মুফতি খোন্দকার আমিনুল ইসলাম আবদুল্লাহ
আজ থেকে বাংলাদেশে ১ম রামাদান একটা যুগ ছিল, নবিজির জামার মত জামা পরতে, নবিজির খাবারের মত খাবার খেতে, নবিজির আমলের মত আমল করতে, নবিজির পায়ের ছাপে নিজের পা রাখতে ব্যাকুল ছিলেন সকলে। নবিজির আদেশ নিষেধ বা সুন্নত পালনের জন্য কতটা দিওয়ানা ছিলেন তারপর বহু যুগ পেরোলো।
এখন নবিজির আদেশ, নিষেধ, সুন্নতের কথা কাউকে বলতে গেলে, নবিজির দোহাই দিয়ে যদি আমাদের বলা হয়, এই কাজটা নবিজি দেখলে কষ্ট পেতেন, আমাদের কিচ্ছু যায় আসে না জানেন!
আমরা এত নিকৃষ্ট হয়ে গেছি! ভাবতেও কষ্ট লাগেনা, তাইনা?
যার হাতের হাউজে কাউসারের পানি চাই, তার সম্মান রক্ষার কোনো মাথাব্যথা আমাদের নেই!
আল্লাহুম্মাগফিরলি 💔💔
✅১. রমাদান সংক্রান্ত ফানি ভিডিও, মিমস থেকে দূরে থাকুন। হালাল হারাম এর প্রশ্ন না, বরং এগুলা সময় নষ্ট। রামাদান এর মেজাজের সাথে একেবারেই যায় না। এ মাসটা আমলের মাস। মাসটা গুরত্ব না হয় আমরা কম বুঝি, কম আমল করি কিন্তু তাই বলে এমন কিছু না করি যা অন্যের সময় বরবাদ এর সহায়ক।
সোশ্যাল মিডিয়ায় যদি কিছু করতেই হয় সেটা ইসলামিক কিছু হোক, মিমস ফানি ভিডিও টাইপ কিছু করার প্রয়োজনীয়তা দেখি না। এটলিস্ট রামাদান মাসটাতে এই অভ্যাস টা করুন।
আমরা রামাদান মাসের গুরত্ব বুঝি না, আমল ও তেমন করি না। তাই এটলিস্ট এমন কিছু না করি যা অন্যের সময় বরবাদে সহায়ক হয়।
অতিরিক্ত জরুরত না থাকলে সোশ্যাল মিডিয়া অফ রাখুন। অনেক ননমাহরামের চেহারা, কিংবা মিউজিক ভিডিওর মত হারাম জিনিস এর গুনাহ থেকে বেচে যাবেন।
২. রামাদান আমলের মাস৷ এ মাসে কোর্স কেন্দ্রিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ভেবেচিন্তে নিন। বরং সারাবছর যে আমল শিখেছেন সে আমল রামাদানে অনেক বেশি পরিমাণে করুন। ফরজ আমল তারপর পরিবারের দায়িত্ব পুরো করুন, তারপর প্রচুর নফল আমল করুন।
দূঃখজনক ভাবে রামাদান অনেকের কাছেই দুনিয়াকেন্দ্রিক ব্যবসার মাস। আপনি এবং আপনার পরিবার বরং আখিরাতের ফিকির করুন ইন শা আল্লাহ।
✅শেষ করছি সালাফদের কিছু আমলের বর্ণনা দিয়ে
“তাবিয়িন এবং তাবে-তাবিয়িনগণও কুরআনুল কারিমের তিলাওয়াত দ্বারা নিজেদের অন্তরে ইমানেরর স্বাদ ও সজীবতা ধরে রাখতেন। উনাদের অধিকাংশ রজনী সালাতে দাঁড়ানো অবস্থায় অতিক্রান্ত হত। আর সে সলাতে থাকত লম্বা লম্বা তিলাওয়াতে সমাহার। যখন রমাদ্বান মাস এসে যেত, তখন উনাদের এই আমল বহুগুণে বেড়ে যেত।
আবদুর রাজ্জাক (রহ) বলেন, যখন রমাদ্বান মাস উপস্থিত হত, তখন ইমাম সুফিয়ান সাওরি (রহ) সকল কথাবার্তা (দুনিয়াবী) ছেড়ে দিয়ে কুরআন কারিম তিলাওয়াতে মনোনিবেশ করতেন। (লাতায়েফুল মাআরেফ: ২৪৫)
ইমাম ইবনু রজব হাম্বলী (রহ) বর্ণনা করেন, “কোন কোন সালাফ রমাদ্বান মাসে তিনদিনে কুরআনুল কারীম খতম করতেন। কোন কোন সালাফ সাতদিনে কুরআন পূর্ণ খতম করতেন। তাদের মধ্যে কাতাদাহ (রহ) উল্লেখযোগ্য। কোন কোন সালাফ দশদিনে পুরা কুরআন খতম করতেন। তাদের মধ্যে আবু দুজানা আল আত্তারি (রহ) উল্লেখযোগ্য। (লাতায়েফুল মাআরেফ: ২৪৫)
রমাদ্বান মাসে কালামুল্লাহ তিলাওয়াতের স্বাদ ও আগ্রহ আজ থেকে সত্তর-আশি বছর আগেও পাওয়া যেত। লোকেরা সাহরীর পর সলাত আদায় করেই কুরআন মাজীদ খুলে পড়তে বসে যেত। আর যতটুকু সম্ভব তিলাওয়াত করে যেত। রমাদ্বানের দিনগুলোতে কুরআনের প্রতি আবাল, বৃদ্ধ, বণিতা সবার আগ্রহ একরকমই ছিল। আমাদের বর্তমান সমাজেও এই বিষয়টি বড়ই শানদার ও মুহব্বতের সাথে জারি ছিল। কিন্তু আফসোস! নানারকমের মিডিয়ার আগ্রাসন আমাদের ঘরের শিশু, মা-বোন ও পুরুষদের কাছ থেকে এই আগ্রহ ও উদ্দীপনাকে ছিনিয়ে নিয়েছে। এখন তারা ঐ সকল ফাঁদে পড়ে বেশরম বেহায়া এবং অহেতুক জিনিসে মেতে থেকে নিজেদের দ্বীন ও ইমানকে হারিয়ে ফেলছে… (সালাফদের সিয়াম বই থেকে)
✅ আল্লাহ আমাদের বুঝার তাওফিক দিক, আমীন।।
লেখক তরুণ আলোচক ও গবেষক বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব