জিয়া চৌধুরী (খুলনা প্রতিনিধি)
খুলনার দৌলতপুরস্থ দেয়ানা উত্তরপাড়ার আলোচিত ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির হত্যার ১২ দিন পর থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। স্বামীর মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্তের জন্য নিজের ছোট মেয়ে সুমাইয়া বিনতে কবির (১৬) সহ অজ্ঞাত ২/৩ জনের নামে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন মৃত শেখ হুমায়ুন কবিরের স্ত্রী ফারজানা আফরিন (৪১)।
সোমবার (১৫ জুলাই) সকাল ১০ টার দিকে দৌলতপুর থানায় হাজির হয়ে তিনি এই মামলা করেন। বাবাকে হত্যার অভিযোগে মেয়ের বিরুদ্ধে মায়ের মামলায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বাবাকে হত্যার অভিযোগে (১২ জুলাই ২০২৪) থেকে সুমাইয়া (১৬) ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে থাকলে ও গতকাল তাকে আদালতের কাছে সর্পোদ করা হয়েছে।
আদালত আসামীর ১৬৪ ধারা জবানবন্দী গ্রহন করছে। জবানবন্দীতে আসামী সুমাইয়া বিনতে কবির দ্বায় স্বীকার করেছে। এজাহারে বাদী জানান (৩ জুলাই ২০২৪) সন্ধ্যা আনুমানিক ৭ টার দিকে বাদী ফারজানা আফরিন ও তার মেঝো মেয়ে হুমাইরা বিনতে কবির (১৯) বাহির থেকে হেটে এসে হাত মুখ ধুয়ে প্লাস্টিকের জগে রাখা পানি পান করার কিছু ক্ষনের মধ্য বাদীর প্রচুর ঘুম আসে এবং নিজের শয়ন কক্ষে গিয়ে শুয়ে পড়েন। বাদীর স্বামী হুমায়ুন কবির মসজিদ থেকে মাগরিবের নামাজ পড়ে বাসায় এসে ফ্লোরে রাখা খাবার নিজে নিয়ে খেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। ওই দিন রাত আনুমানিক ১০ টার দিকে বাদীর ছোট মেয়ে আসামী সুমাইয়া বিনতে কবির তার ভয়ে ঘুম আসছে না বলে তার মাকে ডেকে তার শয়ন কক্ষে ডেকে নিয়ে যায় এবং সেখানে আসামী সুমাইয়া ও তার মা (বাদী) ঘুমিয়ে পড়েন। মেঝো মেয়ে হুমাইরা বিনতে কবির তার নিজ শয়ন কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন।
(৪ জুলাই ২০২৪) সকাল আনুমানিক ৭ টার দিকে বাদীর ঘুম ভেঙ্গে তার স্বামীকে অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমাতে দেখে তাকে ডাকাডাকি করে কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে তিনি ও তার মেয়ে বুঝতে পারেন তার স্বামী আর বেঁচে নাই। ওই সময় তিনি তার স্বামীর বাম হাতের বাহুর উপরের অংশে ২ টা ছিদ্র ও বাম হাতের আঙ্গুলে রক্ত দেখতে পান। ওই সময় উপস্থিত সকলে ধারণা করে ছিলো তার স্বামী হুমায়ুন কবির স্ট্রোক জনিত কারণে মারা গেছে, আবার অনেকেই বলে ছিলো সাপের কামড়ে মারা গেছে। সেই কারণে পুলিশ কে না জানিয়ে তারা দাফন কার্য সম্পন্ন করে।
বাদী জানান আমার স্বামীর মৃত্যুর কয়েক দিন পর আমার ছোট মেয়ে আসামী সুমাইয়া বিনতে কবির তাকে ও তার মেঝো মেয়ে হুমাইরা বিনতে কবির কে স্বেচ্ছায় জানিয়েছে সে রাতের খাবার ও খাবারের পানির মধ্য ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে ছিলো এবং রাতে বালিশ চাপা দিয়ে তার বাবার মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। তখন বাদী ও তার মেঝো মেয়ে আসামী সুমাইয়া বিনতে কবিরের কাছে তার বাবাকে মেরে ফেলার কারণ জানতে চাইলে সে জানায় তার বাবা তাকে শাসন করত বিধায় রাগের বশে বাবাকে মেরে ফেলেছে। সুমাইয়া বিনতে কবির আরো জানায় কেউ যাতে ঘুম থেকে জেগে না ওঠে সেই জন্য আসামী সুমাইয়া বিনতে কবির তার মায়ের খাবার পানি ও তার মেঝ বোন হুমাইরা বিনতে কবির কে কোমল পানীয় (ডিংকো) এর মধ্য ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে খাইয়ে দেয় এবং আসামী তার বাবাকে সুকৌশলে মেরে ফেলার জন্য তার মাকে নিজের (আসামীর) শয়ন কক্ষে নিয়ে যায়।
বাদী জানান (৩ জুলাই ২০২৪) আনুমানিক রাত ১০ টা থেকে (৪ জুলাই ২০২৪) সকাল আনুমানিক ৭ টার মধ্য যে কোন সময় সুমাইয়া বিনতে কবির সহ অজ্ঞাতনামা আরো ২/৩ জন আসামী মিলে তার স্বামীকে রাতের খাবারের মধ্য ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ বদিউর রহমান জানান দেয়ানা উত্তরপাড়ায় (৪ জুলাই ২০২৪) মোঃ হুমায়ন কবিরের মৃত হয়। মৃত হুমায়ুনের স্ত্রী বাদী হয়ে ১৫ জুলাই তার ছোট মেয়ে সুমাইয়া বিনতে কবির সহ অজ্ঞাত ২/৩ জনের নামে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। গ্রেফতারকৃত আসামী সুমাইয়া বিনতে কবির কে আদালতের কাছে সপোর্দ করা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল আদালত গ্রেফতারকৃত আসামীর ১৬৪ ধারা জবানবন্দী গ্রহন করে। জবানবন্দিতে সে স্বীকারোক্তি দিয়েছে । লাশের ময়না তদন্তের জন্য, কবর থেকে হুমায়ুনের মরদেহ উত্তোলনের জন্য আদালতের কাছে আবেদন করা হবে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।