জাহাঙ্গীর আলম, ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি:
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের বিভিন্ন সড়কের ওপর চলছে অবাধে মৌসুমি ফসল ভুট্টা শুকানোসহ অন্যান্য কৃষি কাজ। এর ফলে একদিকে যেমন রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি বৃদ্ধি পেয়েছে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কা। জমি থেকে মৌসুমী ফসল ভুট্টা কেটে এনে স্তুপ করে রাখা হচ্ছে সড়কের পাশে। পরে সেই মৌসুমী ফসল সড়কের একটা জায়গা দখলে নিয়ে মাড়াই মেশিন বসিয়ে দিব্বি চলছে মাড়াইয়ের কাজ।
আর এ অবস্থায় সড়কের অর্ধেক অংশে দখল করে ভুট্টা শুকানো ছাড়াও ফসলের অবশিষ্ট অংশ সড়কের ওপরেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়ে রোদে শুকানো হচ্ছে।
এতে সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। যানবাহনের মধ্যে প্রতিনিয়ত অটোভ্যান,
সিএনজি, মোটরবাইক, রিকশা-ভ্যান এবং ইজিবাইক বেশি চোখে পড়ে। এসব গাড়ি চালকেরা সর্বক্ষণ দুর্ঘটনার আতঙ্কের মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে।
শুধু কি তাই, কোনো কোনো পাকা সড়কে ভুট্টা, লাল শাকের বীজ, ধান মৌসুমে ধান মাড়াইয়ের কাজের চিত্র চোখে পড়ে। আবার কেহ কেহ সড়কের ওপর গরুর গোবর, ছাগলের নাদা শুকানোর কাজও চালিয়ে যাচ্ছে দেদার্ছে।
পাকা সড়কে যানবাহন চলাচলে চরম অসুবিধা সৃষ্টি করে এবং দুর্ঘটনার যথেষ্ট আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও এই বেআইনি কাজ জেনে বুঝে তারা করে যাচ্ছে।পাকা সড়কে ফসল শুকানসহ বিভিন্ন কাজ করতে আসা (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) এক ব্যক্তি এ প্রতিবেদককে বলেন, এই মৌসুমে বাড়িতে কাঁচা মাটিতে ভুট্টা শুকাতে বেশি সময় লাগে। তাছাড়া যেকোনো সময় বৃষ্টি বাদল, ঝড়ে ক্ষতিও হতে পারে। তাই আমরা নিরাপদ এবং দ্রুত শুকানোর স্বার্থেই পাকা সড়ক
বেছে নিয়েছি।
আর এ বেআইনি কাজ সবচাইতে বেশি চোখে পড়ে কোটচাঁদপুর উপজেলার দোড়া ইউনিয়নের সুয়াদি গ্রামে।
এ ব্যাপারে সুয়াদি গ্রামের মেম্বর জুলহক কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি কিছু বলতে পারবো না, কারন সবাই আমার গ্রামের। দুর্ঘটনা হলে দায় কে নিবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কিছু জানিনা।
সাফদারপুর পুলিশ ক্যাম্পের নিকটবর্তী হলেও যেন দেখার কেহ নাই। এরা নিয়ম-কানুন তোয়াক্কা না করে সড়ক বন্ধ করে সড়কের ওপর ভুট্টা, লাল শাকের ডাটা, গরুর গোবর, ছাগলের নাদা শুকাচ্ছে স্থানীয় কৃষক-কৃষাণীরা। তিনি আরও বলেন, সড়কগুলো দেখলে মনে হয় চলাচলের জন্য সড়ক নয় এ যেন ভুট্টা শুকানো ব্যক্তিদের পৈত্রিক সম্পত্তি।
অপরদিকে সিএনজি চালক মোঃ শরিফুল বলেন, এসব ফসল শুকানোর জন্য একদিন আগে থেকেই সড়কের দুই ধারে বড় বড় করে ফসলের পালা দিয়ে রাস্তা দখল করে রাখা হয়। এতে রাস্তার প্রশস্ততা কমে সরু হয়ে যাওয়ায় পাশাপাশি দুটি গাড়ি চলাচলের কোনো জায়গা থাকে না।
সরেজমিনে কোটচাঁদপুর উপজেলার দোড়া ইউনিয়নের সুয়াদী গ্রাম সহ বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, রাস্তায় যানবাহনগুলো দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে চলছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন কৃষক-কৃষাণীসহ কৃষক পরিবারের ছোট-ছোট শিশু বাচ্চারা। আবার রাস্তা সংকীর্ণ হওয়ার কারণে অনেক স্থানে যানজটেরও সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও অটোভ্যান ও রিকশা দুর্ঘটনা নিত্যদিনের স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
এসব দুর্ঘটনায় অনেকেরই হাত-পা কেটে ও ভেঙে গেছে বলে জানান তারা। বেআইনি ভাবে সড়ক দখল করে সবচাইতে বেশি ভুট্টা শুকাতে দেখা যায় উপজেলার সুয়াদী গ্রামে। অথচ এক কিলোমিটার দুরেই সাফদারপুর পুলিশ ফাড়ি।
এ ব্যাপারে কোটচাঁদপুরের সাফদারপুর পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ মোঃ বিল্লাল হোসেনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। একজন পথচারী বলেন, রাস্তার ওপর মৌসুমি ফসল শুকানো অবৈধ। যার ফলে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে মারাও যায় মানুষ। তবে তদন্ত করে ব্যাবস্থা নেওয়া জরুরী বলে মনে করেন তিনি।