৭)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত:
“যদি সম্ভব হয় প্রতিদিন একবার আদায় করবে, না পারলে সপ্তাহে একবার, না পারলে মাসে একবার, না পারলে বছরে একবার, আর সেটাও সম্ভব না হলে জীবনে অন্তত একবার।”
(সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ১২৯৭)
এ নামাজ গুনাহ মাফ, অন্তরের প্রশান্তি, ঈমান শক্তিশালী করা এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের একটি অনন্য মাধ্যম।
উপসংহার
সালাতুল তাসবীহ এমন একটি নফল নামাজ, যা বান্দাকে গুনাহ থেকে মুক্তি, নেকী অর্জন এবং আখিরাতের মুক্তির আশ্বাস প্রদান করে। এই নামাজ আমাদের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে, তাওবার দরজা খুলে দেয় এবং আল্লাহর রহম
ত আহরণে সাহায্য করে। তাই জীবনে অন্তত একবার হলেও সালাতুল তাসবীহ আদায় করা উচিত।