বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
অধিক বৃষ্টি আর জলবদ্ধতার কারণে সবজির মাঠ প্লাবিত হয়ে এবছর খুলনার কৃষকদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় শত কোটি টাকা
মৌসুমে শুরু থেকেই তুলনা মূলক অধিক বৃষ্টি হয়েছে সাথে কয়েক ধাপে জলোচ্ছ্বাস ঘূর্ণিঝড় বারবার আঘাত হানার কারণে কোনক্রমেই সবজি চাষে সুবিধা করে উঠতে পারেনি এখানকার কৃষকরা।
সাথে যে পরিমাণে অর্থ ও পরিশ্রম ব্যয় করে ফসলাদি রোপন করেছিল ফসলের ঠিক অপরিপক্ক অবস্থায় চতুর্দিকে বন্যার প্রভাবে নদীর উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের কারণে ফসল তলিয়ে যায় ফলে ক্ষেতের সকল ফসল পচে নষ্ট হয়। অপরদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্তারা বলেছে গত বছরের চেয়ে এবার বৃষ্টির পরিমাণ প্রায় তিনগুণ হয়েছে । এতে খুলনার সবজি ও রবিশস্য। প্রতিবছরের কৃষকরা ঘেরের আইলে এবং বাড়ির আঙিনায় সবজি রোপণ করেলে ও এ বছর উঁচু জমিতে একটু বেশি পরিমাণ এই সবজি চাষ করেছিল তবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে তাতেও তারা সুবিধা করতে পারেনি। বর্ষায় প্রায় সব সবজি ক্ষেতেই পঁচে গেছে। এ ব্যাপারে খুলনা বিভাগীয় কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী জেলায় এবার কোটি টাকার অধিক সবজি পচে গেছে। যে কারণে ভরা মৌসুমেও সবজির মূল্য অস্বাভাবিক বেড়েছে।
এ বছর বর্ষার মৌসুম শুরুর আগের থেকেই খূলনা আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞ কর্তারা অস্বাভাবিক বৃষ্টির আগাম বার্তা দিয়েছিল ফলে এ বছর জেলায় জুন মাসে ৭২ মিলিমিটার, জুলাই মাসে ৩০৯ মিলিমিটার, আগস্ট মাসে ৫০২ মিলিমিটার এবং সেপ্টেম্বর মাসে ৩৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হলেও অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় তৃতীয় ও শেষ সপ্তাহ জুড়ে বৃষ্টির প্রভাব বলবৎ থাকবে । একই সাথে গত বছর বর্ষা মৌসুমের কথা স্মরণ করে দিয়ে তানারা জানিয়েছেন গত বছর আগস্ট মাসে ২৯৮ মিলিমিটার, সেপ্টেম্বর মাসে ১৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। পাশাপাশি কৃষি অধিদপ্তর জানিয়েছে এ বছর বৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য হারে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, দিঘলিয়া, ফুলতলা ও রূপসা উপজেলার সবজি ক্ষেতে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে।১ জুলাই থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত জেলায় ৮৪২ হেক্টর জমির ৬ হাজার ৭৪০ মেট্রিক টন সবজি ক্ষেতেই নষ্ট হয়েছে। জেলায় এবার ১২০০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ৫ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। ১০ হাজার ২৪০ জন কৃষক আবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। এবার গ্রীষ্ম মৌসুমে জেলায় পেপে, সীম, টমেটো, কচুরমুখী, ওল, বেগুন, গিমে কলমী, লালশাক, বরবটি, ঢেঁড়স, শসা, চালকুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, ধুন্দল, চিচিংঙ্গা ও ঝিঙের আবাদ হয়। জেলায় এবার কাঁচা মরিচ ও বেগুনের আবাদ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।এদিকে, মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) খুলনা নগরীর বড়বাজার, নতুন বাজার ও মিস্ত্রিপাড়া বাজারে কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৩০০ টাকা থেকে ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হয়। বুধবার (১৬ অক্টোবর) ভ্যানে বিক্রেতারা ২৬০ টাকা দরে বিক্রি করেছে। নগরীর বাজারে আলু ৬০ টাকা, পেঁয়াজ ১১৫ টাকা, ঝিঙে ৭০ টাকা, বেগুন ১২০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, ঢেঁড়শ ৮০ টাকা, লালশাক ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। প্রতি কেজি বরবটির দাম ছিল ১২০ টাকা। অথচ আগস্ট মাসের শেষের দিকে বরবটি ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।জেলার মনিরামপুর, কেশবপুর ও নওয়াপাড়া থেকে সবজি খুলনার বাজারে সরবরাহ করা হয়। স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তিন হাত বদলের কারণে সবজির দাম বাড়ে। তাছাড়া অতিবৃষ্টিতে ক্ষেতেই সবজি মারা যাওয়ায় বাজারের সরবরাহ কমেছে। তারা মনে করছেন, কার্তিক মাসের মাঝামাঝি সময়ে মূলা, সীম ও ফুলকপি বাজারে চলে আসলে সবজির দাম কমতে পারে।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খুলনা উপপরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, জেলায় অতিবৃষ্টিতে প্রায় শত কোটি টাকার সবজির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে । কৃষক ক্ষতি কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছে। উঁচু জমিতে লালশাক, বেগুন ও ফুলকপির আবাদ শুরু করেছে। বাজারে আসতে কিছুটা সময় লাগবে।
তবে অন্যান্য এ সময় ফুলকপি কিছু কিছু শীতের ফসল বাজারে লক্ষ্য করা যায় দামও কিছুটা নাগালের মধ্যে থাকে।