বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো:
নানান উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হলো ১৪৩ তম খুলনা দিবস। দিবসটি উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি ও আমরা খুলনা বাসীর পক্ষ থেকে এসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
প্রত্যুষে কবুতর বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ফিরোজ সরকার। পরে বিভিন্ন বক্তারা দিবস টি উপলক্ষে দিনব্যাপী কর্মসূচি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খুলনার সামগ্রিক উন্নয়ন দলমত নির্বিশেষ ঐক্যবদ্ধ ভাবে একসাথে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন, এবং একই সাথে নব প্রজন্মের মধ্য সংক্ষিপ্তভাবে খুলনা জেলার ইতিহাস তুলে ধরে বক্তারা বলেন ৪ হাজার ৩ শত ৯৪ দশমিক ৪৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ৩৫ লাখ ৪৫ হাজার জনগণের বসতি নিয়ে আমাদের এই দক্ষিণ বাংলার খুলনা জেলা গঠিত। জেলাটির একেবারেই অন্তর্গত বাগেরহাটে রয়েছে হযরত পীর খাজা খানজাহান আলী (র,) স্মৃতি বিজড়িত ভৈরব -রুপসা নদের কোল ঘেঁষে বয়ে চলা বিধৌত খুলনার ইতিহাস ঐতিহ্য গৌরব মন্ডিত খুলনার নামকরণের উৎপত্তি হয়েছিল তদন্তণ ধনপতি সওদাগরের স্ত্রী খুলনার নামে নির্মিত খুলনেশ্বরী মন্দির থেকে খুলনা নামের উৎপত্তি হয়।
আর আজও আমরা সেই ১৪৩ বছরের পূর্বের ইতিহাসকে সাক্ষী রেখে খুলনাকে বুকে ধারণ করে নিয়ে চলছি আর সেই থেকে নামকরণ করে জন্ম হয়ে পদচারনায় ইতিহাসের নানান কাহিনী বুকে ধারণ করে পথ চলতে শুরু করে খুলনা।
তবে এরই মধ্যে দেশজুড়ে অনেক ঘটনা ঘটেছে ১৯৫২ মহান বাংলা ভাষার জন্য ভাষা আন্দোলনে অসংখ্য শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলা ভাষা পুনরুদ্ধার হয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লক্ষ শহীদ ও তিন লক্ষ বিনঙ্গনার সম্ভ্রম হানির বিনিময়ে বাংলা ভূখণ্ডের উৎপত্তি এবং তারই অংশ খুলনা। এবং এই খুলনার মাটিতে অসংখ্য জ্ঞানীগুণী কবি সাহিত্যিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জন্ম হয়েছে। তবে খুলনা এক সময় অবহেলিতভাবে পড়ে থাকলেও এখানকার অসংখ্য অরাজনৈতিক সংগঠনের একান্ত প্রচেষ্টার কারণে একের পর এক ধারাবাহিকতার সাথে খুলনার উন্নয়ন হয়েছে। অপরদিকে ব্রিটিশের হাত ধরে গড়ে উঠেছে আইন আদালত, মহাকুমা, রেজিস্ট্রি অফিস, পৌরসভা, ডাকবাংলা , রেলস্টেশন, এখনো আছে বিদ্যমান লঞ্চঘাট বি আই ডব্লিউ টি এ একটু দূরেই অবস্থিত দেশের অন্যতম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন পাশাপাশি রয়েছে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি ফুলতলার দক্ষিণ ডিহিতে, এবং রাজনীতির অন্যতম প্রাণপুরুষ রূপসা নদীর তীরে নগরীর লবণ চোড়ায় খানএ সবুরের বাড়ি এবং খানএ সবুরের নামে আজও একটি সড়ক খ্যাতো রয়েছে। তাছাড়া দেশ স্বাধীনের পূর্বের থেকেই খুলনা জুড়ে ছিল অসংখ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান খুলনা রুপসা নদীর কোল ঘেঁষে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ছিল দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি যেখানে হাজার হাজার শ্রমিকদের আনাগোনায় এবং কর্মমুখরতায় ছিল মুখরিত তবে আজ সেটা মাত্র শুধুই কালের সাক্ষী। অপরদিকে ছিল হার্ডবোর্ড মিল কটন মিল নিউজপ্রিন্ট সহ সরকারি বেসরকারি বেশ কিছু পাটকল খুলনার স্টিমার ঘাট থেকে চলত স্টিমার গাজীরকেট শহীদ বিলায়েত এবং অসংখ্য রূটের বড় বড় লঞ্চ।
আর এ সকল শিল্প গুলো রাঘব বোয়ালদের কালো ছোবলে এখন মাত্র শুধুই কালের সাক্ষী হয়ে বর্তমান নতুন প্রজন্মের কাছে স্মৃতি পাতায় ইতিহাস ।
রূপসা নদী দিয়ে চলতো পাল তোলা নৌকা সুন্দরবন থেকে গোলপাতা গরান ও সুন্দরী কাঠ বোঝাই করে নিয়ে আসতো গহনা নৌকা আজকাল আর দেখা যায় না কোথাও চোখে পড়ে না সেই স্মৃতি।
বেজে ওঠেনা কোন মিলের সাইরেন ফলে খুলনার অধিকাংশ শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে এখন ভঙ্গুর দশায়। তবে সকল স্মৃতির সব কিছু বন্ধ হলেও নতুন আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়েছে খুলনায়। গড়ে উঠেছে অসংখ্য বিনোদন কেন্দ্র যেমন গিলাতলা চিড়িয়াখানা শিশু পার্ক আধুনিক রেলস্টেশন আন্তজেলা বাস টার্মিনাল চিকিৎসার জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শেখ শহীদ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল বিশ্ববিদ্যালয় কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সহ আধুনিকতম অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন হয়েছে সড়ক মহাসড়ক এক সময়কার অন্ধকার খুলনা এখন আধুনিক বৈদ্যুতিক আলোয় ঝলমল চলমান রয়েছে ক্যান্সার হসপিটাল, ডেন্টাল হসপিটাল সহ আরো অনেক উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান যেখানে খুলনা জেলার অসংখ্য শিক্ষিত বেকার যুবকদের হবে কর্মসংস্থানের বন্দোবস্ত দূর হবে বেকারত্বের অভিশাপ। আর এসব কিছুই খুলনা জেলার সাধারণ জনগণের অন্যতম সংগঠন বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির অদম্য অবদান। তাছাড়া আরো বেশ কিছু উন্নয়ন কর্মকাণ্ড রয়েছে চলমান এবং খুলনাকে সর্বোচ্চ উন্নয়নের শীর্ষের অবকাঠামর রূপ দান করতে সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে সেই প্রত্যাশা প্রকাশ করেছেন খুলনা বাঁশি।