মশিউর মিলন, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি:
নির্বাচনে হেরে বীর মুক্তিযোদ্ধা সহ একাধিক ব্যক্তির স্বাক্ষর জাল করে নির্বাচিত ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কাছিপাড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের উপর্নিবাচনে বিজয়ী ইউপি সদস্য ইয়াকুব আলী মোল্লার বিরুদ্ধে গত ১৯সেপ্টেম্বর এ অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা গেছে, মুজিব শতবর্ষের উপহার ভুমিহীন ও গৃহহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪র্থ ধাপে বাউফল উপজেলার কাছিপাড়া ইউনিয়নের বাজারের দক্ষিন পাশে গত ২৩আগস্ট ২১টি ঘর হস্তান্তর করা হয়। বর্তমান ইউপি সদস্য মোঃ ইয়াকুব আলী মোল্লার বিরুদ্ধে অশ্রায়ণ প্রকল্পের অনিয়ম ও অবৈধ অর্থ লেনদেন এবং অনেকের কাছ থেকে ২০-৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে ঘর দেওয়ার অভিযোগ এনে মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করেছেন কাছিপাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ৫জন বাসিন্দা। অভিযোগের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (২১সেপ্টেম্বর) উপজেলার কনকদিয়া ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী জি. এম. মাহবুবকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বশির গাজী।
ঘটনার অনুসন্ধানে মঙ্গলবার (২৬সেপ্টেম্বর) ঘটনাস্থলে
অভিযোগ পত্রে স্বাক্ষর দেয়া মো. ফোরকান মোল্লার কাছে অভিযোগের বিষয়ে কথা হলে তিনি জানান, সাবেক ওয়ার্ড মেম্বার সেলিম হাওলাদারের বড় ছেলে সোহেল আমার কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়েছে, কেন নিয়েছে আমি জানি না।
মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রীস হাওলাদার ও ইদ্রিস আকন দুজনই এবিষয়ে বলেন, আমি স্বাক্ষর দিই নাই এবং অভিযোগের বিষয়ে কিছু জানি না।
অবশ্য পরাজিত প্রার্থী সাইফুল হাচান সোহেলের মামী ও ১নং ওয়ার্ড অওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মোসা. জাহানারা বলেন, অভিযোগ পত্রে আমি স্বাক্ষর দিয়েছি, সে (ইউপি সদস্য) অনিয়ম করে মুজিব শতবর্ষের ঘর গরীবদের না দিয়ে ধনীদের দিয়েছেন। অবশ্য টাকা লেদেনের বিষয়ে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি।
অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর দেয়া ওয়ার্ড কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. কবিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর দিয়েছিলাম তবে এখন আমার কোন অভিযোগ নাই।
কথা হয় মুজিব বর্ষের ঘর পেয়েছেন এমন কয়েকজনের সাথে
কোন টাকা পয়সা ছড়াই ঘর পেয়েছেন বলে জানান মাস খানেক আগেই মুজিব শতবর্ষের ঘর পাওয়া মোমেলা বেগম।
সদ্য ঘর পাওয়া ষার্টোর্ধ চান বিবি জানান, কোন টাকা পয়সা ছাড়াই ঘর পেয়েছি।
নতুন ঘর পেয়ে ভীষন খুশি সাহিদা আক্তার অভিযোগকারীদের শাস্তি দাবি করে বলেন, কোন টাকা পয়সা ছাড়া মেম্বারের সহযোগীতায় এবং প্রধানমন্ত্রীর উছিলায় ঘর পেয়েছি।
মো. আব্দুর রহমান সর্দার বলেন, কোন টাকা ছাড়াই তিনি ঘর পেয়েছেন।
আবুল সর্দার বলেন, কোন টাকা তো লাগে-ই নাই উল্টো মেম্বার বাউফল নিয়ে চা, পান খাইয়েছেন। অনেককে বাউফল যাওয়ার গাড়ী ভাড়াও দিয়েছেন।
তালিকায় নাম থাকা স্বত্তেও ঘর পায়নি এমন কয়েক জনের সাথে কথা হয়
ঘর না পাওয়া আছিয়া বেগম জানান, ইউএনও স্যার মারা যাওয়ায় আমি ঘর পাইনি। মেম্বার টাকা চেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেম্বার নিজের টাকা খরচ করে আমাদের বাউফল নিয়ে গেছে। নির্বাচনে হেরে যেয়ে সোহেল তার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা ছড়াইতেছে।
ইউএনও স্যার মারা যাওয়া ও তার স্বামী ২য় বিয়ে করায় স্বামীর স্বাক্ষর দিতে না পারায় ঘর পায়নি বলে জানান শিরিন বেগম।
লাইলি বেগম নামে অপর এক নারী জানান, ইউএনও স্যার মারা গেছেন বলে আমি ঘর পাইনি। বর্তমান মেম্বার টাকা চেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আল্লাহ স্বাক্ষী আছেন মেম্বার কখনো ৪আনা পয়সাও দাবী করেননি উল্টো বাউফল আসা যাওয়ার খরচও মাঝে মধ্যে মেম্বার দিয়েছেন।
এবিষয়ে ইউপি নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী মো. সাইফুল হাচান সোহেল বলেন, মুজিব শতবর্ষের প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর গৃহহীন বা ভূমিহীনদের পাওয়ার কথা থাকলেও তারা পান নি। নির্বাচনে হেরে বর্তমান ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষযটি তিনি অস্বীকার করেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি সদস্য ইয়াকুব আলী মোল্লা বলেন, আমার প্রতিপক্ষ নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় উদ্দেশ্য মূলক ভাবে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এই অভিযোগ করা হয়েছে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কনকদিয়া ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী জি.এম. মাহাবুব বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলমান আছে দুই/এক কার্য দিবসের ভেতর তদন্ত প্রতিবেদন ইউএনও স্যারের কাছে জমা দিবো।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বশির গাজী বলেন, একজন ইউপি সদস্য মুজিব শতবর্ষের ঘর দেয়ার ক্ষমতা রাখে না, স্বচ্ছল কোন ব্যক্তি ঘর পেয়েছেন কিনা দেখবো। ইয়াকুব মেম্বার কারো কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন কিনা সেটাও তদন্ত করে দেখতেছি।