হারুন শেখ স্টাফ রিপোর্টার বাগেরহাট জেলা।
ডাক্তার এস, এম ফরহাদ হোসেন। তিনি এমবিবিএস সনদধারী ডিগ্রী প্রাপ্ত না হলেও নামের আগে ‘ডাক্তার’ লিখছেন! দিচ্ছেন সকল রোগের চিকিৎসা। সামান্য জ্বর, সর্দি, মাথা ব্যাথা হলেও দিয়ে থাকেন উচ্চ মাত্রার এন্টিবায়োটিক। এমনকি করেন অস্ত্রোপচারও। অথচ পরিচয় দেন তিনি উপ-সহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার।বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার বাঁশতলী ইউনিয়নের গিলাতলা বাজারে দীর্ঘদিন এমনই চিকিৎসা দিয়ে আসছেন কথিত ডাক্তার এস, এম ফরহাদ হোসেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বিশাল বড় সাইনবোর্ড টানিয়ে দিচ্ছেন, লোভনীয় নানা ধরণের জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসার বিজ্ঞাপন। সেখানে দেখা যায়, অর্থপেডিক্স, ট্রমা, সার্জারী করার তথ্য। তিনি মেডিসিনে অভিজ্ঞ। দেওয়া হয় নানান রোগের চিকিৎসা। এছাড়াও হাঁড় ভাঙ্গা, হাঁড় ব্যাথা, বাতব্যাথা, বাতজ্বর, ঘাড়, কোমর ও হাঁটু ব্যাথা। শিরার সমস্যা। জন্মগত বিকলাঙ্গতা, পঙ্গুত্ব। চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়াসহ চোখের যে কোন সমস্যা দেখে থাকেন। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, নবজাতক ও শিশুদের সমস্যা এবং টিউমার, ফোঁড়াসহ মাইনর অপারেশনও করে থাকেন তিনি।
চটকদার এসব বিজ্ঞাপন দেখে গ্রামের অসহায় ও নিরীহ মানুষ প্রতারিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। মূলত ভুল চিকিৎসা, ওষুধের প্রেসক্রিপশনে মাত্রারিক্ত এন্টিবায়োটিক লিখে দিচ্ছেন। এতে করে হরহামেশাই মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে রোগীদের।
সাধারণ রোগীদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরামর্শ প্রদান এবং জটিল-স্পর্শকাতর রোগীদের বিশেষায়িত সরকারি হাসপাতাল বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে প্রেরণের নিয়ম থাকলেও সেসব রোগীকে তাৎক্ষণিক এন্টিবায়োটিক ঔষধ সেবনের ব্যাবস্থাপত্র দিয়ে করছেন সুস্থ। যা রোগীদের জীবনকে করছে আরো বেশী বিপন্ন।
দীর্ঘদিন চেম্বার খুলে সাইনবোর্ডে নামের আগে ‘ডাক্তার’ উপাধি ও ডিগ্রির বহর যোগ করে অপ-‘চিকিৎসার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন কথিত ওই ডাক্তার। মূলত গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসক সংকট থাকায় এবং মানুষের সচেতনতার অভাবকে পুঁজি করে রোগী দেখে যাচ্ছেন তিনি এই কথিত চিকিৎসক। যার কারণে রোগমুক্তি তো দূরের কথা, এসব ভুয়া চিকিৎসকের ওষুধ খেয়ে নানান জটিলতায় ভুগছেন হাজারো রোগী।
এছাড়াও মাঝেমধ্যেই তাদের ভুল চিকিৎসার কারণে রোগী মারা যাওয়া মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। আবার অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে রোগকে আরো জটিল থেকে জটিলতর পর্যায়ে নিয়ে নিরাময়-অসম্ভব করে ফেলছেন। আবার অনেক রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলছেন। এতে পরবর্তী সময়ে একদিকে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছেন না, অন্যদিকে রোগীর খরচও বাড়ছে। এসব রোগীর রোগ নির্ণয়েও অনেক সময় হিমশিম খেতে হচ্ছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের।
এবিষয়ে কথিত ওই ডাক্তার ফরহাদ হোসেন বলেন, আমি বিএমডিসি সনদ প্রাপ্ত, তাই ডাক্তার লিখি। আমার চিকিৎসায় রোগী ভালো হয়। ভিজিটও কম নেই। এটা কোনো অপরাধ নয়।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুকান্ত কুমার পাল জানান, বিএমডিসি এর আইন অনুযায়ী এমবিবিএস এবং বিডিএস পাশ ছাড়া কোনো চিকিৎসক নামের আগে ডাক্তার লিখতে পারবে না। যদি কেউ লেখেন তিনি আইনের আওতায় আসবে।
তবে স্বাস্থ্যবিভাগ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সমন্বয়ে নিয়মিত যদি মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হতো তাহলে এমন ভুঁইফোড়দের অপচিকিৎসা থেকে রেহাই পেতো সাধারণ মানুষ। এমনি বলছেন, সচেতন মহল।