মোঃ আশরাফুল ইসলাম.
আজ পবিত্র ঈদ উল আযহা; যা কোরবানির ঈদ নামেই পরিচিত। মুসলমানদের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করবেন সামর্থ্যবান মুসলমানরা। মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ:)এর ত্যাগের স্মৃতিবিজড়িত এই ঈদ। মূলত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রয়োজনে নিজের প্রিয় বস্তুকে কোরবানি দেয়ার প্রস্তুতির শিক্ষাই এ ঈদের আদর্শ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দ্বিধাহীনভাবে তার কাছে আত্মসমর্পণ এবং তার নির্দেশ শর্তহীনভাবে মেনে নেয়াই হলো ঈদুল আজহার প্রকৃত শিক্ষা। আল্লাহর রাহে পশু কোরবানি করে সেই ত্যাগের কথাকেই স্মরণ করা হয়।
ঈদুল আজহার সাথে পবিত্র হজ্জ্বের সম্পর্ক রয়েছে। শনিবার পবিত্র মক্কা নগরীর অদূরে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়ার মধ্য দিয়ে পবিত্র হজ পালিত হয়েছে।১৫ লক্ষ মুসলমানের অংশগ্রহণে এবারের হজ পালিত হয়। রবিবার সৌদি আরবে পবিত্র ঈদ উল আযহা উদযাপিত হয়েছে। সকালে মুজদালিফা থেকে ফিরে হাজীরা মিনায় অবস্থান করে পশু কোরবানিসহ হজের অন্যান্য কার্যাদি সম্পাদন করেন।
মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে ঈদ উল আযহা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, আনন্দ ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়।
ঈদ উল আযহা হজরত ই্ব্রাহিম (আ:) ও তার পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ:) এর সাথে সম্পর্কিত। হযরত ইব্রাহিম (আ:) স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে পুত্র ইসমাইলকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করতে গিয়েছিলেন। আসলে আল্লাহর পক্ষ থেকে এ আদেশ ছিল হজরত ইবরাহিম (আ:)এর জন্য পরীক্ষা। তিনি পুত্রকে আল্লাহর নির্দেশে জবাই করার সব প্রস্তুতি নিয়ে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। আল্লাহর নির্দেশে ইসমাঈলের পরিবর্তে কোরবানি হয় দুম্বা। সেই ঐতিহাসিক ঘটনা স্মরণে হজরত ইবরাহিম (আ:) এর সুন্নত হিসেবে পশু জবাইয়ের মধ্য দিয়ে কোরবানির বিধান এসেছে ইসলামী শরিয়তে। সামর্থ্যবানদের জন্য পশু কোরবানি করা ওয়াজিব। আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করার পর আনন্দ থেকেই উদযাপিত হয় ঈদ উল আযহা বা কোরবানির ঈদ। জিলহজ্জ্ব মাসের ১০ তারিখ। এ ছাড়াও ১১ ও ১২ তারিখ কোরবানি করা যায়।
ইসলামে কোরবানি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। পবিত্র কুরআনের সূরা কাউসারে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘অতএব আপনার পালন কর্তার উদ্দেশে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন।’ সূরা হজ্জ্বে বলা হয়েছে ‘কোরবানি করা পশু মানুষের জন্য কল্যাণের নির্দেশনা।’ কোরবানির মূল উদ্দেশ্যই তাকওয়া বা খোদাভীতি। এ প্রসঙ্গে কুরআনে বলা হয়েছে, ‘এগুলোর গোশত আমার কাছে পৌঁছায় না। কিন্তু তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে যায়।’
রাসূল (সা:) বলেছেন, ‘ঈদুল আজহার দিন কোরবানির চেয়ে আর কোনো কাজ আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয় নয়।’ অন্যত্র বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানি দিলো না সে যেন আমার ঈদগাহে না যায়।’
বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানা যায়, পৃথিবীতে মানবজাতির সূচনা থেকেই কোরবানির প্রচলন। হজরত আদম(আ:)এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিল সর্বপ্রথম কোরবানি দিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে কুরআনে এসেছে, ‘আপনি তাদের আদমের দুই পুত্রের বাস্তব অবস্থা পাঠ করে শোনান। যখন তারা উভয়ে কিছু কোরবানি করেছিল। তখন তাদের একজনের কোরবানি গৃহীত হয়েছিল এবং অপরজনেরটি গৃহীত হয়নি’ (সূরা মায়েদা-২৭)।
আল্লাহর সন্তুষ্টিই কোরবানির মূল উদ্দেশ্য। তাঁর পথে প্রয়োজনে জীবন ও সবচেয়ে প্রিয় বস্তু উৎসর্গের জন্য তৈরি হওয়ার শিক্ষাই এতে নিহিত। এ জন্যই কোরবানির পশু জবাইয়ের সময় বলা হয়- ‘ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহ্ইয়াইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।’ অর্থাৎ- নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কোরবানি আমার জীবন, আমার মৃত্যু সবই আল্লাহর জন্য, যিনি নিখিল বিশ্বের প্রতিপালক।’
গরু, মহিষ, উট, ভেড়া, ছাগল, দুম্বা থেকে যেকোনো একটি প্রাণী দিয়ে কোরবানি করা যায়। কোরবানির পশুর গোশত তিন ভাগ করে একভাগ আত্মীয়স্বজনকে, আরেক ভাগ গরিবদের মধ্যে বণ্টন এবং বাকি এক ভাগ নিজেরা খাওয়া সুন্নত। ঈদ উল আযহার দুই রাকাত নামাজ জামাতে আদায় করা ওয়াজিব।
সারা দেশের বিভাগ, জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ এবং সরকারি সংস্থাগুলোর প্রধানরা জাতীয় কর্মসূচির আলোকে নিজ নিজ কর্মসূচি প্রণয়ন করে ঈদ উদযাপন করবেন।
এ ছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও গণমাধ্যমগুলো যথাযোগ্য গুরুত্বসহকারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার ও সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করছে। ঈদ উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলোতে যথাযথভাবে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করা হবে। এ উপলক্ষে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
কোরবানিকৃত পশুর রক্ত বা বর্জ্য পদার্থের কারণে যাতে পরিবেশ দুর্গন্ধময় না হয় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ দেশের সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। মুসলমানদের ধর্মীয় এ উৎসব উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন