বিপ্লব সাহা খুলনা ব্যুরো:
কালের বিবর্তন ও অসাধু ইটভাটা ব্যবসায়ীদের আগ্রাসনে দেশের অধিকাংশ এলাকার খেজুর গাছ বিলুপ্তির পথেে তবুও অবশিষ্ট নিয়ে আসন্ন শীতকে সামনে রেখে রস সংগ্রহ করার লক্ষ্যে গাছ পরিচর্যায় সময় পার করছে গাছিরা অথচ বাংলাদেশে এক সময় দেশের দক্ষিণাঞ্চল খুলনা বিভাগ জুড়ে খেজুরের রস ও খেজুরের গুড়ের জন্য বিখ্যাত ছিল প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে ছিল খেজুরের গুড় তৈরির সকল উপকরণ আর এখন সেইসব এলাকাতে শীত মৌসুম আসলে গাছের অভাবে গুড় গুড় তৈরীর বন্দোবস্ত না থাকায় পুরাতন দিনের স্মৃতিকে বুকে ধারণ করে পার করছে দিচ্ছে সময়।
কোনো একসময় শহরের রাস্তার আসপাশ দিয়ে এবং গ্রাম অঞ্চলের ভেড়িবাধ সহ যত্রতত্র সারিবদ্ধ খেজুর গাছ নজর কাড়ত রোদে ছায়া দিত পথচারীদের ফলে বাংলা আশ্বিন মাসের শেষ ও কার্তিকের শুরু থেকেই গাছিরা গাছ পরিচর্যা ও রস সংগ্রহ করতে ব্যস্ত হয়ে পরতো,
বসে থাকতো না গৃহিনীরাও মাটির হাড়িতে ধোঁয়া দেওয়া তাফাল পরিষ্কার করা সহ বিভিন্ন কাজে গৃহিনিরাও ব্যস্ত সময় পার করত এবং অন্ধকার ভোররাতে গাছিরা বাঁকে বাঁধিয়ে রস বিক্রি করতে বেরিয়ে পড়তো গ্রাম থেকে শহরাঞ্চল পর্যন্ত ।
অথচ এখন শহর তো দূরের কথা গ্রাম অঞ্চলেও আগের মত নাই খেজুর গাছ, মাত্র এক থেকে দেড় যুগ আগেও খেজুর গাছ অহরহ নজরে পরত কিন্তু সেই গাছগুলো ইট বাটা মালিকদের করাল গ্রাসের কারণে একেবারেই বিলুপ্তির পথে।একই সাথে বছর বছর গাছির সংখ্যাও কমছে। এদিকে খেজুর রস জ্বালানো, গুড় তৈরি ও বাজারজাতকরণের প্রস্তুতি থাকলেও তা অপ্রতুল।
তবে এ বছর সরেজমিনে বটিয়াঘাটা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, গাছিদের অবশিষ্ট অল্প কয়েকটি গাছ ধারালো দা দিয়ে নিপুন হাতে মাথা পরিষ্কার করছেন তারা। খেজুর গাছের মাথা পরিষ্কার করার পরে গাছগুলোকে দুই সপ্তাহের বিশ্রাম দেয়া হয়। সবমিলিয়ে আসছে শীতে, খেজুর রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির মহাযজ্ঞকে ঘিরে কৃষকের চোখে মুখে যেনকিছুটা স্মৃতি কিছুটা বাস্তব স্বপ্নের মাখামাখি।খুলনা নিজ খামার এলাকার গাছি অমরেশ ঢালী নাগরিক ভাবনাকে বলেন, অন্যান্য বছর কার্তিক মাস শুরু হওয়ার দশ দিন আগে থেকেই খেজুর গাছ প্রস্তুত করার কাজ শুরু করি। কিন্তু এবছর বৃষ্টি বাদলের কারণে খেজুর গাছ তোলার (কাটা) সময় সপ্তাহখানিক পিছিয়ে গেছে। কার্তিক মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে রস সংগ্রহ শুরু হবে। প্রথম দিকে উৎপন্ন রস দিয়ে তৈরি করা হবে নলেন গুড় তবে উল্লেখযোগ্য ভাবে বলা যেতে পারে খেজুর রস ও গুড়ের জন্য বিখ্যাত। বৃহত্তর যশোর জেলার মহকুমা ছিল ঝিনাইদহ।
যে কারণে যশোরের খেজুর গুড় ও রসের ঐতিহ্যের ভাগিদার যশোর জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলা অপরদিকে কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে খুলনা বিভাগের যশোর জেলার ছয়টি উপজেলা থেকে প্রতিবছর অন্তত ৮’শ থেকে সাড়ে ৮,শ টন খেজুর গুড় উৎপাদন করা হয়। প্রাকৃতিক ও নিরাপদ উপায়ে গ্রামের গাছিরা এসব গুড় তৈরি করেন। খেজুরের কাঁচা রসেরও জনপ্রিয়তাও ব্যাপক। সারাদেশেই খেজুর গুড়, রস ও পাটালির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। উল্লেখিত অঞ্চল থেকে এসব রস, গুড় ও পাটালি সারাদেশে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
একই সাথে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রস্তুতকৃত হালনাগাদ তথ্য বলছে, বর্তমানে খুলনার নিকটতম যশোর জেলায় প্রায় ১ লাখ ৪২ হাজার ২৩৫টি খেজুর গাছ রয়েছে। এরমধ্যে রস আহরণযোগ্য গাছের পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার ৭৬০টি। এছাড়া বাকি গাছগুলোর মধ্যে কিছু চারা গাছ। আবার কিছু গাছ থেকে গাছিরা রস সংগ্রহ করেন না। শীত মৌসুমে জেলায় প্রায় ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ২৪১ লিটার খেজুর রস ও প্রায় ৮৭২ মেট্রিন টন খেজুর গুড় উৎপাদন হয়। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।
পাশাপাশি শীতের আগমনীতে গ্রামের গাছিদের বাড়িগুলোতে রস জ্বালানোর বাইন (বড় চুলা) তৈরি করেছে। খড়ি-কাঠি গুছিয়েছে। বাড়ির পুরুষ মানুষেরা রস মাঠ থেকে এনে দেয়, আর মহিলারা বাড়িতে বসে জ্বাল দ্যয় । নারী-পুরুষ সবাই গুড় ও পাটালি তৈরির কাজ করে। এতে বছরে বাড়তি কিছু টাকা রোজগার হয়। শীতকালে পিঠা-পায়েস খেতেও তো গুড় লাগে খেজুর গুড় পিঠাপুলি, পায়েস, ক্ষীর, মিষ্টি সবকিছু তৈরির মূল উপকরণ। তাই শহর থেকে মানুষ এসে গুড় কিনে নিয়ে যায়।
পাশাপাশি শহর কেন্দ্রিক মানুষদের ধারণা গাছ কমে যাওয়ার কারণে আর্টিফিশিয়াল ভাবে খেজুরের রসের মাধ্যমে চিনি মিশ্রণ করে গুড় তৈরি করা হয় যার কারনে আগের মতন ঘুরে স্বাদ পাওয়া যায় না।

